চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

আসছে বর্ষা, বাড়ছে জলাবদ্ধতার শঙ্কা

ইমরান বিন ছবুর

৫ জুন, ২০২০ | ৬:০৩ অপরাহ্ণ

আসন্ন বর্ষাকে ঘিরে জলাবদ্ধতার আতঙ্কে রয়েছে নগরবাসী। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জোয়ার ও বৃষ্টির পানির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। নগরীর কিছু উঁচু এলাকায় পানি স্থায়ী না হলেও অধিকাংশ নিচু এলাকার বাসিন্দাদের পানিবন্দী হয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এসব এলাকার দোকান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিকদের প্রচুর লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এছাড়া পানিতে যান আটকে ইঞ্জিন বিকলে যানজটের সৃষ্টি হয় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। তবে নগরবাসী এবছর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কিছুটা সুফল ভোগ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
নগরীর ১৯ নং বাকলিয়ার ইসহাকেরপুল এলাকা। ব্রিজের (পুল) এক পাশের খাল পরিষ্কার থাকলে অন্যপাশ ময়লা অবর্জনায় প্রায় ভরাট হয়ে যাওয়ার অবস্থা। দেখে বোঝার উপায় নেই যে এটি একটি খাল। ঘাস ও লতাপাতায় অনেকটা সবুজ মাঠে পরিণত হয়েছে খালটি। নগরীর এসব গুরুত্বপূর্ণ খাল ও ড্রেন ভরাট হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে নগরীর নিচু এলাকায় যাতে পানি স্থায়ী না হয়, সেজন্য নগরীর ২০টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট চিহ্নিত করে কাজ করছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা।
এসব নিচু এলাকা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কন্সট্রাকশন বিগ্রেড প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী জানান, ‘নগরীর অনেক এলাকায় পানি উঠে। এরমধ্যে কিছু এলাকার পানি দ্রুত সরে যায় এবং অনেক নিচু এলাকার দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়। ফলে সেসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বাকলিয়া, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, প্রবর্তক, হালিশহর, ষোলশহর ২ নং গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, কাপাসগোলাসহ এরকম ২০টি নিচু এলাকা চিহ্নিত করে কাজ করেছি। এসব এলাকায় যাতে দীর্ঘক্ষণ পানি জমে না থাকে সেজন্য প্ল্যান করে ড্রেন নির্মাণ ও ড্রেন সম্প্রসারণের কাজ করা হয়েছে। ফলে সেসব এলাকার পানি ড্রেন থেকে দ্রুত খালে সরে যাবে। ফলে আগের মত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।’
গত বছরের তুলনায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ কমবে কিনা জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক জানান, ‘গত বছরের তুলনায় চট্টগ্রামবাসীর জলবদ্ধতার দুর্ভোগ অনেকটা কমবে। বর্ষাকালে পানি দ্রুত সরে যাওয়ার জন্য আমরা এরমধ্যে অনেক কাজ করেছি। নগরীর ৪০টি ওয়ার্ডে আমরা ড্রেনের কাজ করেছি, যা প্রায় শেষের দিকে। ২৪০ কিলোটিমার ড্রেন আমরা পরিষ্কার করছি। এছাড়া, ৫২.৮ কিলোমিটার ড্রেন সংস্কারের কাজ করছি। এরমধ্যে অনেকগুলো পুরাতন ড্রেন ভেঙে আমরা নতুন ভাবে করছি। যার ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজের অগ্রগতি আরো বেশি হতো। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে পিডিবি তাদের একটি খুঁটিও না সরানোর ফলে আমরা কাজ করতে পারিনি।’
নগরীর ৪০টি ওয়ার্ডে ড্রেনের কাজ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৪০টি ওয়ার্ডে ড্রেনের কাজ করার ফলে বৃষ্টির পানি সরাসরি খালে চলে যাবে। যা আগে ড্রেনে জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। এছাড়া, আমরা খালগুলো আগেও পরিষ্কার করেছিলাম। কিন্তু এরমধ্যে আবার কিছু কিছু ভরাট হয়ে গেছে। সেগুলো আমরা আবার পরিষ্কার করছি। যেসব জায়গাগুলোতে পানি আটকানোর মতো অবস্থা ছিল, আমরা সেসব পরিষ্কার করে দিয়েছি এবং পরিষ্কার করছি। ড্রেনের কাজ করায় আমরা কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ করে দিয়েছি। যখন পুরোদমে বর্ষা শুরু হবে আমরা যেসব জায়গার বাঁধ খুলে দিব। যাবে বাঁধের কারণে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে না পারে। আর খালগুলোতে কোন বাঁধ নেই।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ’র ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ সময় ২০২০ সালের জুন মাস। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৮ বছরের ৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে সিডিএ। এরপর ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় এবং চলতি বছরের ২ জুলাই উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়।

পূর্বকোণ/আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট