চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

নাগরিক সম্পৃক্তকরণ নির্দেশিকা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেই

ইফতেখারুল ইসলাম

২৮ ডিসেম্বর, ২০২১ | ১২:৫১ অপরাহ্ণ

সিটি কর্পোরেশন (নাগরিক মতামত ও অভিযোগ প্রতিকার) মডেল প্রবিধান করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। একইসাথে নাগরিক সম্পৃক্তকরণের উপর জোর দিয়ে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে নাগরিকদের সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের মতামত এবং অভিযোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গবেষণা করেই এসব মডেল তৈরি করেছে। যা অনুসরণ করলে নাগরিকদের অভিযোগ, মতামত, পরামর্শ এমনকি নাগরিকরা সিটি কর্পোরেশনের কাজের উপর কতটুকু সন্তুষ্ট সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা মিলবে। কিন্তু এসব উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের(চসিক) কোন আগ্রহ নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, এসব বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, নির্দেশিকাসমূহ যদি তারা অনুসরণ করে তাহলে সেখানে স্বজনপ্রীতি করার সুযোগ থাকবে না। ইচ্ছেমত কিছু করতে পারবে না। যেকারণে তারা এসব অনুসরণ করে না। তবুও তারা পার পেয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল জবাবদিহিতার অভাব। সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষ হল মন্ত্রণালয়। সিটি কর্পোরেশনকে এসব বিষয়ে বাধ্য করে না।
সিটি কর্পোরেশন নাগরিক সম্পৃক্ততা নির্দেশিকায় বলা আছে, নগরায়ন অভাবনীয় গতিতে বেড়ে চলেছে। ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি শহর এলাকায় বসবাস করবে। শহুরে জীবনযাত্রার মান উন্নতিকল্পে এবং দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য নগর অবকাঠামো উন্নয়ন ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের দিকে জরুরিভিত্তিতে মনযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সিটি কর্পোরেশনের সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার ও বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। বিদ্যমান স্থানীয় সরকার আইনে কর্পোরেশনের পরিচালন ব্যবস্থা, আর্থিক সক্ষমতা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের অনেক সুযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এর নগর উন্নয়নের অনুবিভাগের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অব সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পের মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের জন্য নীতিমালা ও নির্দেশিকা প্রণয়ন করেছে।
এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের কার্যক্রম যেমন, তথ্য প্রচার, অংশগ্রহণ ও মতামত প্রদানে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশনের কার্যকারিতা জোরদার করা। নাগরিকদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চারটি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নগরের পরিবেশ উন্নয়নের লক্ষ্যে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা। নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের জন্য নাগরিকদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রবণতা বৃদ্ধি, স্থানীয় অবকাঠামো ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নাগরিক চাহিদা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জন্য নাগরিক সমর্থন গড়ে তোলা।
এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের নাগরিকদের অংশগ্রহণে ই-গভর্ন্যান্স ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যম, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় ও যোগাযোগের উপর জোর দেয়া হয়েছে।
নাগরিক সম্পৃক্ততার জন্য ওয়ার্ড এবং সিটি পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি করার কথা বলা আছে। যেখানে বস্তিবাসী, এনজিও প্রতিনিধি ও সাধারণ নাগরিকদের তাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সাথে একত্রিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। সিটি লেভেল কো-অর্ডিনেশন কমিটি সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও যোগাযোগ মাধ্যমের সদস্যদের সাথে এনজিও, পেশাজীবী এবং ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের একত্রিত করবে।
সিটি লেভেলে যে কমিটি করার কথা বলা হয়েছে, তাতে সভাপতি মেয়র। সদস্য সচিব প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা। সদস্যরা হলেন, ডিএলজি, সকল স্থায়ী কমিটির সভাপতি, কর্পোরেশনের বিভাগীয় প্রধানগণ, মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি ১জন, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ৫ জন, বিভিন্ন পেশাজীবী গ্রুপের প্রতিনিধি ৮জন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ৪ জন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, যুব ও ক্রীড়া সংগঠনের প্রতিনিধি ৮জন, সুশীল সমাজ/এনজিও প্রতিনিধি ৫ জন, নারী প্রতিনিধি ৩ জন, সিবিও প্রতিনিধি ৫ জন। কমিটিতে প্রতি ওয়ার্ড থেকে প্রতিনিধি বাছাই, এক তৃতীয়াংশ নারী এবং দরিদ্র শ্রেণি হতে নারীসহ কমপক্ষে ৮জন সদস্য নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিতে কাউন্সিলর সভাপতি, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সহসভাপতি, নিম্ন আয়ের প্রতিনিধি ২ জন, সুশীল সমাজ/এনজিও প্রতিনিধি ৫জন, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি ২ জন, যুব ও ক্রীড়া /সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি ২ জন, নারী প্রতিনিধি ২ জন, মুক্তিযোদ্ধা ১ জন এবং ওয়ার্ড সচিব থাকবেন সদস্য সচিব হিসেবে।
এখানে নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের কাজের উপর নাগরিক জরিপের কথাও বলা আছে। জরিপের ফরম কীভাবে তৈরি করতে হবে তার মডেলও দেয়া হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন (নাগরিক মতামত ও অভিযোগ প্রতিকার) মডেল প্রবিধান : এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, নাগরিক কর্তৃক সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ পদ্ধতিতে নাগরিক মতামত ও অভিযোগ দাখিল এবং কর্পোরেশন কর্তৃক তা কার্যকর ও সময়মত নিষ্পত্তির জন্য একটি কাঠামো নির্ধারণ করা। যার ফলে কর্পোরেশন তার সেবাপ্রদান কার্যক্রম, নাগরিক যোগাযোগ ও জবাবদিহিতার উন্নতি সাধনে সক্ষম হবে।
নাগরিক মতামত ও অভিযোগ গ্রহণের জন্য ৭টি সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নগর তথ্য সেবা কেন্দ্র, মতামত ও অভিযোগ বাক্স, হেল্পলাইন, কর্পোরেশনের অফিসিয়ালি ওয়েবসাইট/ফেসবুক, ই-মেইল, কাউন্সিলরের মাধ্যমে অথবা কর্পোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যকোন মাধ্যমে। ৬ষ্ঠ গ্রেডের নিম্নের কোনো কর্মচারী অভিযোগ প্রতিকার কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এছাড়া অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। সপ্তাহের যেকোন একদিনকে কর্পোরেশনের অভিযোগ প্রতিকার দিবস ঘোষণা করার কথা বলা আছে।
বিবেচনাযোগ্য অভিযোগসমূহ হবে, কর্পোরেশনের কার্যাবলী ও সেবাপ্রদান সংক্রান্ত, কর্মচারীদের অদক্ষতা, অসদাচরণ, দুর্নীতি, বিলম্ব ও সময়ক্ষেপণ অভিযোগসমূহ। ওই মডেলে অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধান, নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া কীভাবে হবে তা বিশদভাবে বলা আছে।
মডেলে নাগরিক অভিযোগের যথাযথ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে কর্পোরেশনের অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করবে। জ্যেষ্ঠ প্যানেল মেয়র আহবায়ক, কর্পোরেশনের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তক্রমে দুইজন কাউন্সিলর যার মধ্যে একজন মহিলা কাউন্সিলর। চসিকের সচিব এবং অভিযোগ প্রতিকার কর্মকর্তা হবে সদস্য সচিব। অভিযোগ প্রতিকার আপিল কমিটির সভাপতি হবেন মেয়র। প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, দুইজন কাউন্সিলর যার মধ্যে একজন নারী কাউন্সিলর এবং সচিব হবেন সদস্য সচিব।
নাগরিক অভিযোগ ও মতামতের সারাংশ ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্টসমূহ, এসংক্রান্ত সমীক্ষা, এসব মতামত ও অভিযোগ সম্পর্কে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে অথবা নীতি নির্ধারণী বিষয়ে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে সেসব বিষয়ে সুপারিশ করে বছরে একটি প্রকাশনা বের করার কথাও বলা আছে।
জানতে চাইলে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, নাগরিকদের সম্পৃক্ত করেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সেবার মান বাড়াতে নাগরিদের কীভাবে আরো বেশি সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট