চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছয় মাসেও মেলেনি মন্ত্রণালয়ের খসড়া মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুন, ২০২৩ | ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বহুল প্রত্যাশিত বে-টার্মিনালের মূল অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ চলমান রয়েছে। সে ডিটেইল ড্রইং ডিজাইন তৈরি করা হচ্ছে বে-টার্মিনালের মাস্টার প্ল্যানের উপর ভিত্তি করে। তবে সেই মাস্টার প্ল্যানই এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি। গত জানুয়ারিতে কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের দেওয়া খসড়া মাস্টার প্ল্যানটি মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে গত ছয় মাসেও অনুমোদন পায়নি বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

এদিকে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যদি মাস্টার প্ল্যানে কোন পরিবর্তন আনে তাহলে এর প্রভাব পড়বে ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইনে। আর ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইনের কাজ শেষ হলেই টেন্ডার আহ্বান করে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

 

এর আগে বে-টার্মিনালের খসড়া মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে গত বছরের (২০২২) ২১ সেপ্টেম্বর বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে স্টেকহোল্ডার, বন্দর ব্যবহারকারী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সভায় প্রস্তাবিত মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পুনরায় সংশোধন করা হয় বে-টার্মিনালের খসড়া মাস্টার প্ল্যান।

 

ওই বছরের (২০২২) ৩১ মে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইন করতে বন্দরের সাথে দুটি কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং ডিয়েনইয়াং ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড।

 

চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠান দুটি বে-টার্মিনাল প্রকল্পে বন্দরের অর্থায়নে নির্মিত একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালের ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইন, টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি এবং কন্সট্রাকশন কাজের তত্ত্বাবধান করবে। প্রতিষ্ঠান দুটি প্রথম ধাপে ৬ মাসে ডিটেইল ড্রয়িং ডিজাইন তৈরি করার কথা। পরবর্তী আড়াই বছরে কনস্ট্রাকশন কাজের তত্ত্বাবধান করবে চুক্তি অনুযায়ী। এসব কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যয় হবে ১২৬ কোটি ৪৯ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮৬ টাকা।

 

একই বছরের (২০২২) ৭ এপ্রিল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে কোরিয়ান সেই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয় সরকার।

 

২০১৫ সালে সমুদ্র উপকূলে বে-টার্মিনাল প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সরকারি প্রকল্পের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি পাবলিক প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেন।

 

প্রকল্পের আওতায় মোট ৩টি টার্মিনাল নির্মিত হবে। এর মধ্যে একটি নির্মিত হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে। বাকি দুটি টার্মিনাল পিপিপি ভিত্তিতে বিদেশি বিনিয়োগে নির্মাণ করা হবে। বিদেশি কোন প্রতিষ্ঠান বাকি টার্মিনাল দুটি নির্মাণ করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

 

তবে ইতিমধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি পিএসএ ইন্টারন্যাশনালের নাম আসলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি।

 

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি নিয়ে বর্তমানে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল। বে-টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১২ মিটার গভীরতা ও ২৮০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ। ভেড়ানোর ক্ষেত্রে জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে না। ৮৭১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন ও সরকারি জমি ছাড়াও সমুদ্র থেকে জেগে উঠা আরও এক হাজার ৬০০ একরসহ প্রায় দুই হাজার ৫০০ একর জমিতে বে-টার্মিনাল প্রকল্প নির্মিত হচ্ছে।

 

বে-টার্মিনাল প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান অপারেশনাল এরিয়ার প্রায় ৬ গুণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৬ হাজার কনটেইনারবাহী বহনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ বার্থিং করানো সম্ভব হবে। বর্তমান বন্দরের জেটিতে সর্বোচ্চ ১৮০০ একক ধারণক্ষমতার কনটেইনার জাহাজ ঢুকতে পারে।

 

এখন বন্দরে জোয়ার-ভাটার ওপর ভিত্তি করে জাহাজগুলো জেটিতে ভেড়ে। বে-টার্মিনালে দিনে-রাতে জাহাজ জেটিতে ভিড়তে ও ছেড়ে যেতে পারবে। জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে না। এতে পণ্য পরিবহন খরচ ও প্রচুর সময় সাশ্রয় হবে। চ্যানেলের প্রশস্ততা রয়েছে সর্বনিম্ন ৮৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২৫০ মিটার। এই প্রকল্পে ১৫ হাজার ট্রাক রাখার ব্যবস্থা থাকবে।

 

কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলে বাঁকের কারণে জেটিতে জাহাজ আসতে ঝুঁকি নিতে হয়। বে-টার্মিনালে সরাসরি জাহাজ ভিড়তে পারবে। বে-টার্মিনালে পণ্য জাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি আউটার রিং রোড হয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যেতে পারবে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জার্মান প্রতিষ্ঠান শেল হর্নের নেতৃত্বে ওই দেশের এইচপিসি হামবুর্গ পোর্ট কনসালটিং এবং বাংলাদেশের কেএস কনসালট্যান্টস লিমিটেড যৌথভাবে বে-টার্মিনাল প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি (সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা) করে। সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে করা ওই সমীক্ষার প্রতিবেদনে প্রকল্পটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে একটি টার্মিনাল বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে এবং বাকি দুটি পিপিপি ভিত্তিতে করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট