ছোট ছোট গাছে ঝুলছে আম, লেবু, ডালিম, মাল্টা। সবুজ পাতার ভিড়ে উঁকি দিচ্ছে রঙিন গোলাপ, জবা, রঙ্গন, জুঁই। নজর কাড়ছে লাখ টাকার বট, তেতুল, ফাইকাসের বনসাই। মিলছে থানকুনি, অর্জুন কিংবা মেহগনি, সেগুনও। এমন শত প্রজাতির চারা, গাছের মেলা বসেছে নগরীর সিআরবি এলাকার শিরীষতলায়।
জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ ১৫ দিনব্যাপী এই বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছে। গত ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এবারের বৃক্ষমেলায় ৭০টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলে নার্সারি মালিকেরা ফলদ, বনজ, ওষুধি এবং সৌখিন জাতের ৩০০ প্রজাতির চারা, গাছ এনেছেন। মাত্র ১০ থেকে হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছে এসব চারা। তবে বনসাই কিনতে গুণতে হচ্ছে ১০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ।
গতকাল শুক্রবার বিকালে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বৃক্ষপ্রেমী মানুষের ঢল নামে শিরীষতলায়। ফলদ, বনজ, ওষুধি গাছের পাশাপাশি দেশীয় ফল, সবজি এবং ঘর সাজানোর সৌখিন গাছ কিনতে স্টলগুলোতে ভিড় করেন অনেকেই। তাদেরই একজন আইস ফ্যাক্টরি রোড এলাকা থেকে আসা গৃহিনী মিমি আক্তার। ফতেয়াবাদ নার্সারির স্টল থেকে লাল কাঁঠালের ২টি চারা এবং ঘর সাজানোর ২টি মানি প্ল্যান্ট কিনেন তিনি।
মিমি পূর্বকোণকে বলে, ইউটিউবে লাল কাঁঠাল দেখেছি। কিন্তু অনেক খুঁজেও চারা পাইনি। এখানে পাওয়াতে দুটি কিনেছি।
লাল কাঁঠালের বিশেষত্ব নিয়ে ফতেয়াবাদ নার্সারি স্টলের বিক্রয়কর্মী রিপন পূর্বকোণকে বলেন, সাধারণ কাঁঠাল দেখতে হলুদ হলেও এটি লাল রঙের। ব্যতিক্রমী হওয়ায় অনেকেই চারা কিনছেন। মাত্র দুই বছরে চারা থেকে কাঁঠাল পাওয়া সম্ভব। একেকটি গাছে ২০-২৫টি কাঁঠাল ধরে। স্বাদও মিষ্টি।
বট, তেতুল, রেইন ট্রি, খৈয়া বালা, হিজলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ২৫টি বনসাই নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ছাদ বাগানে জাতীয় পুরস্কার পাওয়া বনসাই গবেষক এমজি জাকারিয়া। তিনি পূর্বকোণকে বলেন, ৩০ বছর ধরে বনসাই নিয়ে কাজ করছি। এই মুহূর্তে সংগ্রহে প্রায় ৩০০টি বনসাই রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ২৫টি বনসাই নিয়ে ‘বনসাই বাড়ি’ স্টল দিয়েছি।
তিনি বলেন, লাখ টাকা দামের ৩০ বছর বয়সী বট গাছের বনসাই দেখতে দর্শনার্থীরা বেশি ভিড় করছেন। দেড় ফুট উচ্চতার এই বনসাইটি ‘ইন্ডোর প্লান্ট’ না হওয়ায় এটি ঘরে ৩ দিনের বেশি রাখা যাবে না। আলো, বাতাসে রাখতে হবে। এই মুহূর্তে এই বনসাইয়ে ১৫টি ডাল আছে। পানি পেলেই নতুন নতুন পাতা জন্মে। এই বনসাই থেকে ফুলও পাওয়া গেছে।
শত প্রজাতির গাছ ও চারা বিক্রির পাশাপাশি মেলায় বাগান-সম্পর্কিত তথ্যও প্রদান করছেন দোকানিরা। অনেকেই চারা কেনার পাশাপাশি জেনে নিচ্ছেন পরিচর্যার নিয়ম। এছাড়া নানা প্রকারের জৈব সার, ওষুধ, সুসজ্জিত টবও মিলছে কয়েকটি স্টলে। মিলছে সুন্দরবনের খাঁটি মধুও। বৃক্ষমেলায় নগরদোলা, খাবারের স্টলগুলোতেও ভিড় ছিল দর্শনার্থীদের।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম কায়চার পূর্বকোণকে বলেন, মানুষকে পরিবেশের প্রতি যত্নশীল ও সচেতন করতে বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছি। এবারের মেলায় ৭০টি স্টল রয়েছে। এসব স্টলে ফলদ, বনজ, ওষুধি এবং সৌখিন জাতের ৩০০ প্রজাতির চারা এনেছেন বলে নার্সারি মালিকেরা আমাদের জানিয়েছেন। ভালো সাড়া পাচ্ছি আমরা।
পূর্বকোণ/মাহমুদ