চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ছয় কনস্টেবল গ্রেপ্তারের পর শতাধিক বদলি

নাজিম মুহাম্মদ 

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ২:২২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ও আশেপাশে বাড়ি চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশে কর্মরত এমন শতাধিক কনস্টেবলকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিন) বদলি করা হয়েছে। চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত ছয় কনস্টেবল আনোয়ারা থানায় গ্রেপ্তার হওয়ায় অনেকটা বিব্রত নগর পুলিশ।

কনস্টেবলদের মধ্যে তিনজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার দেহরক্ষী হওয়ায় বিষয়টি বেশি আলোচনা হয়েছে বৈকি। গ্রেপ্তার ছয়জনই চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা। এরমধ্যে দুইজনের বাড়ি আনোয়ারাতেই। গত ৭ ফেব্রুয়ারি কনস্টেবলদের গ্রেপ্তার হয়। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই এ কয়দিনে ১০৫ জন কনস্টেবলের বদলি হয়েছে-যাদের অধিকাংশের বাড়ি চট্টগ্রামের আশেপাশের উপজেলায়। আরো ২০ জন কনস্টেবলের বদলি প্রক্রিয়াধীন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-৩) স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়েছে ‘বদলিকৃত কনস্টেবলদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছাড়পত্র প্রদান করতে হবে। অন্যথায় ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হয়েছে মর্মে গণ্য হবেন।

পুলিশে কর্মরত অনেকেই ধারণা করছেন আনোয়ারায় চাঁদাবাজির ঘটনার জেরে ‘চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের’ বাইরে বদলি করা হচ্ছে।

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি সদর) আমির জাফর জানান, খাগড়ছড়ি ও কক্সবাজারে এপিবিএনের নতুন দুটি ইউনিট গঠন করা হচ্ছে। সেখানকার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ১২০জন পুলিশ কনস্টেবলের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুইজন হাবিলদারসহ ১০৭ জনের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। আরো ২০ জন কনস্টেবল বদলি করা হবে। তবে বাকী ২০ জনের পরিবর্তে  বাইরে থেকে ২০ জন কনস্টেবল সিএমপিতে যোগ দেবে।

বদলি হওয়াদের অধিকাংশ চট্টগ্রামের বাসিন্দা হওয়া প্রসঙ্গে ডিসি আমীর  বলেন, সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে এপিবিএনের ইউনিট দুটি যেহেতু খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে। ভাষা ও এলাকা চেনার সুবিধার্তে চট্টগ্রামের আশেপাশে বাড়ি এমন সদস্যদের সেখানে দিতে বলা হয়েছে। পাশপাশি ছুটিতে তারা বাড়িতেও যাতায়াত করতে পারবেন সহজেই। বদলির বিয়ষটি আরো আগে থেকে প্রক্রিয়াধীন ছিল। কাকতালীয়ভাবে আনোয়ারার ঘটনার পর হয়েছে। বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝির কোন সুযোগ নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আনোয়ারার ঘটনাটি পুলিশের জন্য বিব্রতকর। যারা দায়ী তারা গ্রেপ্তার হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তারা শাস্তি পাবে। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। তবে ওই ঘটনার পর চট্টগ্রামের বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবলদের বদলি করা হচ্ছে। এতে নিরপরাধ কনস্টেবলরাও বদলির তালিকায় পড়েছেন।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে আনোয়ারার বৈরাগের নিজ বাড়ি থেকে  আবদুল মান্নান নামে একজন ঠিকাদারকে তুলে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আবদুল মান্নান বাদি হয়ে আনোয়ারা থানায় মামলা দায়ের করলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার থানা পুলিশ ছয় কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন, আনোয়ারা উপজেলার শোলকাটা গ্রামের মৃত বাছন আলির ছেলে আবদুল নবী, পটিয়ার দক্ষিণ গোবিন্দের খিল গ্রামের মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ছেলে এসকান্দর হোসেন, আনোয়ারার দক্ষিণ বারশত গ্রামের মোহাম্মদ হাশেমের ছেলে মনিরুল ইসলাম, সীতাকু-ের পুর্ব বাটেরখীল গ্রামের শামসুদ্দিনের ছেলে শাকিল খান, আনোয়ারার চাতুরী গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মোহাম্মদ মাসুদ ও মিরসরাই ফরপরিয়া গ্রামের সিরাজুল মোস্তফার ছেলে মোর্শেদ বিল্লাহ। এরমধ্যে মোর্শেদ নগর পুলিশ কমিশনার, মাসুদ গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনারের দেহরক্ষী, এস্কান্দর কর্নফুলী জোনেরর সহকারী পুলিশ কমিশনারের কম্পিউটার অপারেটর ও মনিরুল নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোনে কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত ছিল। বাকী দুইজন দামপাড়া পুলিশ লাইনে রিজার্ভ ফোর্সে কর্মরত।

ঘটনার সময় তারা চারটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছে। এরমধ্যে একটি পালসার মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলেও বাকী তিনটি মোটরসাইকেলের মধ্যে দুটি সুজুকি ও একটি ইয়ামাহা ব্র্যান্ডের অত্যাধুনিক মোটরসাইকেল। এ তিনটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশনও ছিলো না। তিনটি মোটরসাইকেল দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা দামের। ধারণা করা হচ্ছে নম্বরবিহীন তিনটি মোটরসাইকেল শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সীমান্ত পার করে আনা হয়েছে। কনস্টেবলরা নম্বরবিহীন অবৈধ মোটরসাইকেল ব্যবহার করলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দেহরক্ষী হওয়ায় তাদের কেউ কিছু বলার তেমন সাহস করতো না।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট