চট্টগ্রাম-১০ আসনের ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৩০ জুলাই (রবিবার) এ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের দিন নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হবে। আজ (শুক্রবার) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।
বিএনপিবিহীন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় কোনো ধরনের উত্তাপ ছিল না। তবে বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠানের পর লালখান বাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠে রাজনীতি। এর রেশ ধরে ভাঙচুর করা হয় বিএনপি নগর কার্যালয়। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়ালেও ভোটের মাঠ ছিল নিরুত্তাপ।
রিটার্নিং অফিসার ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভোটের পরিবেশও ভালো রয়েছে। ভোটারদের নিরাপত্তা ও ভোটদানের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে আইনশৃঙ্কলা রক্ষাকারীর বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে।’
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ পাঁচ জন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু (নৌকা), জাতীয় পার্টি প্রার্থী মো. সামসুল আলম (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) প্রার্থী রশিদ মিয়া (ছড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট)।
১৩ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। আজ (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। কোনো অঘটন ছাড়াই শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু ছাড়া অন্য প্রার্থীদের প্রচারণা তেমন চোখে পড়েনি। পোস্টার-ব্যানারও সাঁটানো হয়নি। প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছে আওয়ামী লীগ। ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দায়সারাগোছের প্রচারণায় ভোটারদের মন ভরাতে পারেনি প্রার্থীরা। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, নির্বাচনে পুলিশ, আনসার, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন থাকবে। ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, দুইজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। চারটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ৮টি মোবাইল টিম, র্যাবের চারটি টিম, চার প্লাটুন বিজিবি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবে। এছাড়াও নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নির্বাচন কমিশনের ২৪ জনের একটি টিম মাঠে থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে ১৬ থেকে ১৮ জনের সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ কেন্দ্রে বিভিন্ন বাহিনীর ১৬-১৭ জন। এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে।
এদিকে, আজ (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ৩১ জুলাই পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। ২৯ জুলাই রাত ১২টা থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ট্রাক, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ইসিবাইক চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে প্রার্থী, প্রার্থীর সমর্থক, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জরুরি সেবা প্রদানকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে।
রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন গঠিত। ভোটার সংখ্যা চার লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৩ জন। ভোটকেন্দ্র ১৫৬ টি। ভোটকক্ষ ১২৫১টি। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, প্রতি ভোটকক্ষে একজন করে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুজন করে পোলিং অফিসার ভোটগ্রহণে দায়িত্ব পালন করবেন। সেই হিসাবে তিন হাজার নয় শ ১২ জন কর্মকর্তা ভোটে দায়িত্ব পালন করবেন। এরসঙ্গে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ৪ জুন ওই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ডা. আফছারুল আমীন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে টানা তিনবার (২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সাল) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পূর্বকোণ/মাহমুদ