চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

আনন্দবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

পরিত্যক্ত ভবন : সীমানা প্রাচীর না থাকায় আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১:১৫ অপরাহ্ণ

নতুন বছরে নতুন বইয়ের অপেক্ষায় শিক্ষার্থীরা। বছরের এ সময়টাতে শিক্ষার্থীরা থাকে পড়ালেখার চাপমুক্ত, অভিভাবকদেরও থাকে না কোন টেনশন। হাসি আর আনন্দে কাটে তাদের দিন। কিন্তু নিরানন্দে আছেন নগরীর আনন্দবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা। সন্তানকে স্কুলে পাঠিয়ে এসময়েও দুশ্চিন্তায় কাটছে তাদের দিন। স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকা এবং পরিত্যক্ত একটি ভবনের কারণে নিজের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন এখানকার অভিভাবকরা।

নগরীর ৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে অবস্থিত এ বিদ্যালয়ের পথচলা শুরু ১৯১৯ সালে। শুরুতে ওয়ার্ডের অন্য একপ্রান্তে অবস্থান ছিল এ প্রতিষ্ঠানটির। ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়ের ঘরটি ধুলিস্মাৎ হয়ে গেলে স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মো. আবুল বশর সওদাগর একই এলাকায় নিজের ভাড়াঘরে অস্থায়ীভাবে বিদ্যালয়টি চালু করেন। এর তিনবছর পর প্রায় ৬৮ শতক জায়গা কিনে প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। স্বাধীনতার পর বিদ্যালয়ের জন্য প্রথম সরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয় সাইক্লোন সেন্টারের আদলে চারতলা ভবন। পরবর্তীতে ৫০ বছরে আরো দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে ২০০৩ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর নির্মিত ভবনে পাঠদান চলে। ২০১৫ সালে আরও একটি ভবন নির্মিত হলেও এখনও পাঠদান শুরু হয়নি। স্কুলের ৪৬৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্তে¡ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবনটি অজ্ঞাত কারণে ভেঙে ফেলা হয়নি।

এছাড়া স্কুলের সীমানা প্রাচীর না থাকায় অরক্ষিত পুরো এলাকাটি। সন্ধ্যার পর বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াত বন্ধ করা যাচ্ছে না স্কুল এলাকায়। এছাড়া রাস্তার পাশে অবস্থানের কারণে মাঠের খেলতে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মো. ফরিদুল আলম বলেন, গত কয়েক বছর আগে ঢাকা থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের একটি দল এসে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে এবং দ্রুত সময়ের এটি ভেঙে ফেলা হবে জানালেও অদ্যাবধি কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

সীমানা প্রাচীর না থাকায় সন্ধ্যার পর বহিরাগত যুবকদের আড্ডার স্থলে পরিণত হয় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। অভিযোগ রয়েছে এর আগে বেশ কয়েকবার সীমানা প্রাচীরের জন্য অর্থ বরাদ্দ আসলেও দাতা সদস্যদের মধ্যে জায়গা নিয়ে মতবিরোধের কারণে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না।
গত পাঁচ বছর ধরে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির দায়িত্বে থাকা কাজী শামীম আরা বলেন, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য আমরা এর মধ্যে কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তবে করোনা মহামারীর কারণে সেটা আর এগোয়নি। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় ভবন মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পরিত্যক্ত ভবনটি ভাঙার ব্যাপারে কোন নির্দেশনা বা অর্থ বরাদ্দ কখনও পায়নি।

মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটিতে না থাকলে পদাধিকার বলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। নতুন কমিটি গঠন করা না হলেও এর মধ্যে নিজ উদ্যোগে ভবনটি পরিত্যক্ত হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে তালিকাভুক্ত করেছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহম্মদ আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, শুধু তালিকাভুক্তি নয়, ভবনটি সরিয়ে নিতেও প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণে এর আগে অর্থ বরাদ্দ এলেও কাজে লাগানো যায়নি। তবে এবার নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে চেষ্টা থাকবে, দাতা সদস্যদের সাথে বৈঠক করে কিভাবে এর সুরাহা করা যায়। যাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শতবর্ষী এ প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীরটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়।

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট