
আধুনিক সংবাদপত্রের পথিকৃৎ দৈনিক পূর্বকোণের প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজসেবায় একুশে পদকপ্রাপ্ত (মরণোত্তর) মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১২টায় তিনি পবিত্র মক্কা নগরীর জিয়াদ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ১২ সেপ্টেম্বর ফজরের নামাজের পর মসজিদুল হারামে নামাজে জানাজাশেষে সকাল ৯টায় মক্কার সরায়ে মকবরায় তাঁকে দাফন করা হয়।
চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী পবিত্র ওমরা পালনের জন্য ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর মক্কায় যান। মক্কায় পৌঁছার পরদিন সকালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিকেলে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে জিয়াদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
১৯২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাউজানের ঢেউয়া হাজিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই গ্রামীণ ধুলামাটি-প্রকৃতিপ্রভা আকর্ষণ করেছে মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীকে। প্রকৃতির কাছে তাঁর জীবনের সহজপাঠ বলে কোমল, সৎ ও উদ্যমী ছিলেন তিনি।
মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে সংবাদপত্র শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদান রাখেন। ১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি আধুনিক সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বকোণ প্রকাশ করেন। পূর্বকোণ তাঁকে নিয়ে আসে কর্মজগতের এক নতুন অধ্যায়ে। ১৯৯২ সাল থেকেই ডেইরি ও পোল্ট্রি শিল্পের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ডেইরি ও পোল্ট্রি ফার্ম এসোসিয়েশনের আমৃত্যু সভাপতিও ছিলেন তিনি। তাঁর কর্মউদ্যোগের ফলে চট্টগ্রামে সুফল পায় প্রায় চারশ খামার। চট্টগ্রামে প্রথম গবাদি পশু মেলারও উদ্যোক্তা তিনি। ডেইরি শিল্পের বিকাশে চট্টগ্রামে প্রথম তাঁর নেতৃত্বে গরু নিয়ে মিছিল হয়। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আগমনস্থল নিজ বাড়িতে কবির স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা, নজরুল মেলা এবং নজরুল পাঠাগারও স্থাপন করেন।
বিআইটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ধারাবাহিক সংগ্রামেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি সবসময় চট্টগ্রামের উন্নয়নে সোচ্চার ছিলেন। কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে তিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজ ও পরবর্তীতে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এছাড়া তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাঁকে একুশে পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন।
পূর্বকোণ/আরআর/পারভেজ