চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হুমকিতে

মোহাম্মদ আলী 

১৩ মার্চ, ২০২১ | ২:৫২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে সরকারের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ইট বিক্রি বন্ধ ও নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধের হুমকি দেওয়ায় উন্নয়ন কাজের এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যা সমাধান না হলে চট্টগ্রামের প্রায় ২৫০০ ঠিকাদার দাবি আদায়ের দাবিতে মাঠে নামারও হুমকি দিয়েছে। এজন্য সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারদের নিয়ে গঠন করা হচ্ছে ‘সম্মিলিত ঠিকাদার ফোরাম’।

ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, গত এক মাস ধরে নির্মাণ সামগ্রীর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। প্রতি টন লোহার মূল্য গড়ে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের মূল্য বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। পাথরের প্রতি টনে মূল্য বেড়েছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না দেশীয় উৎপাদিত বিটুমিনের। এরমধ্যে ভাটার মালিকরা বন্ধ করে দিয়েছে ইট বিক্রি। এতে নির্মাণ কাজে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ মূল্য বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের চলমান প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আর্থিক লোকসানের শিকার হচ্ছে ঠিকাদাররা।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটু  দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে। এতে ঠিকাদার রয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার। তারা সবাই সরকারের উন্নয়ন কাজের অংশীদার। কিন্তু হঠাৎ করে গত এক মাস ধরে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে ঠিকাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একই সময়ে ইট বিক্রি বন্ধ থাকায় চলমান প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।’

আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, ‘এক মাস আগে ৬০ গ্রেড রডের প্রতি টন মূল্য ছিল ৫০ হাজার থেকে ৫২ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ হাজার থেকে ৬৮ হাজার টাকা। একই সময়ে আমদানিকৃত পাথরের মূল্য ছিল প্রতি টন ৩২০০ থেকে ৩৩০০ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪২০০ থেকে ৪৫০০ টাকা। প্রতি ব্যাগ সিমেন্টের মূল্য ছিল ৩৬০ থেকে ৩৬৫ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪১০ থেকে ৪২০ টাকা। নির্মাণ কাজে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির উৎপাদিত বিটুমিন ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বিদেশ থেকে বিটুমিন আমদানিকারকদের কারসাজির কারণে দেশীয় বিটুমিনের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় একেবারেই কমে গেছে। ফলে বেকায়দায় পড়েছেন ঠিকাদাররা। তাই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম এলজিইডি ঠিকাদার সমিতি সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের কাছে ৭দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। এ সময়ে দাবি আদায় না হলে সরকারের চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখবে ঠিকাদাররা।’

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ঠিকাদার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু কাজ ২০১৪ সালের এবং কিছু প্রকল্প ২০১৮ সালের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানের বাজার মূল্য ওই সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। সবমিলিয়ে বর্তমানে গড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বেড়েছে। এর মধ্যে প্রকল্পের মূল্য থেকে সরকারকে সাড়ে ১২ শতাংশ ভ্যাট ও ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয়। এছাড়াও বেড়েছে মিস্ত্রি খরচও। তাই নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য এবং ইট বিক্রি বন্ধ হওয়ার কারণে ঠিকাদারদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিষয়টি আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে কথা বলে এ ব্যাপারে একটি সমাধানের চেষ্টা চালাবেন। তাই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্মাণ খাতে সৃষ্ট সংকট সমাধান না হলে ঠিকাদাররা সরকারের চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার মহিউদ্দিন সেফুল চৌধুরী বলেন, ‘নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে আমরা সব প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদাররা সম্মিলিতভাবে আন্দোলনে নামবো। এজন্য আমরা করণীয় নির্ধারণ করছি।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট