চট্টগ্রাম সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

সন্ধ্যা নামলেই দুই নম্বর গেট এলাকা চলে যায় ‘ড্যান্ডি’ আসক্তদের দখলে

রাজীব রাহুল

১৭ জুন, ২০২৩ | ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স থেকে পূর্ব নাসিরাবাদ মসজিদ গলি। এই আধ কিলোমিটার সড়কে গত কয়েক মাসে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি, জুয়া ও ইভটিজিংসহ নানা ধরনের অপরাধ। সন্ধ্যার পর এখানে রাস্তার পাশে প্রকাশ্যে গাঁজা ও পলিথিনে আঠা জাতীয় নেশা ‘ড্যান্ডি’ সেবন করে ছিন্নমূল শিশু ও উঠতি তরুণরা। নেশার টাকা জোগাড় করতে ছিনতাই ও চুরির মতো অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। রাত হলেই দুই নম্বর গেট এলাকায় প্রতি রাতেই মালবাহী গাড়ি ও ভ্যান থেকে চলন্ত অবস্থায় জিনিসপত্র নামিয়ে ফেলছে এই মাদকাসক্ত শিশু-কিশোররা। সম্প্রতি দুই নম্বর গেই রেল বিট এলাকায় স্ক্র্যাপের ট্রাক থেকে লোহা নামিয়ে দৌড় দেওয়ার সময় লোহার আঘাতে আহত হন এক পথচারী। পেশায় প্রকৌশলী এই পথচারীর নাম জয়নাল আবেদীন জুয়েল। সিপিডিএল’র কাস্টমার কেয়ার ম্যানেজার জুয়েল জানান, আমার বাসা দুই নম্বর গেট আল ফালাহ গলিতে। সেদিন রাতে কর্ণফুলী মার্কেট থেকে বাজার করে বাসায় ফিরছিলাম। এ সময় এক তরুণ স্ক্র্যাপের গাড়ি থেকে লোহার রড নিয়ে পালাতে গেলে রডে লেগে আমার শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং আমি হাতে আঘাত পাই। এই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় আমি প্রায়ই তাদের চলন্ত গাড়ি থেকে মালপত্র নামিয়ে ফেলতে দেখি। ‘মোখা’ ঘূর্ণিঝড়ের সময় রাতে দুই নম্বর গেট আগ্রাবাদ হোটেলের মালিকের বাড়ির সামনে রাস্তায় ছিনতাইয়ের কবলে পড়া পূর্বকোণের টেলিফোন অপারেটর রুবেল দত্ত বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন রাতে অফিস থেকে বের হয়ে হেঁটে দুই নম্বর গেট যাওয়ার সময় রাস্তায় রিকশা নিয়ে তিন ছিনতাইকারী ছুরি দেখিয়ে পথ অবরোধ করে। হঠাৎ পেছন থেকে দ্রুতগতিতে একটি বাস আসে। বাসের চাকার পানির ধাক্কায় তারাসহ আমি ভিজে যাই। এসময় ছোরা হাতের তরুণটি পানির ধাক্কায় নিচে পড়ে যায়। সে সুযোগে দৌড়ে নিজেকে রক্ষা করি।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, রাত দশটার পর রাস্তার পাশে আইল্যান্ডে ১০-১২ জন যুবক জুয়া খেলে। এতে অনেক রিকশা চালকরাও যোগ দেয়। মাঝেমধ্যে টহল পুলিশের তাড়া খেয়ে দুয়েকদিন বন্ধ রেখে পুনরায় তারা এখানে প্রকাশ্যে জুয়া ও মাদক সেবন করে। তাদের কাছে অনেক কর্মজীবী নারীও ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। এই এলাকায় সড়ক বাতিগুলো নষ্ট। তাই ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারে পথ চলতে হয় পথচারীদের। সেটার সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। অনেক সময় তারা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে নালার ভেতরে ঢুকে যায়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদিকুর রহমান পূর্বকোণকে জানান, ২ নম্বর গেট এলাকায় পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। নিয়মিত অভিযানে এখানে পুলিশের হাতে অনেক ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হলেও কারগার থেকে বের হয়ে আবারও তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। আমরা জুয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। রাস্তায় জুয়া খেললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মেট্রো কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোমেন মণ্ডল পূর্বকোণকে বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে কারও বিরুদ্ধে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। এই সুযোগটাই নিচ্ছে কিছু শিশু-কিশোর। তারা যে আঠা দিয়ে পলিথিনে ভরে নেশা করে সেগুলোও খুব সহজলভ্য। এগুলোর বহুবিদ ব্যবহারের ফলে তারা সহজে কিনতে পারে। এদের আসলে শাস্তি নয়, সংশোধনাগারে পাঠাতে হবে।

 

চট্টগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ওয়াহীদুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে এখনও কোন সংশোধনাগার নেই। তবে দুটি সংশোধনাগার নির্মাণ করার জন্য রাউজানে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। একটি ছেলেদের ও একটি মেয়েদের। তবে পুলিশ যদি কোনো শিশু অপরাধীকে সংশোধনাগারে পাঠানোর জন্য এজাহারে উল্লেখ করে, তাহলে তাদের আমরা চট্টগ্রামের বাইরে সংশোধনাগারে পাঠাতে পারবো। ছিন্নমূল শিশুরা মূলত নেশাগ্রস্ত হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। তাদের অভিভাবক না থাকায় সংশোধনাগারে পাঠানোর বিকল্প নেই।

পূর্বকোণ/পিআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট