চট্টগ্রাম শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪

সর্বশেষ:

৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সুনামি তৈরি করতে হবে: আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ | ৮:৩৬ অপরাহ্ণ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির যে রোডমার্চ সেটার মূল কারণ হচ্ছে এক দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে। এক দফা হচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আমাদের রোডমার্চের উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই। এটা নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত বাড়ি ফিরে যাব না কেউ। ভোট চোরদের দিন শেষ, জনগণের বাংলাদেশ। ভোট চোরদের বিদায় করতে ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে সুনামি তৈরি করতে হবে। শেখ হাসিনা বিদায় হও, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভোট চোরদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। এদের এবার ছাড় দেওয়া যাবে না।

 

তিনি বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর কাজীর দেউড়ি নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে সরকারের পদত্যাগ ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির একদফা দাবিতে আগামী ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে ফেনী, মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোড় মার্চ কর্মসূচি সফল করার লক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় দলনেতা মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন।

 

আমীর খসরু বলেন, রোডমার্চে কুমিল্লায় একটি বড় জনসভা হবে ও চট্টগ্রামে একটি হবে। আর মাঝখানে যেগুলো হবে সেগুলো পথসভা। আমাদের পথসভাগুলো জনসভার মতই। আমরা বগুড়া থেকে যখন যাচ্ছিলাম পথসভাগুলো জনসভায় রুপ নিয়েছিল। রাস্তাঘাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। আশেপাশে দোকান পাট, মানুষের বাড়িঘর এমন অবস্থা ওগুলো জনসভা থেকে বেশি হয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে চট্টগ্রামে ঝড় তুলতে হবে। ৫ অক্টোবর হবে সুনামি। চট্টগ্রাম আগেও ঝড় তুলেছে। এবারও ঝড় তুলতে পারবে।

 

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। উনাকে বিনা বিচারে, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দিয়ে ভোট চুরি প্রকল্পের অংশ হিসেবে জেলে নিয়ে গিয়েছিল। এখন বাড়িতে আটকে রেখেছে। উনার অসুস্থতার কারণ সম্বন্ধে অনেক সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের জেলখানায় বর্তমানে কি হচ্ছে সে ব্যাপারে জনগণের সন্দেহ জেগেছে। বেগম খালেদা জিয়ার শরীর কি পর্যায়ে এভাবে এসেছে এটা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। অনেকেই জেলখানায় মারা যাচ্ছে। অনেকে জেলখানা থেকে বের হয়ে মারা যাচ্ছে। তাহলে বাংলাদেশের জেলের ভেতরে কি হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলো জনমনে এসেছে আজ।

 

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই গুরুতর অসুস্থতার কারণে যদি কোনো কিছু হয় এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট রেজিমকে বাংলাদেশের জনগণের সম্মুখীন হতে হবে। কেউ রেহাই পাবে না। খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর পেছনে যারা যারা শুরু থেকে জড়িত ছিল, জেলে থাকার সময়ে যারা জড়িত ছিল এদেশের মানুষ প্রত্যেকটির হিসেব নিকাষ বুঝিয়ে দেবে। বেগম জিয়ার জেলে যাওয়ার পর থেকে প্রত্যেক ঘন্টা, দিন, সপ্তাহ ও মাস আপনাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। তিনি কি অবস্থায় ছিল, উনার শরীর কি কারণে এই অবস্থায় এসে দাঁড়াল এটাও আপনাদেরকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

 

আমীর খসরু বলেন, বিএনপির এক দফা হচ্ছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নির্বাচিত সংসদ হবে, সরকার হবে। যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে, দায়বদ্ধ থাকবে।

 

প্রধান বক্তার বক্তব্যে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মুখে এখন একটাই স্লোগান। এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি। এই স্লোগান এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে। আমাদের এক দফার আন্দোলন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ও তারেক জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা আন্দোলনে এগিয়ে যাব।

 

জনাব নোমান বলেন, নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে হবে। শেষপর্যন্ত থাকতে হবে। শেষপর্যন্ত লড়তে হবে। আমরা প্রয়োজনে প্রতিরোধ করব। জীবন দিয়ে হলেও এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব। দুর্নীতিবাজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করব।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, আওয়ামীগ শুধু নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করেনি, দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়েছে। কিন্তু আজকে সারাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত। বাংলাদেশ এখন চরম সংকটে পতিত হয়েছে। এ সংকট থেকে উদ্ধার করতে হলে অবৈধ ফ্যাসিষ্ট সরকারের পতন ঘটাতে হবে।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, সরকার দেশের গণতান্ত্রকি ব্যবস্থাকে হত্যা করে দেশবাসীকে উন্নয়নের কথা বলছে। মূলত তারা উন্নয়নের নামে দুর্নীতি লুটপাটে ব্যস্ত। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আজকে মানুষের ভোটাধিকার নাই। বিগত দুটি নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারিনি। আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকার আবার নতুন খেলা শুরু করেছে।

 

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অস্তিত্বের সংকট চলছে। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংস করেছে। প্রতিনিয়ত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নষ্ট করছে। নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। জনগণ নির্বাচন বিমুখ হয়ে গেছে।

 

এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এনি, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় বিএনপির উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক মিসেস ম্যা মা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুন অর রশিদ, রেহেনা আকতার রানু, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহাজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, ফেনি জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি দীপেন তালুকদার দিপু, লক্ষীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাবুদ্দীন সাবু, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আবদুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন মহানগর ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকগণ।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট