চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভূ-গর্ভের পানিনির্ভরতা কমাতে চায় সরকার

বোরোতে নিরুৎসাহিত আউশে বেশি আগ্রহ

আউশ চাষে প্রণোদনা পাচ্ছেন ৮৪০০ কৃষক

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন 

৮ এপ্রিল, ২০২১ | ৪:২২ অপরাহ্ণ

আউশ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এবার ৮ হাজার ৪শ কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। বোরো কমিয়ে আউশ চাষ বাড়াতে এই প্রণোদনা দিয়ে আসছে সরকার। কৃষি বিভাগ জানায়, চট্টগ্রাম জেলায় আমনের চাষাবাদ হচ্ছে পৌনে দুই লাখ হেক্টর জমিতে। আর বোরোর ৬০-৬৪ হাজার হেক্টর। দুই চাষাবাদেই ভূ-স্তরের ব্যাপকভাবে পানি ব্যবহৃত হয়। খরচও বেশি। তাই আউশের চাষাবাদ বাড়ানো পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। কারণ আউশ চাষে ডিজেল, পানি ও সার খরচ অনেকটা কম। বিশেষ করে ভূ-গর্ভের পানির ব্যবহার কম। ভূ-গর্ভের পানি চাপ কমাতে কয়েক বছর ধরে আউশ আবাদ বাড়াতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আবাদ বাড়াতে কৃষকদের প্রণোদনা ও বীজ সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মূলত ভূ-গর্ভের পানির ব্যবহার কমাতে আউশ চাষাবাদে জোর দিয়েছে সরকার। এরফলে আউশ চাষে সুফলও আসছে। গত পাঁচ বছরে আউশের আবাদ বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে আউশ আবাদে ৮ হাজার ৪শ কৃষককে প্রণোদনা দিয়েছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে এই প্রণোদনা দিচ্ছে। গেল বছর কয়েক দফায় প্রায় প্রায় ১৫ হাজার কৃষক এই প্রণোদনা পেয়েছিলেন। কৃষি বিভাগ জানায়, প্রণোদনের আওতায় কৃষকপ্রতি ৫ কেজি করে বীজ ধান, ২০ কেজি ডিএটি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার পাবেন। কৃষি বিভাগের মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আউশ চাষ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। বিশেষ করে ভূ-গর্ভের পানির ব্যবহার কমাতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ বোরোতে প্রচুর পরিমাণে ভূ-গর্ভের পানি ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এসময়ে সবজি চাষ বাড়ানোসহ নানা উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এতে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। গত মৌসুমে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৩৭ হাজার হেক্টর। ২০১৮-১৯ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার হেক্টর। এছাড়াও এ মৌসুমে খরিপ শস্য ও শস্যদানা চাষাবাদ করা হয়।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সরকার বোরো আবাদ স্থিতিশীল রাখতে চায়। বোরোতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য আউশ আবাদ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে। কারণ আউশ চাষ হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রকৃতি-নির্ভর। সেচের প্রয়োজন হয় না। বৃষ্টি পানিতে বীজতলা তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ-চাষাবাদ ও পরিচর্যা হয় প্রকৃতির পানিতে। তাই সার ও কীটনাশটক ব্যবহারও কম দিতে হয়। বোরো হচ্ছে সেচ-নির্ভর। পানি, সার ও বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আউশের আবাদ বাড়ানোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে সার ও বীজ প্রদান করা হচ্ছে। তারই ধারবাহিকতায় কয়েক বছর ধরে আউশের চাষ বেড়েই চলেছে।

কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, বোরো ধানের চাষ বাড়ানোর জন্য আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি না। কারণ বোরো হচ্ছে সেচ-নির্ভর। ভূ-গর্ভের পানি বেশি ব্যবহার করা হয়। আর খরচও বেশি। তাই আউশের প্রতি জোর দিয়েছে সরকার। এটি সম্পূর্ণ প্রকৃতি-নির্ভর। বৃষ্টির পানিতে চাষাবাদ করা হয়।

তবে বোরো মৌসুমে এখন শীতকালীন ও খরিপ ফসলের চাষাবাদ আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে। লাভ বেশি হওয়ায় ধানের চেয়ে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে কৃষক।

বোরোর তুলনায় আউশের চাষ প্রায় ১০-১২ হাজার হেক্টর বেড়েছে। ২০১৪-১৫ মৌসুমে আউশের চাষ হয়েছিল ২৮ হাজার হেক্টর। ১৫-১৬ মৌসুমে তা বেড়ে ৩২ হাজার হেক্টরে দাঁড়ায়। ১৬-১৭ মৌসুমে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর।

কৃষি বিভাগ জানায়, আউশে উপশী ও নেরিকা জাতের (আফ্রিকান জাত) জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। নেরিকা জাতের বীজ অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মৌসুমে এবং কম সেচে প্রস্তুত করা যায়। দাম কিছুটা বেশি বিধায় ভর্তুকির পরিমাণও দ্বিগুণ দেওয়া হয়েছে।
বোরোতে সেচ খরচে বিদ্যুৎ, ডিজেলের দরকার হয়। আর দিন দিন এই দুটির মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এছাড়াও সারের খরচও বাড়ছে। খরচের তুলনায় বোরো চাষে লাভ কম। তাই কৃষকদের আউশে উদ্বুদ্ধ করছি।

পূর্বকোণ/মামুন

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট