চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘোষণার এক বছরেও চালু হয়নি পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল

সারোয়ার আহমদ

১৯ জুন, ২০২৩ | ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ

২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল বন্দর দিবসের অনুষ্ঠানে তৎকালীন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান ঘোষণা করেছিলেন জুলাই (২০২২ সাল) মাসে চালু হবে বহুল প্রতীক্ষিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি)। সেই লক্ষ্যে জুনেই তোড়জোর করে সব রকম অবকাঠামোর কাজ শেষ করে প্রস্তুত করা হয়েছিল এই টার্মিনালটি। তবে গত এক বছরেও সেটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আর হয়নি। অবকাঠামো নির্মাণের প্রায় এক বছর পার হতে চললেও এখনো সেই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পুরোদমে চালু করা যায়নি।

 

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে এই পিসিটি। অনেক দেশ তাতে আগ্রহ দেখালেও গত ২০২২ সালের ২৮ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দা ইসলামিক বন্দরের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালকেই অপারেটর হিসেবে বাছাই করে তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৮ আগস্ট বিদেশি ওই প্রতিষ্ঠানটি তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পিসিটির কাজ পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করে। তবে তাদের সাথে আর্থিক লেনদেন কিভাবে হবে তা নির্ধারণ করতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ওয়ার্ড ব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে (আইএফসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই আগস্ট মাসেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ ‘পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রস্তুতকরণ, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ’ পিপিপি প্রজেক্টের জন্য আইএফসির সঙ্গে ‘ট্রানজেকশন এডভাইজার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট’ চুক্তি স্বাক্ষর করে। প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের সাথে বৈঠক করে একটি রিপোর্টও জমা দেয়। যা বর্তমানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন রয়েছে। এই বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিতে গিয়েই এক বছর পার হয়ে গেল। তবু পুরোদমে প্রস্তুত থাকা পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি চালু করা যায় নি।

 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম পূর্বকোণকে বলেন, একটি কনটেইনার টার্মিনাল পুরোপুরি প্রস্তুত। যেখানে একসাথে তিনটি জাহাজ ভেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এক বছর ধরে এটি পুরোদমে চালু না হওয়া দুঃখজনক। গত এক বছরে এখানে অনেক জাহাজ ভিড়তে পারতো। দ্রুত পণ্য খালাস হতে পারতো। এতে ব্যবসায়ীদের অর্থের সাশ্রয় হতো। কিন্তু তা হয়নি।

 

একই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ পূর্বকোণকে বলেন, আমরা বন্দরকে একাধিকবার লিখিতভাবে বলেছিলাম পিসিটি বিদেশি অপারেটর দিয়ে চালু হওয়া পর্যন্ত যাতে বন্দরের উদ্যোগে সেখানে জাহাজ ভেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। এখানে ক্রেনযুক্ত জাহাজ ভিড়িয়ে সহজেই পণ্য খালাস করা যেত। বিশেষ করে ডিরেক্ট ডেলিভারি কার্গো খালাস অনেক সহজ হতো। গত এক বছরে এই সুযোগটা বন্দর কাজে লাগাতে পারেনি। তাতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বন্দরেরও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

 

উল্লেখ্য, ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পিসিটি নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর। ৩২ একর জায়গায় নির্মাণ হওয়া পিসিটিতে বছরে প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা যাবে। একসঙ্গে ভেড়ানো যাবে চারটি জাহাজ।

 

সমুদ্রপথে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়ে থাকে। বর্তমানে এ বন্দরে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চট্টগ্রাম কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নামে তিনটি টার্মিনালে ১৯টি জেটি রয়েছে। পতেঙ্গা টার্মিনাল চালু হলে জেটির সংখ্যা দাঁড়াবে ২৩টিতে। বর্তমান বন্দরে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফট ও ১৯০ মিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভিড়তে পারে। পিসিটিতে সাড়ে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজও ভিড়তে পারবে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১৩ জুন প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদনের পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। ওই সময়ে কাজ শেষ হয় ৪৫ ভাগ। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলো বন্দর। এ সময়ে কাজ শেষ হয় ৭০ ভাগ। ফলে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় দফায় ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত এক বছর সময় বাড়ানো হয়।

 

ওই মেয়াদে প্রকল্পের অবকাঠামোর পুরো কাজ শেষ করে জাহাজ ভেড়ানোর উপযোগী হলেও পিসিটির কোন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। তবে এরই মধ্যে সেখানে সরকারি আমদানিকৃত চাল খালাস করা হয়েছে। এছাড়া মেঘনা গ্রুপের নতুন একটি জাহাজ পিসিটিতে ভিড়িয়ে উদ্বোধন করা হয়। সে হিসেবে গত এক বছরে বাণিজ্যিক অনেক জাহাজ ভিড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি বন্দর।

পূর্বকোণ/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট