একের পর এক নাটকীয় ঘটনায় মোড় নিচ্ছে ঢাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ। বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশের জন্য নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য আগে থেকে অনুমতি চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিল দলটি। কিন্তু ডিএমপির পক্ষ থেকে বিএনপিকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপি সেখানে সমাবেশে করতে চায় না। বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ স্থগিত করে শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
গতকাল রাত ৯টায় গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে, আওয়ামী লীগও বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত সমাবেশ একদিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে তাদের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলা মাঠটি সমাবেশের জন্য উপযোগী নয়। মাঠটিকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য একদিন সময় প্রয়োজন। এ জন্য শান্তি সমাবেশ একদিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই শুক্রবার করা হয়েছে।
বড় দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের দৃষ্টি এখন ঢাকায়। বিএনপির মহাসমাবেশ এবং আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশকে রাজনৈতিক উত্তাপের কারণে এ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সবারই প্রশ্ন দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার কোন অঘটন ঘটছে কিনা। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা গেছে রাজনীতি সচেতনদের মধ্যে।
এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে দলের ১৫ সহস্রাধিক নেতাকর্মী ঢাকায় গেছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির নেতারা। বাধার আশঙ্কায় মহাসমাবেশে যোগ দিতে এবার আগেভাগে ঢাকায় গেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফার আন্দোলনে সাড়া ফেলতে এ কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ করা হবে নেতারা এমন ঘোষণা দিলেও বিএনপি সূত্রের খবর, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে টানা অবস্থানের চিন্তা নেই দলটির।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও দলের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঢাকায় মহাসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। সারাদেশ থেকেও দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও ঢাকায় আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ৭ উপজেলা ও ৯ পৌরসভা থেকে প্রায় ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। সমাবেশের পর তারা স্ব-স্ব এলাকায় ফিরবেন।’
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক পূর্বকোণকে বলেন, ‘ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দিতে মহানগরের ১৫ থানা ও ৪৩ সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। অনেকে বাধার আশঙ্কায় আগেভাগে ঢাকায় চলে এসেছেন।’
দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, ‘মহাসমাবেশে যোগ দিতে দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলা ও ৬ পৌরসভা থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় এসেছেন। সমাবেশকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।’
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বিএনপি জেলা ও গ্রামীণ এলাকায় অতীতে শক্ত অবস্থান নিতে পারলেও ঢাকায় আন্দোলন জমাতে না পারায় দাবি আদায় করতে পারেনি। বিএনপির সাম্প্রতিক তৎপরতায় স্পষ্ট, নির্বাচনের বছরে দলটির লক্ষ্য রাজধানীর রাজপথে শক্তভাবে অবস্থান নেওয়া। এবারের আন্দোলন অস্তিত্ব রক্ষার। এক দফা দাবি আদায়ে নেতাকর্মীরা ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। মহাসমাবেশ থেকে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা হবে। তা বাস্তবায়নে ঢাকা মহানগর বিএনপি প্রধান ভূমিকা পালন করবে। তাদের সহযোগিতা করতে প্রতিটি জেলার নেতাকর্মীর প্রতি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি সফল করতে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। মহাসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে পাল্টা শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। তবে বায়তুল মোকাররমে সমাবেশের অনুমতি পায়নি আওয়ামী লীগের ৩ সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্য মেলা মাঠে তাদের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে ঢাকা বিভাগের সব জেলা থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে।
পূর্বকোণ/মাহমুদ