সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সার্ভার হ্যাক করে ১৬৭টি জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করার ঘটনা একেবারেই সাজানো। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নিজেই জন্ম নিবন্ধনগুলো সম্পন্ন করে পরে সার্ভার হ্যাকের ঘটনা সাজিয়ে রেহাই পেতে চেয়েছেন। ফলে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখা থেকে সলিমপুর ইউপি’র নিবন্ধক ও নিবন্ধক সহকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। শোকজের কথা স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সার্ভারে মোট ৩৭১টি জন্ম নিবন্ধনের তথ্য পাওয়া যায়। এরমধ্যে ইউপি সচিবের কাছে ২০৪টি নিবন্ধনের তথ্য সংরক্ষণ করা ছিলো। ফলে অবশিষ্ট ১৬৭টি জন্ম নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এগুলো সার্ভার হ্যাক করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করা হয়েছে বলে দাবি করে সেসময় সলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সালাউদ্দিন আজিজ সীতাকুণ্ড থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। সার্ভার হ্যাক হয়েছে বলে জানানো হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সাংবাদিকদেরও। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশ হয়। এরপর ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার শাখা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্তে জানতে পারেন এখানে কোন সার্ভার হ্যাকের ঘটনা ঘটেনি। ইউপি সংশ্লিষ্ট একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল থেকে এসব জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। ফলে গত ১১ জুন স্থানীয় সরকার শাখার সহকারী কমিশনার ডিপ্লোমেসি চাকমা সাক্ষরিত পত্রে সলিমপুর ইউপির নিবন্ধক ও নিবন্ধক সহকারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করে বলা হয় তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে এখানে কোন সার্ভার হ্যাকের ঘটনা ঘটেনি।
এতে বিডিআরআইএস এর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় ইউপি সচিব (নিবন্ধক সহকারী) আল-আমিন জড়িত থাকায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। এমতাবস্থায় তার বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না জানতে ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সোমবার) এ বিষয়ে কোন জবাব দেননি সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সলিমপুর ইউপির নিবন্ধক সহকারীর দায়িত্বে থাকা ইউপি সচিব আল-আমিন পূর্বকোণকে বলেন, গতবছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউপিতে কাজের প্রচুর চাপ ছিলো। সেসময় আমার স্ত্রীও গুরুতর অসুস্থ। তাই খুব কষ্ট করে দিনে আমি অফিস করে রাতে হাসপাতালে থেকেছি। আমার অসহায় অবস্থা দেখে ইউপি চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন আজিজ আমাকে পরামর্শ দিয়ে একজন বিশ্বস্ত উদ্যোক্তা মো. সিফাতকে পাসওয়ার্ড দিতে বলেন, যাতে তার মাধ্যমে কিছু কাজ করা যায়। প্রথমে দিতে না চাইলেও পরে তারা বারবার তাকে বিশ্বস্ত বলায় আমি পাসওয়ার্ড দিই। প্রথমে বুঝতে না পারলেও এক পর্যায়ে আমার কাছে থাকা তথ্যের সাথে সার্ভারের তথ্য মিল না পাওয়ায় আমি বিষয়টি চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারকে জানাই। এখন আমার কাছে কর্তৃপক্ষ জবাব চেয়েছেন। আমি সব লিখিত রেডি করেছি। শীঘ্রই জবাব দেব।
সলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ পূর্বকোণকে বলেন, আসলে আমরা ঐ উদ্যোক্তা সিফাতকে খুব বিশ্বাস করেছিলাম। সে মার্চ মাসে বিদেশ চলে যাবার কথা। এজন্যই হয়ত ভেবেছিলো তার এসব কুকর্ম প্রকাশ পাবে না। তাই এসব কাজ করে ফেলেছিলো। এখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিতে বলবেন তাই হবে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পূর্বকোণকে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে যে দোষী প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্বকোণ/এসি