দিন যতই যাচ্ছে, চট্টগ্রামে ততই ডেঙ্গুর রূপ আগ্রাসী হয়ে উঠছে। এ পর্যন্ত যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার এক তৃতীয়াংশের বেশি অংশই গত পাঁচ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন। হিসেবে গড়ে প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। যা নিয়ে অনেকটাই উদ্বিগ্ন খোদ স্বাস্থ্য বিভাগও। এমন পরিস্থিতি এডিস মশা নিধনের কার্যকারিতা আরও জোরালো করার দাবি সংশ্লিষ্টদের। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গু আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাগণ।
এদিকে, এ বছরের ডেঙ্গুর পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে মশক নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়রকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। উদ্বেগের কথা জানিয়ে পাশাপাশি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককেও (সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ) ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টদের পৃথক পৃথকভাবে এসব চিঠি পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২২ জুন ঢাকঢোল পিটিয়ে মশক নিধন কর্মসূচি ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ উদ্বোধন করে চসিক। তাতে মশক নিধনের ওষুধ ছিটানোসহ নানা কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা জানানো হয়। তবে উদ্বোধনের দুই সপ্তাহ পার হলেও এ কার্যক্রমের বাস্তবে দৃশ্যমান নয় বলে অভিযোগ নগরের বেশিরভাগ বাসিন্দাদের। বরং উদ্বোধনের পর থেকেই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও মুখরোচক নানা গুঞ্জন নগরবাসীর মুখে।
এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেকটাই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খোদ স্বাস্থ্য প্রশাসন। তাই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চসিক ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
চসিক মেয়রকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বর্ষা মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কর্পোরেশন এলাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগী দ্রুত বাড়ছে। যা গত বছরের তুলনায় আশঙ্কাজনক। গত ৫ দিনে চট্টগ্রামে ১৯৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মশক নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিস্থিতি এমন থাকলে সামনে আরও ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। এডিস মশা নিধন না করা হলে ডেঙ্গু আরও আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। তাই চসিককে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি। এর আগেও মেয়রসহ আরও কয়েকটি দপ্তরে আমরা বিষয়টি অবহিত করেছিলাম।
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ২৬ জন : গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে আরও ২৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে ১২ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১২ জন এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ২ জন রোগী ভর্তি হন। এ নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৮৭ জনে। এছাড়া শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন।
পূর্বকোণ/এসি