চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

টেকসই সবুজ শহর বিনির্মাণে কাজ করছে র‌্যাংকস এফসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | ২:৪১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগরীতে টেকসই সবুজ শহর বিনির্মাণে কাজ করছে র‌্যাংকস এফসি। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই প্রতিষ্ঠান বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দৈনিক পূর্বকোণের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সিইও তানভীর শাহরিয়ার রিমন এ তথ্য জানান। নিচে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: কোভিড পরবর্তি পরিস্থিতিতে বর্তমানে চট্টগ্রামের আবাসন শিল্পের অবস্থা কী?

উত্তর: কোভিড পরিস্থিতি আসলে আমাদের বিজনেস ডাইনামিকসগুলোকে নানান ভাবে বদলে দিয়েছে। আমরা যেভাবে বিজনেস প্ল্যান করেছিলাম, সেভাবে এগুতে গিয়ে আমাদের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমাদের সবসময় সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি ছিল যাদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করি, আমাদের হিউম্যান রিসোর্স এবং তাদের সেইফটি এনসিওর করা। এবং সেটা আমরা যথাযথ সময়ে আমাদের মুল প্রায়োরিটিতে নিয়ে আসি। আমরা তাদের  স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে  সর্বাধিক প্রায়োরিটি দিয়ে আমরা  কাজ করি, ফলে যেটা হয়েছে যে, আমাদের কর্মীরা সবসময় সুস্থ ছিলো। আমাদের ব্লু কলার এবং হোয়াইট কলার পিপল সবাই সুস্থ ছিল  এবং এই কারণে যখন আমরা কোভিড থেকে ফিরে আসি তখন আমরা দিগুন বেগে কাজ করতে পেরেছি। অনেক সময় আমাদের অনেক গুলো প্রোজেক্টে আমরা ডাবল শিফটে কাজ করেছি। যার ফলে, আমাদের যে ব্যাকলগ তৈরি হয়েছিলো তা আমরা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। দ্যান এগেইন, বিজনেস টার্গেট এচিভ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি যে ঐ সময়টায় অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছিল, কিন্তু আমরা যেহেতু ঐ সময়টায় স্বাস্থ্য-সুরক্ষা মেনেই কাজ চালিয়ে গিয়েছি, সেহেতু  সে সময় আমাদের কাস্টমারদের, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা কনফিডেন্সের জায়গা আমরা তৈরি করতে পেরেছি। আমাদের প্রায়োরিটি ছিলো একটা হলিস্টিক এপ্রোচে কাজ করা। হলিস্টিক এপ্রোচ বলতে, আমাদের কর্মীদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষা, আমাদের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়গের সুরক্ষা এবং আমাদের যারা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার আছেন, আমাদের যারা ভ্যাল্যুচেইন পার্টনার আছেন তাদের ইনভেস্টমেন্টের সুরক্ষা, আমাদের পার্টনারশিপের সুরক্ষা। এই সব যখন আমরা সুন্দরভাবে করতে পেরেছি তখন কিন্তু আমরা বছর শেষে দেখতে পেয়েছি যে, আমাদের বিজনেস টার্গেট এচিভ হয়েছে, রেভিনিউ টার্গেট এচিভ হয়েছে।

এটা আমাদের প্রতিষ্ঠানের কথা বললাম। ওভারঅল ইন্ডাস্ট্রির কথা যদি বলি, কিছুটাতো ধাক্কা লেগেছেই। হয়ত অনেকের ক্রয় ক্ষমতা কিছুটা কমে এসেছে, অনেক পেশাজীবী চাকুরী হারিয়েছেন, অনেকের ব্যাবসায় লোকসান হয়েছে। আমরা যেহেতু একটা লাইফস্টাইল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজকরি, আমরা আমাদের প্রোডাক্টে নানা ধরনের ভ্যারিয়েশন আনার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই প্রোডাক্ট ভ্যারিয়েশন আনার কারনে আমাদের একটা নির্দিষ্ঠ কাস্টমার সেগমেন্ট তৈরি হয়েছে। যারা রিপিটেডলি আমাদের কাছ থেকে কিনছেন, পাশাপাশি তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব যারা ক্যাপাবল এবং যাদের বায়িং টেন্ডেন্সি আছে তারা আমাদের প্রোডাক্টের উপর আস্থা রাখছেন এবং আমাদের কাছ থেকে কিনছেন। ফলে বাজারে আমরা একটা পজিটিভ ট্রেন্ড তৈরি করতে পেরেছি। আমরা সবসময় বলি, এমন একটা বিজনেস ট্রেন্ড তৈরি করার কথা যেটা শুধুমাত্র প্রফিটের খোঁজ না করে প্রোসপারিটির খোঁজ করবে। এই যে প্রোসপারিটির খোঁজে আমাদের যে বিজনেস ট্রেন্ড তৈরি করার চেষ্ঠা, সেটা এই কোভিডের সময়ে আরও বেশি স্পষ্ঠ হয়েছে,এবং সে জায়গায় আমরা বলতে পারি আমরা সফল হয়েছি।

এবার আমরা একটু দৃষ্টিপাত করি দেশের অবস্থার উপর। আমাদের জিডিপি এখন ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট ফাস্টেস্ট গ্রোইং জিডিপি। কোভিডের এই সময়েও আমাদের ৬% জিডিপি গ্রোথ হয়েছে। এই জিডিপি যেভাবে গ্রোথ হচ্ছে তাতে প্রজেকশন অনুযায়ী ২০২৫ এ জিডিপি হবে অর্ধ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৫০০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান জিডিপিতে আমাদের আবাসন এবং নির্মান খাতের অবদান প্রায় ৮%। এই সেইম গ্রোথে যদি আগাই তাহলে ২০২৫ এ এই ইন্ডাস্ট্রির সাইজ হবে ৪০বিলিয়ন ডলার। এবং ২০৩০ এ এই ইন্ডাস্ট্রির সাইজ হবে ৮০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার যেখানে সে সময় বাংলাদেশের জিডিপি হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার।  তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি, এই খাতের প্রস্পেক্ট কিন্তু অসীম। কারণ একটা দেশের যখন ইকোনোমিক গ্রোথ হয় তখন সিটির গ্রোথ হয়, আর্বানাইজেশন হয়, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট  হয়। সে কারনে আমরা মনে করি, এই ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথ যেটুকু হওয়ার কথা তার ২০-৩০% হয়েছে। অর্থাৎ বিশাল একটা অংশ বাকি আছে বিশেষ করে চট্টগ্রামে । আমরা এখন এমন ভাবে কাজ করছি যাতে আমাদের আর্বানাইজেশন কেবল নগরকে কেন্দ্র করেই নয়, বরং এটাকে সাস্টেইনেবল করতে আমরা উপশহরের দিকে যাচ্ছি।  আমাদের টার্গেট হচ্ছে আমরা উপশহরে গিয়ে স্যাটেলাইট টাউনশিপ ডেভেলপ করব। এই লক্ষেই এখন আমরা কাজ করছি এবং আমার মনে হয় এই জায়গায় আমাদের যথেষ্ঠ ভালো করার সুযোগ আছে। আমরা এই রিয়েল এস্টেটকে এফর্ডেবল এবং সাস্টেনেবল যদি করতে চাই তাহলে এর কোনো বিকল্প নেই।

প্রশ্ন: র‌্যাংকস এফসি বর্তমানে গ্রীন বিল্ডিং নিয়ে কাজ করছে বলে জানতে পেরেছি, এই ব্যাপারে বিস্তারিত বলুন।

উত্তর: এই প্রশ্নের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। চমৎকার একটি প্রশ্ন করেছেন। আসলে গ্রীন বিল্ডিং নিয়ে অনেকের মিশ্র একটি ধারণা আছে। মিশ্র ধারণা এই জন্যই বলছি কারণ অনেকেই মনে করেন যে একটি বিল্ডিংয়ে গাছ লাগিয়ে দিলে বা কিছু সবুজ লাগিয়ে দিলেই এটি গ্রীন বিল্ডিং হয়ে যায়। অনেকেই মনে করেন  যে বিল্ডিংয়ে ল্যান্ডস্কেপিংএর পাশাপাশি সবুজ রঙ করে দিলে সেটি গ্রীন বিল্ডিং হয়ে যায়। কিন্তু একটা গ্রীন বিল্ডিং এর কনসেপ্ট আরও অনেক ডিটেলে যাওয়া লাগে। একটা  বিল্ডিংএ শুধু সবুজ গাছ লাগিয়ে দিলেই সেটি গ্রীন বিল্ডিং হয়ে যায় না। আবহাওয়া কে মাথায় রেখে বিল্ডিং ডিজাইন করা, ডিজাইন কনসেপ্টে ষড়ঋতুকে সঠিক ভাবে কাজে লাগানো ইত্যাদি মাথায় রাখতে হয়। যদি আমি চট্টগ্রামের কথা বলি তাহলে, শহরের দক্ষিণে সমুদ্র আছে, পূর্ব দিকে পাহাড় আছে। চট্টগ্রামে বিল্ডিং ডিজাইন করার ক্ষেত্রে আপনি যদি এই দিক গুলো মাথায় না রেখে ডিজাইন করেন তাহলে আপনি গ্রীন বিল্ডিংয়ের সুবিধা গুলো পাবেন না। আমরা আমাদের প্রজেক্টগুলোতে রিনিউএবল এনার্জির ব্যাবহার প্রমোট করছি। রিসাইক্লিং করার চেষ্টা করছি। ফর এক্সাম্পল,  আমাদের অনেক গুলো কমন স্পেসে যে গ্রীন ব্যাবহার করছি সেসব গ্রীন স্পেসে যে লাইটিং সল্যুশন, যে পানির সল্যুশন ব্যবহার করছি সেগুলোকে আমরা রিসাইক্লিং প্রসেসে নিয়ে আসছি। এই ব্যাপারগুলোই মূলত গ্রীন বিল্ডিংয়ের এলিমেন্ট। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, আমরা আমাদের বিল্ডিং গুলো এমন ভাবে ডিজাইন করছি, যেন দিনের বেলা আলো জ্বালাতে না হয়। ন্যাচারাল লাইটের উপর আমরা ডিপেন্ডেন্সি বাড়াচ্ছি। ন্যাচারাল এয়ারের উপর আমরা ডিপেন্ডেন্সি বাড়াচ্ছি। এগুলো কারণে আমাদের বিল্ডিং গুলো স্ট্যান্ডআউট করছে। চট্টগ্রামে রিয়েল গ্রীন বিল্ডিং যেটা আমরা করেছি, মেমোরি ৭১ এবং এর পাশাপাশি আমাদের যে বিল্ডিং গুলো আসছে সেগুলোতে আমরা এই গ্রীন কনসেপ্টকে আপহোল্ড করছি। যে  আরও কিভাবে এটাকে ডেভেলপ করা যায়, আর কি ভ্যালুএডিশন করা যায়। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।

প্রশ্ন: বর্তমানে চট্টগ্রামে আপনাদের কয়টি প্রজেক্ট আছে?

উত্তর: আমাদের এই মুহুর্তে ১৮টি প্রজেক্ট চলছে। এবং আমাদের এই বছরের শেষে এই সংখ্যা ২৫টিতে দাড়াবে। আমরা আসলে প্রজেক্টের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়েও অনেক ফাইন ডিটেলে কাজ করতে চাই। আমরা একটা জিনিস বলি যে, বিল্ডিং তো আসলে অনেকেই বানায় কিন্তু আমরা আসলে আর্টপিস বানানোর চেষ্টা করি। আমাদের একেকটা বিল্ডিং একেকটা আর্টপিস। এটা একারণেই বলছি, আমরা আমাদের বিল্ডিংয়ে যে পরিমান ফাইন ফিনিশিং ও ক্র্যাফটম্যানশিপে অনেক সময় এবং মনোযোগ দেই। আমরা একটা ডিজাইন ওরিয়েন্টেড কোম্পানি।  আমরা আমাদের ডিজাইনটাকে বিক্রয় করি। আমরা সবসময় বলি যে,  একটা ভালো ডিজাইন যদি হয়, সেটা যদি ফাংশনাল এবং ইউজারফ্রেন্ডলি হয় তাহলে যারা আমাদের এন্ড কাস্টমার, যারা এগুলো ব্যাবহার করবে তারা যদি ফাংশনালি এই ডিজাইনটাকে ব্যাবহার করতে পারে তাহলে আমাদের  প্রজেক্ট স্ট্যান্ড আউট করে। এইসব কারনে আমাদের প্রত্যেকটা বিল্ডিং এই কনসেপ্টে ডিজাইন করছি। যা অনেক ফাংশনাল এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি। আশা করছি আমরা যে ট্রেন্ডটা সেট করছি সেটা শুধু আমাদের মধ্যেই নয় এটা পুরো কম্যুনিটিটাকে ডেভেলপ করবে এবং এই জায়গায় অনেক ডেভেলপাররা ইন্সপায়ার হবেন। এবং সত্যিকার একটি সিটি এবং একটা কম্যুনিটিকে আমাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারবো।

প্রশ্ন: আপনাদের বর্তমানে কোন কোন এলাকায় প্রজেক্ট আছে?

উত্তর: আমাদের এই মুহুর্তে চট্টগ্রামের প্রাইম লোকেশন গুলোতে বিশেষ করে উত্তর খুলশি, দক্ষিণ খুলশি,  নাসিরাবাদ প্রোপার্টিজ, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, পাঁচলাইশ, হালিশহর , মেহেদিবাগ, মোহাম্মদ আলি রোড এই সকল জায়গায় আমাদের প্রজেক্ট আছে। এছাড়াও আমাদের লাক্সারী কমার্শিয়াল প্রজেক্ট আছে আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডে এবং হালিশহরে। আমাদের জাকির হোসেন রোডে একট কমার্শিয়াল প্রজেক্ট আসছে। আমাদের সামনে একটা সিগনেচার মল করার ও পরিকল্পনা রয়েছে, যেটা হবে একটা স্টার ক্লাস মল। আমরা আসলে অনেক কিছু নিয়েই ভাবছি, আমাদের একটা বড় ধরনের টাউনশিপের প্ল্যান ও আছে। এই লক্ষে আমরা কাজ করছি। ২০২২ এ আমরা ৮টি প্রজেক্ট হ্যান্ড ওভার করবো। সেখানে সিগনেচার কমার্শিয়াল বিল্ডিং থেকে শুরু করে সিগনেচার রেসিডেনশিয়াল প্রজেক্ট আছে। আমার মনে হয় এই প্রজেক্ট গুলো যখন দাঁড়াবে তখন এগুলো শুধু চট্টগ্রামেরই নয় বরং বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক হবে।

র‌্যাংকস এফসি পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে এবং দৈনিক পূর্বকোণকে অনেক ধন্যবাদ। দৈনিক পুর্বকোণের এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকিতে তাদের পাঠক, ব্যাবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং শুভানুধ্যায়ীদের আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট