চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চাই যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন

২৩ অক্টোবর, ২০১৯ | ১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গা থেকে চট্টগ্রামের বিয়ের পদ্ধতি হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ চট্টগ্রামের বিয়ে মানেই যৌতুক। যৌতুক ছাড়া চট্টগ্রামে বিয়ে হয় না। জনসম্মুখে বরপক্ষ যৌতুক নিচ্ছে কনে পক্ষ থেকে। এখানে যৌতুক নেয়াটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যার ফলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা মায়ের কাছে, মেয়ে সন্তান যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চট্টগ্রামের যৌতুক বিভিন্ন রূপ ধারণ করছে।

বিয়ের সময় কনে পক্ষকে বর পক্ষের ৫০০/৮০০/১০০০ মানুষকে খাওয়াতে হয়। খাওয়ার ম্যানুতে থাকে চিংড়ি, গরুর মাংস, খাসির মাংস, রূপচাঁদা মাছ, ডিম, পোলাও, মুরগি, চিকেন টিক্কা, পায়েস-সহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। এসব আইটেম থেকে কিছু কম হলে শুরু হয়ে যাবে কনে পক্ষের সাথে বিতর্ক। তবে বিয়ের পূর্বে যদি আকদ হয় তখন কিন্তু প্রায় ২০০/৩০০ জন মানুষের খাবারের আয়োজন করতে হয়। বিয়ের পর শুরু হয় বিভিন্ন পর্বের দাওয়াত নতুন জামাই বিয়ের পর শ^শুর বাড়িতে যাবে তবে একা যেতে পারবে না, নতুন জামাইকে ৮০/১০০/১৫০ জনের বিশাল বহর নিয়ে শ^শুর বাড়িতে যেতে হবে। এখানে কিন্তু খাবারের আইটেম রাখতে হবে বিয়ের আইটেমের চেয়ে বেশি।

এবার নতুন জামাইয়ের পর্ব শেষ হলে কিছুদিন পর শুরু হবে শ^শুর ও শাশুড়ি পর্ব। শাশুড়িও তাদের বিশাল বহর নিয়ে এসে খেয়ে যাবে এবং কিছু খাবার সাথে নিয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে চট্টগ্রামের ভাষায় ‘বছরি জিনিস’ দেয়ার পালা। আমের মৌসুমে দিতে হয় ৫০-৬০ কেজি আম, আনারস, কাঁঠালসহ নানা রকমের ফল। রমজানের সময় দিতে হয় ইফতারি সহ আরো অনেক আইটেম। ঈদের সময় ছেলের পরিবার, বোনের স্বামীসহ সবাইকে শপিং করে দিতে হয়। কুরবান আসলে দিতে হবে গরু, গরু রান্না করার জন্য তৈল, মসাল্লা, পিঁয়াজ ইত্যাদি। মহরম আসলে দিতে হবে ১৫/১৬টি মুরগি ও ৮/১০ কেজি গরুর মাংস রান্না করে। শীতকাল দিতে হবে কয়েকশ শীতের পিঠা ইত্যাদি। যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর। এছাড়াও চট্টগ্রামে বিয়ের পূর্বেই বর পক্ষের বাড়িতে ফার্নিচার পৌঁছে দিতে হয়। এছাড়া কনে পক্ষের অতিথিদের দেয়া উপহারের বর পক্ষকে দিয়ে দিতে হয়। সমাজ থেকে যদি এই প্রথা দূর করা না যায় তাহলে ধ্বংস অনিবার্য। সুতরাং যৌতুকের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলুন। আমরা সচেতন হলে চট্টগ্রামকে যৌতুকমুক্ত করতে পারব ইনশাআল্লাহ।

ফাহমিদা আক্তার
চট্টগ্রাম।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট