চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

১৫৮ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে পূর্বাঞ্চল রেলের জিএম

যাত্রীদের ফুল, পাথর নিক্ষেপকারীদের হুঁশিয়ারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ নভেম্বর, ২০২০ | ৫:৪৮ অপরাহ্ণ

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর। বৃটিশরা তৎকালীন ভারত উপমহাদেশ বর্তমানে বাংলাদেশের দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ দশমিক ১১ কিলোমিটার রেললাইন চালু করে। সেই থেকে শুরু বাংলাদেশের রেল যাত্রার ইতিহাস। আজ ১৫ নভেম্বর রবিবার বাংলাদেশ রেলওয়ের গৌরবোজ্জল ১৫৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সকাল ৭ টায় বেলুন উড়িয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম স্টেশনে ‘রেল দিবস-২০২০’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এসময় সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রীদের ফুলের শুভেচ্ছা জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের যে সেবা পাওয়ার প্রত্যাশা তা পূরণে আমরা বদ্ধপরিকর। এরইমধ্যে আমরা রেল সেবাকে আধুনিক করতে অনলাইনে টিকিট সেবাসহ টিকিট কালোবাজারি রোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ভবিষ্যতেও যাত্রী সেবা নিশ্চিতে আরও অনেক সেবা চালু করা হবে।’

এসময় দেশের সম্পদ রক্ষা করতে এবং যাত্রীদের সুন্দর ভ্রমণ নিশ্চিত করতে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘পাথর নিক্ষেপ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ থেকে বিরত থাকুন। অন্যথায় কঠোর আইন প্রয়োগের পাশাপাশি শাস্তি নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।’ ‘রেল দিবস-২০২০’ কার্যক্রমের উদ্বোধনীতে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ সামছ তুষার, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কামন্ডেন্ট জহিরুল ইসলাম ও বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. আনসার আলী।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাস বলছে, ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতার শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ চালু করে। শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট পর্যন্ত যে রেলপথ চালু করা হয়েছিলো, সেটাকে সেই বছরেই বর্ধিত করে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার (সাবেক নদীয়া) জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার দীর্ঘ করা হয়। তারপর ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কলকাতার শিয়ালদহ থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পশ্চিম বাংলার গেদে–বাংলাদেশের দর্শনা সীমান্ত পার হয়ে সরাসরি ট্রেন এসেছিলো বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে জগতি পর্যন্ত। ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার জন্য প্রায় ১০ বছর পর ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি জগতি রেলস্টেশন থেকে বর্তমান রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত ট্রেন চালু করা হয়। তখনকার সময় এই পথেই সহজে কলকাতা থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে কলকাতা আসা-যাওয়া করা যেত। কলকাতা থেকে মানুষ ট্রেনে করে জগতি স্টেশন পার হয়ে গোয়ালন্দ ঘাটে নামত এবং স্টিমারে পদ্মা নদী পার হয়ে ঢাকায় চলে আসত। মূলত তৎকালীন সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই অঞ্চল বেশ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আর কলকাতা-রানাঘাট রেলপথের বেশ কাছাকাছি হওয়ায় প্রথম রেল যোগাযোগ এদিক দিয়েই স্থাপন করা হয়। এরপর ১৯০৮ সালে কুষ্টিয়াতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মোহিনী মিল’, যেটা ছিলো সেই সময়ের সমগ্র এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় কাপড়ের মিল। কলকাতার সাথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকার কারণে এত বড় কাপড়ের কল এখানে চালু হতে পেরেছিলো। স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানের সময়ে জগতিতে ‘কুষ্টিয়া চিনিকল’ প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে আখ সরবরাহের কাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো এই জগতি স্টেশন। কলকাতা থেকে কুষ্টিয়ার আশপাশের জেলাগুলোতে আসা ধান, পাট, গম, আখ কিংবা অন্যান্য পণ্যসামগ্রীও খালাস হতো এই জগতি স্টেশনেই। এসব কারণেই প্রতিষ্ঠার পরেই এই অঞ্চলের মানুষের কাছে ‘জগতি স্টেশন’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন ‘কয়লা’ পুড়িয়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে ঝক ঝক শব্দে স্টিম ইঞ্জিনের (বাষ্পচালিত) রেলগাড়ি এসে এই স্টেশনে থামতো, রেলগাড়ি কেমন সেটা দেখতেও আশপাশের মানুষজনের ভিড় এখানে লেগেই থাকতো।

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট