চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৌ ধর্মঘট স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

নৌযান শ্রমিকদের ১১ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার ভোর থেকে সারাদেশে নৌ চলাচল বন্ধ রাখার পর বিকালে নৌ অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ফেডারেশন নেতারা কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। ১১ দফা দাবিতে যাত্রীদের ভোগান্তি এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন।
এদিকে এই ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকে। ফলে বিভিন্ন রকমের পণ্যবাহী জাহাজ, তেলবাহী ট্যাংকারসহ মোট ৮৩টি মাদার ভেসেলকে বর্হিনোঙরে খালাসের অপেক্ষায় থাকতে হয়। তবে বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে থাকা ১৯টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস চলেছে। লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব জানান ধর্মঘটের কারণে ৪০০ লাইটার জাহাজ বর্হিনোঙরে অলস বসে থাকে। সরকার ও মালিকের কাছে দেয়া ১১ দফা দাবি এক পনেরো মাসেও পূরণ না হওয়ায় চট্টগ্রামে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু হয় মঙ্গলবার মধ্যরাতে। ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির মধ্যে মালিকপক্ষের কাছে সাত দফা এবং সরকারের কাছে চার দফা দাবি রয়েছে। দাবিগুলো হলো- প্রত্যেক শ্রমিককে মালিকের পক্ষ থেকে পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র ও সার্ভিস বুক দিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তার জন্য জীবন বীমা করাতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রভিডেন্ট ফান্ড করতে হবে। খোরাকি ভাতা দিতে হবে। কর্মকালীন মৃত্যু হলে মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। নৌপথে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী বন্ধ করতে হবে। ভারতগামী জাহাজের ল্যান্ডিং পাস দিতে হবে। সমুদ্র ভাতা দিতে হবে। মাস্টার ড্রাইভারদের ইনচার্জ ভাতা দিতে হবে। মাস্টার ড্রাইভার পরীক্ষার অনিয়ম দূর করতে হবে এবং মেরিন কোর্টের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলাম জানান, “যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে আমরা কর্মবিরতির কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করছি।”
পরে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শুক্কুর মাহমুদ বলেন, “দেশে বন্যা চলছে, শ্রম প্রতিমন্ত্রীও দেশের বাইরে। যাত্রীদের দুর্ভোগ আর দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটও স্থগিত করা হল।”
শ্রম মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান, শ্রম অধিদপ্তরের মহা পরিচালক মো. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন।
“তারা যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আলাপ আলোচনা করে আপাতত নৌযান চালালের ঘোষণা দিয়েছে।”
ঢাকা সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএ এর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, “আমরা ধর্মঘট স্থগিতের খবর পেয়েছি। তবে সদরঘাটে এখনও লঞ্চ এসে সেভাবে ভেড়েনি। এখন ধর্মঘট উঠে গেলেও যাত্রী খুব বেশি আসবে না। কাল থেকে হয়ত লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক হবে।”
এই ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে লাইটার জাহাজ (ছোট আকারের পণ্যবাহী জাহাজ) চলাচল বন্ধ থাকে সারা দিন। সেই সঙ্গে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখায় ভোগান্তিতে পড়ে রাজধানীসহ দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন জেলার নৌপথের যাত্রীরা।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের হিসাবে, চট্টগ্রাম থেকে প্রায় দেড় হাজার লাইটার জাহাজ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে। এসব জাহাজের মালিকানা রযেছে প্রায় আটশ ব্যবসায়ীর হাতে। আর সারাদেশের সব নৌরুট মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার লাইটার জাহাজ রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে এর সবই বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রামে দেড় হাজার লাইটারে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। আর সারাদেশে প্রায় ছয় হাজার লাইটারে শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখের বেশি।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট