চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

খর্ব হল মন্ত্রীর ক্ষমতা

আল-আমিন সিকদার 

৬ নভেম্বর, ২০২০ | ১:১১ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্পদশালী বিভাগ বলা হয় রেলওয়েকে। রেলের সরল লাইন দুটো এঁকেবেঁকে দেশের যত অঞ্চলে গিয়েছে তার সবখানেই অঢেল ভূ-সম্পদ রয়েছে। এককথায় ‘জমিদার’ বলা চলে রেলকে। কিন্তু বিশাল এই সম্পত্তির দেখভাল করায় যেমন রেল উদাসহীন তেমনি বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আদায় থেকে। দখল, তদবির আর প্রভাবজনিত কারণে অনেকটা কোণঠাসা রেলের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ। রাজস্ব আদায় তো দূরে থাক নানা জটিলতায় উদ্ধার হচ্ছে না রেলের নিজ সম্পত্তিও। রেলের এ সম্পত্তি রক্ষায় ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে করা হয়েছে নতুন ভূমি নীতিমালা। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে জারি হওয়া নতুন ভূমি নীতিমালায় (বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, ২০২০) লিজ (ভূমি লাইসেন্স) দেয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন খোদ রেলমন্ত্রীও। কমেছে লিজের মেয়াদ, নেই নবায়নের সুযোগও।

গেজেট সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬ এর নিয়মানুসারে রেলমন্ত্রী ক্ষমতাবলে চাইলেই যে কাউকে বাণিজ্যিক ভূমি প্রদান করতে পারতেন। কিন্তু নতুন নীতিমালায় রেলমন্ত্রী তা আর পারছেন না। যা কেবল শুধু পারবেন প্রধানমন্ত্রী। এমনকি লিজপ্রাপ্ত বাণ্যিজিক জায়গাগুলো সরকারের প্রয়োজনে নিয়ে নিতে পারবে রেল। এজন্য লিজ নেয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে করা হবে না পুনর্বাসনও। শুধু কি তাই, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া লিজ হবে না রেলের কোনো বাণিজ্যিক জমি।

তাছাড়া, কৃষিজ জমি আগে টেন্ডার ছাড়াই লিজ নিতে পারলেও এখন তা হবে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এমনকি লিজ দেয়ার আগে উল্লেখিত কৃষিজ জমির চারপাশের এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে নিলাম প্রক্রিয়ার বিষয়টি। যাতে আশেপাশের সকলেই অংশগ্রহণ করতে পারেন নিলামে। অন্যদিকে, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় ২০০৬ এর নীতিমালায় ৫ বছরের জন্য নবায়নযোগ্য লিজ দেয়া হলেও নতুন আইনে মেয়াদ দেয়া হয়েছে ৩ বছর এবং তা অনবায়নযোগ্য। এছাড়া পূর্বের আইনে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে ভূমি লিজ নিতে পারলেও নতুন আইনে তা আর থাকছে না।

অন্যদিকে কোনো সমিতি, ক্লাব, শ্রমিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের অফিস স্থাপনে দেয়া হবে না রেলভূমির লাইসেন্স। এমনকি বর্তমানে রেলের জায়গায় যেসব সমিতি, ক্লাব, শ্রমিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নামে স্থাপনা রয়েছে তাও দ্রুত উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নতুন করে কোনো শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যাবে না রেলভূমি। তবে পূর্বে যা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সেটা অক্ষত রেখে প্রতীকি মূল্য নেয়া হবে। এছাড়া অবাসিক কাজে ব্যবহারের জন্যও দেয়া হবে না রেলভূমি। গরুর হাট বসতে দেয়া হবে না রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ও রেললাইন সংলগ্ন এলাকায়।

তবে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকা-ের প্রয়োজনে ভূমি সম্পত্তি বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে বিনা নিলামে রেলভূমি গ্রহণ করতে পারবেন। যেমন, মোবাইল কোম্পানির ফাইবার লাইন, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, বাঁধ, ও রাস্তা নির্মাণের জন্য।

রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন আইনে যেমন রক্ষা হবে রেলের সম্পদ তেমন বাড়বে রাজস্ব আদায়। অন্যদিকে, প্রভাব ও তদবির বন্ধ হওয়ায় সঠিক মূল্য আদায় করতে পারবে রেল। নতুন নীতিমালায় ভূমির লিজের বিষয়ে রেলমন্ত্রীরও কোন সুপারিশ কিংবা নির্দেশ কাজে আসছে না। এটা চাইলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী দিতে পারবেন। এতে করে প্রভাব খাটানোও বন্ধ হয়ে যাবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা কংকন চাকমা পূর্বকোণকে বলেন, ‘ভূমি নীতিমালা ২০০৬ পরিবর্তন হয়েছে। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন ভূমি নীতিমালা ২০২০। এই নীতিমালায় রেলের রাজস্ব আদায় বাড়বে। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া কোন বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেয়া হবে না। এমনকি নিলামে অংশগ্রহণ না করে কেউ কৃষিজ জমিও পাবে না। জলাশয়ের লাইসেন্স প্রদান করা হবে কেবল ৩ বছরের জন্য, যা নবায়নযোগ্য নয়। এতে করে অনেকে যেমন স্বাবলম্বী হবেন তেমনি বাড়বে রেলের আয়। নতুন আইন অনুসরণ করে আমরা উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করবো’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট