বহদ্দারহাট মোড়ের চারদিকে শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর পোস্টার-ব্যানার। একইভাবে মুরাদপুর, ২নং গেট ষোলশহর ও জিইসি মোড় এলাকায় সড়ক ও অলি-গলিতেও চোখে পড়ে আ. লীগ প্রার্থীর পোস্টার-ব্যানার। অন্য প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানার চোখে পড়েনি। ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচারণায়ও সরব রয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্য প্রার্থীদের যেন ঢিলেঢালা ও গা-ছাড়াভাব। প্রচারে ঢিলেমির কারণে ভোটারদের মন গলানো ও ভোটকেন্দ্রমুখী করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রার্থীদের।
তৃণমূল বিএনপি মনোনীত প্রার্থী দীপক কুমার পালিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সোনালী আঁশ প্রতীকে। তিনি জাতীয় স্বাধীনতা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। দলটির নিবন্ধন না থাকায় তৃণমূল বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করছেন। দীপক কুমার পালিত বলেন, বৃষ্টির আশঙ্কায় এখনো পোস্টার লাগাননি। তবে ব্যানার লাগিয়েছেন।
গতকাল লালখান বাজার ও মতিঝর্ণা এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন দীপক কুমার পালিত। তিনি দাবি করেন, ‘কৌশলে প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। যাদের নিয়ে মাঠে যাই, তাদের পরিবার-পরিজনকে ভয়-ভীতি দেখানো হয়। পরের দিন তাকে আর পাই না। অনেকটা একা করার মতো মানসিকভাবে চাপ দিচ্ছে। তাই কয়েকজন নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছি।’
তিনি বলেন, গতকালও লালখান বাজার ও মতিঝর্ণা এলাকায় প্রচারণা চালানোর সময় মহিলাদের একটি দল স্লোগান দিয়ে আমাদের কাছাকাছি অবস্থান নেয়। সংঘর্ষ এড়াতে আমরা অন্য দিকে ফিরে যাই।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) প্রার্থী রশিদ মিয়া লড়ছেন ছড়ি মার্কা নিয়ে। সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে এসে নির্বাচন করছেন তিনি। তিনি গতকাল হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, অসুস্থবোধ করায় হোটেলে ফিরে এসেছি।
তিনি বলেন, এই শহরের মানুষ খুবই সচেতন। পোস্টার-ব্যানার না দিলেও ভোটাররা তাদের উন্নয়নের স্বার্থে প্রার্থী খুঁজে নেবে। তাই দু-একজন নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি। তবে দলের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘দেখে-শুনে প্রচারণা চালাতে হচ্ছে। পোস্টার-ব্যানারের চেয়ে লিফলেটের উপর জোর দিয়েছি। লিফলেট ঘরে ঘরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। মসজিদে মসজিদে যাচ্ছি। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে পোস্টার-ব্যানার লাগানো হবে।’
চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সরব ছিল আওয়ামী লীগ। প্রতীক বরাদ্দের আগ থেকে কৌশলে প্রচারে মাঠে ছিল আ. লীগ প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণায় আরও সরব হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরব থাকলেও অন্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চোখে পড়ছে না। বিচ্ছিন্নভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন অন্য প্রার্থীরা। ঢিলেঢালা প্রচারে ভোটারদের মন গলানো এবং কেন্দ্রমুখী করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, হালিশহর ও ডবলমুরিং) আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু (নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. সামসুল আলম (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী দীপক কুমার পালিত (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) প্রার্থী রশিদ মিয়া (ছড়ি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া (রকেট)।
পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্য দলগুলোর কার্যক্রম নেই চট্টগ্রামে। দলীয় কর্মী-সমর্থক না থাকায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেকটা নীরবে।
গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু ২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে প্রচারণা ও গণসংযোগ করেছেন। প্রচারণায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীদের। তিনি বলেছেন, ভোটারদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য উৎসাহ ও প্রেরণা দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সামসুল আলম গতকাল হালিশহর ও সাগরিকা এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়েছেন নেতাকর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এয়াকুব চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন নগর জাপার সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু জাফর মাহমুদ কামাল, সগির আহমদ সোহেল, মহিলা পার্টির সুলতানা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম রেজা, এনামুল হক বেলাল, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
আগামী ৩০ জুলাই চট্টগ্রাম-১০ (পাহাড়তলী, হালিশহর ও ডবলমুরিং) আসনে ভোটগ্রহণ হবে। গত ২ জুন চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন মারা যান।
পূর্বকোণ/মাহমুদ