চট্টগ্রাম সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছবি: শরীফ চৌধুরী

শাপলায় রঙ্গিন সিরাজের স্বপ্ন

মিটু বিভাস

২৩ আগস্ট, ২০২১ | ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

শৈশবে বাবার হাত ধরে প্রতিদিন কৃষি জমিতে যেতেন মোহাম্মদ সিরাজ। বাবার কাছেই কৃষিকাজে তার হাতেখড়ি। ছোটবেলা থেকেই কৃষিতেই যেন তার ধ্যান-জ্ঞান। আর তাই জীবিকার তাগিদে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ভোলা থেকে চট্টগ্রামে নগরে এসেও ছাড়তে পারেননি সেই কৃষি প্রেম। অন্য আর দশজনের মতো দিনমজুর বা রিক্সা চালানোকে বেছে নেননি। পরিচিত একজনের মাধ্যমে কাট্টলী উপকূলীয় এলাকায় কিছু জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন চাষাবাদ।

গত দেড় যুগ ধরে এ স্থানে চাষাবাদ করেই টেনেটুনে চলছে তার সংসার। মেট্রোপলিটন এলাকায় সরকারিভাবে কৃষকদের কোনো আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে চোখে শর্ষেফুল দেখেন এসব কৃষকরা। কৃষি প্রেমে আটকা পড়া সিরাজ এ পেশা আঁকড়ে ধরে রাখলেও অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন বেশিরভাগ কৃষক।

গতকাল সাগরিকা স্টেডিয়ামের পেছনে রেললাইনের পশ্চিম পাশে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রির জন্য শাপলা তুলছেন মোহাম্মদ সিরাজ। বার্ষিক ৬০ হাজার টাকায় প্রায় এক একরের বেশি জায়গায় চলে তার চাষাবাদ। বছরের বিভিন্ন সময়ে মৌসুমী সবজির আবাদ করে থাকেন তিনি। শাপলা ছাড়াও বর্তমানে ধানের সাথে আবাদ করা হয়েছে পরুল, ঝিংগাসহ বিভিন্ন গ্রীষ্মকালীন সবজি।

এবার টানা বর্ষণে ধানসহ নষ্ট হয়ে গেছে অন্যসব ফসল। সব হারিয়ে সিরাজের এখন বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এ শাপলা। তিনি বলেন, গত ১৪ বছব ধরে শাপলা চাষ করে আসছি। এবারও শাপলা বিক্রির টাকা দিয়ে টেনেটুনে চলছে পাঁচজনের সংসার। মাত্র দশহাজার টাকা খরচে এবার ৪০ হাজার টাকা শাপলা বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে লাল রঙের এ শাপলার চাহিদা বেশি। তাঁর স্বপ্ন বড় পরিসরে আরো বেশি শাপলার চাষ করে একদিন তিনি স্বাবলম্বী হবেন। কিন্তু অর্থাভাবে শাপলার চাষও তিনি বাড়াতে পারছেন না। সরকারের কৃষি তহবিল থেকে কখনো কোনো ঋণ বা অর্থ সাহায্য পাননি। অর্থাভাবে আগামী মৌসুমে অন্যান্য সবজির আবাদও কিভাবে করবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তিত এ কৃষক। কংক্রিটের নগরীতে এখনো বেঁচে আছে বেশ কিছু আবাদি জমি। নগরজুড়ে এসব জমিতে চাষাবাদ করা এসব কৃষকদেরও অবস্থাও একই। বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছে তারা।

কাট্টলী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব ঘোষ বলেন, এখন সরকারিভাবে মেট্রোপলিটন এলাকায় কৃষকদের আর্থিক লোন ও সহায়তা দেয়া হয় না। তবে কৃষকদের জমির উন্নয়ন বা কারিগরি সকল সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ ও উৎপাদিত পণ্যের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

তিনি আরো বলেন, উপজেলা পর্যায়ে কৃষকদের ঋণ বা আর্থিক সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। সরকার মেট্রোপলিটন এলাকায় থাকা কৃষকদের কথা চিন্তা করে প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ দিলে অবশ্য এসব কৃষকদের সহায়তা প্রদান করা হবে।

পূর্বকোণ/বিভাস/মামুন/পারভেজ

শেয়ার করুন