চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

চমেকে শিশু ওয়ার্ডে মিলছে না ঠাঁই

ভর্তি হওয়া রোগীর ৪০ শতাংশই শ্বাসকষ্টের

চমেকে শিশু ওয়ার্ডে মিলছে না ঠাঁই

শিশুদের বাড়তি নজর রাখার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ইমাম হোসাইন রাজু

৭ ডিসেম্বর, ২০২০ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর আড়াইটা। মাত্র তিন মাস বয়সী এক নবজাতককে কোলে নিয়ে ছুটে এলেন মা। নবজাতকের সাথে সংযুক্ত আছে অক্সিজেনও। যার সিলিন্ডার বহন করছে স্বজন। কাছে গিয়ে জানা গেল গেল দুই দিন ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যায় ভুগছে শিশুটি। তাই চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি করাতে এলেন। ঠিক তার ১০ মিনিটের মাথায় অক্সিজেন লাগানো আরেক শিশুকে নিয়েও হাজির তার মা-বাবা। সমস্যা একই। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এক বছরের কম বয়সী ওই শিশুরটিও।

গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের চিত্র ছিল এটি। নবজাতক ও শিশুদের চিকিৎসায় বিশেষায়িত এ হাসপাতালের শিশু বিভাগে রোগীতে টইটুম্বর। শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি সেখানে। শুধু এ হাসপাতালই নয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিত্রও একই। সেখানেও শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন। দুই হাসপাতালে তথ্য মতে, ভর্তিরতদের ৪০ শতাংশের বেশি শিশুই শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা নিচ্ছেন দুই হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শীত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বৃদ্ধি পেয়েছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ। যার কারণে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে নবজাত থেকে শুরু করে শিশুদের। শুধু ভর্তিই নয়, চট্টগ্রামের বৃহৎ এ দুই হাসপাতালের বহিঃবিভাগেও চিকিৎসা নিতে ছুটে আসার সংখ্যাও গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় হু হু করে বাড়ছে। যদিও আতঙ্কিত না হয়ে এসময় শিশুদের প্রতি একটু বাড়তি নজর রাখার তাগিদ শিশু বিশেষজ্ঞদের।

তথ্যমতে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগে গতকাল রবিবার ভর্তি ছিল ৩৮৮ জন শিশু। যাদের মধ্যে ১৬৫ জনই শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু বিভাগে ভর্তি রয়েছেন ২৬৭ জন শিশু। যাদের মধ্যে ১০৭ জন ভর্তি হয়েছেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। অর্থাৎ দুই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬৫৫ জন নবজাতক ও শিশু। যাদের ২৭২ জনই শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন। এছাড়া শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসঘটিত রোগসহ নিউমোনিয়া, ডায়ারিয়া, সর্দি, কাশি, এলার্জি এবং শীতজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েও ভর্তি হচ্ছেন বহু শিশু।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিশু বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ পূর্বকোণকে বলেন, ‘এ সময়ে শিশুদের প্রতি অবশ্যই মায়েদের বাড়তি নজর দিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। উপসর্গ দেখা দিলেই সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই অলি-গলি বা ফার্মেসি দোকান থেকে ওষুধ নিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যাবে না। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে শতভাগ সুস্থ হওয়া সম্ভব।’

করোনার এ সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে শিশুদের প্রতি নজর দেয়ার কথা জানিয়ে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও কনসালটেন্ট (পেডিয়াট্রিক আইসিইউ) শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফাহিম হাসান রেজা পূর্বকোণকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ, অনেকেই বাইরে শিশুকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন, কেউবা খেতেও বাসার বাইরে যাচ্ছে। তবে অন্তত শীতের এ মৌসুমে পার্ক কিংবা রেস্টুরেন্টে খাওয়া অথবা বাইরে না যাওয়াই উত্তম। যদিও আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এসব রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শিশুদের নিরাপদ রাখতে মায়েদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

 

 

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট