সীতাকুন্ডে প্রাকৃতিক ঝর্ণা ও সমুদ্রের মোহনীয় রুপদর্শনে এসে একের পর এক পর্যটকের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটছে। শুধু গত দেড় বছরেই এখানে এসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৮ জন পর্যটক। এদের বেশিরভাগই ছিলেন এডভেঞ্চার প্রিয় ছাত্র। তারা কখনো ঝর্ণা দেখতে গিয়ে পানিতে নেমে ডুবে মারা গেছেন, আবার কখনো জোয়ারের সময় সাগরে নেমে ডুবে মারা গেছেন। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মোহনীয় টানের আড়ালে একপ্রকার মৃত্যুর হাতছানি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিহতদের স্বজনদের কেউ কেউ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটকদের অসচেতনা এবং অতি উৎসাহের কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। সতর্ক না হলে ভবিষ্যতেআরো অঘটন ঘটবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ড উপজেলাটিকে বলা হয় প্রকৃতির লীলাভূমি। ৩৭ কি.মি. দৈর্ঘ্যরে এ উপজেলার পূর্ব দিকে রয়েছে সুবিশাল পর্বতমালা আর পশ্চিমে দীর্ঘ সমুদ্র তট। প্রকৃতিগতভাবে এই পর্বতের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা। আর সাগর পাড়ে উপকূলীয় সবুজ বনের অপরুপ দৃশ্য। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সারাবছর দর্শনার্থী আসেন এসব ঝর্ণা ও সমুদ্র দর্শনে। আর এতে মাঝেমধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক কিছু অঘটন।
স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে সীতাকুন্ডের পাহাড় ও সমুদ্রে এসে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২৪ইং এর এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেড় বছর সময়ে প্রাণহারিয়েছেন ৮ জন পর্যটক। এদের মধ্যে ৭ জনই ছাত্র এবং একজন চাকুরিজীবী ছিলেন।
সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর সিনিয়র স্টেশান অফিসার মো. নুরুল আলম দুলাল জানান, এখানে বেড়াতে এসে প্রায়ই দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে পর্যটকরা। পাহাড়ে ঝর্ণা দেখতে এসে পানিতে নেমে এবং সমুদ্রে এসে ডুবে গিয়ে এসব ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, গত এক বছরে শুধু ঝর্ণা দেখতে এসে মারা গেছেন ৫ পর্যটক, এর আগে পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন আরো তিন জন দর্শনার্থী।
উপজেলার বারৈয়াঢালার ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেহান উদ্দিন বলেন, লবণাক্ষ সহস্রধারা দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসছেন। বর্ষায় তারা চলাচল করেন মৎস্য প্রজেক্টে থাকা নৌকা দিয়ে। গ্রীষ্মে শুকনো পথেই যেতে পারে। কিন্তু এই দুই মৌসুমেই দেখছি পর্যটকরা মারা যাচ্ছে নিজের অসচেতনতায়। তারা কৌতূহলবশত নেমে পড়ছেন মৎস্য প্রজেক্টে। সাঁতার কাটতে নেমে গভীর পানির দিকে চলে গিয়ে নার্ভাস হয়ে ডুবে যান অনেকে। পানিতে না নামলে এ ঘটনাগুলো ঘটত না।
বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী জাহাঙ্গীর বলেন, এখানে দুর্গম পাহাড়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটি ঝর্ণা আছে। আমরাও যেতে ভয় পাই। কিন্তু এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকরা কোন বাধা না শুনে সেই পিচ্ছিল ঝর্ণায় উঠেন। অল্প দিন আগেও একজন পড়ে মারা যান। এছাড়া এখানে যে সমুদ্র সৈকত আছে তাতে বালি নেই। খুব আঠালো এই মাটিতে জোয়ারের সময় যারা নামেন অনেকেই কাদায় আটকে মারা যান। তবুও তারা এসে উপকূলে না থেকে সাগরে নেমে পড়েন বলেই এত দুর্ঘটনা ঘটে। একটু সতর্ক হয়ে চলছে প্রাণহানি এড়ানো যেত।
পূর্বকোণ/এসএ