মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে রামুর গর্জনিয়া বাজারস্থ পশু বিক্রির হাটে বানের স্রোতের মতো প্রবেশ করছে চোরাইপথে আসা গরু ও মহিষ। এসব গরু-মহিষ ‘বৈধ’ করতে ৫২ খামারির কাগজ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে রামুর কচ্ছপিয়ার গর্জনিয়া পশু বিক্রির হাট। সর্বশেষ বাজারের দিন বড়, ছোট ও মাঝারি মিলিয়ে ২০০টির মতো গরু-মহিষ উঠেছে এ হাটে। এর মধ্যে বেশিরভাগই মিয়ানমারের চোরাই গরু-মহিষ। জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম সীমান্তে রাতের আঁধারে প্রতিদিন বাংলাদেশে ঢুকছে মিয়ানমারের শত শত গরু।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চোরাই গরু-মহিষের কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ডেইরি ফার্ম তথা খামারি পরিচধারী কচ্চপিয়া হাজিপাড়ার নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, গর্জনিয়া হাইস্কুল পাড়ার আমান উল্লাহ, জাফর আলম, হাজির পাড়ার আবু ঈসা, বড় জামছড়ির আব্দুল্লাহ, ছুরুত আলী, শামসুল আলম, আব্দুল খালেক ও আব্দুস সালামসহ আরও বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে নজরুল, আলী এবং আমান উল্লাহর বিরুদ্ধে মাদক পাচার ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, এই অবৈধ গরু পাচারকে ঘিরে গত কয়েক মাসে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে চোরা কারবারিদের গোলাগুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু চোরাচালান বন্ধ করতে পারছে না সরকারি সংস্থাগুলো। সীমান্ত ও স্থানীয় সূত্র বলছে, গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে এপারে কয়েক লাখ চোরাই গরু ঢুকেছে। এপ্রিল মে মাসে ঢুকেছে ৭০ হাজারের বেশি। জুন মাসে ঢুকেছে ৫০ হাজারের বেশি গরু-মহিষ। আনুপাতিক হারে একইভাবে জুলাই এবং আগস্ট মাসেও বানের স্রোতের মতো ঢুকেছে গরু-মহিষ।
সম্প্রতিক বাজারের দিন গর্জনিয়া হাটে মিয়ানমারের ১৩টি মাঝারি গরু বিক্রি করেন মৌলভী কাটার বাসিন্দা মো. ফরিদ। এসব গরু চোরাকারবারিদের কাছ থেকে কম দামে কিনে বাজারে বিক্রি করতে এসেছেন বলে জানান তিনি। গর্জনিয়া বাজার ইজারাদার (একাংশ) ইউপি সদস্য শাকিল বলেন, এই বাজারে প্রায় সব গরু-মহিষই মিয়ানমারের।
কচ্ছপিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমান জানান, চোরাচালানের গরু বাজারে ঢুকছে এটা সত্য। কিন্ত প্রশাসন যদি সীমান্তে চোরাচালান না ঠেকায় তাহলে এর দায় কে নিবে? তবে ইউপি চেয়ারম্যান আবু নোমানের ভাতিজা নজরুল এই অঞ্চলের শীর্ষ চোরাকারবারি এবং মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাত। তার নেতৃত্বেই এই সীমান্তে অবৈধ চোরাচালান বাণিজ্য নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার :
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে একটি করিডোর দিয়ে গরু আমদানি হলে সরকার রাজস্ব পায় ৫০০ টাকা। তবে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে পশু আসার কারণে গত কয়েক বছরে এক টাকাও রাজস্ব আয় হয়নি।
বিপাকে খামারিরা :
কক্সবাজার শহরসহ জেলার ৯টি উপজেলায় গেলো কোরবানির ঈদে পশু বিক্রির হাট বসেছে ৯৪টি। সব কটি হাটেই চোরাই গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানা গেছে। কচ্ছপিয়ার প্রসিদ্ধ খামারি রশিদ জানান, চোরাই গরুর কারণে তিনি ন্যায্যমূল্যে গরু বিক্রি করতে পারেননি। আগে এখানে ৫০/৬০ টি গরু ছিল। এখন আছে মাত্র ৭টি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষন কান্তি দাস জানান, গর্জনিয়া বাজারের অনিয়মের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে বিজিবি তৎপরতা বৃদ্ধির কথাও জানান তিনি।
পূর্বকোণ/ইব