চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

মুমিনুল হক চৌধুরীর নামাজে জানাজা নিয়ে উত্তেজনা, সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৩ জুন, ২০১৯ | ১:৪৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের মাঠে (প্যারেড গ্রাউন্ড) সদ্যপ্রয়াত জামায়াত নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর নামাজে জানাজা নিয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অংশ নিতে আসা শিবিরের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের ডাক দিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হলে মারমুখী হয়ে

এগিয়ে আসেন শিবিরের নেতাকর্মীরাও। এসময় উভয়পক্ষ সংঘর্ষ বেঁধে যায়। দুই পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। পরে কলেজ মাঠে জামায়াত নেতার জানাজার অনুমতি দেওয়ায় অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগ। ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। পরে চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
গত শুক্রবার রাতে জামায়াতের কেন্দ্রিয় কর্মপরিষদ সদস্য মুমিনুল হক চৌধুরী বার্ধক্যজনিত কারণে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া লোহাগাড়া) থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর শ্বশুর। মুমিনুল হকের মেয়ে নদভীর স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসান জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সংসদ সদস্য নদভী তাকে টেলিফোন করে প্যারেড মাঠে তার শ্বশুরের জানাজার জন্য সিএমপি কমিশনারের অনুমতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি কলেজের মাঠে জানাজায় সহযোগিতা করতেও অনুরোধ করেন। সেসময় কলেজের অডিটোরিয়ামে ঈদ পুর্নমিলনী অনুষ্ঠান চলছিল। সংসদ সদস্যের ফোন পেয়ে অধ্যক্ষ অনুষ্ঠানে সমবেত শিক্ষকদের প্যারেড মাঠের জানাজায় অংশ নিতে অনুরোধ করেন। শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতারা জানিয়েছেন, অধ্যক্ষের ঘোষণার পরই মূলত কলেজে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিষয়টি জানতে পারেন। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। দুপুর একটার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধের ডাক দিয়ে কয়েক দফা মিছিল করে ছাত্রলীগ। প্যারেড মাঠে জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজনের মধ্যে ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকে দেখে আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, জানাজার খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি লোহার রড নিয়ে প্যারেড মাঠের কাছে ছাত্রাবাসের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা জানাজার দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। অন্যদিকে জানাজাস্থল থেকে শিবিরের একদল নেতাকর্মীও মারমুখী হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দিকে এগিয়ে আসে। পুলিশ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও উভয়পক্ষ মারামারিতে জড়ায়। তবে পুলিশপরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় দু’জনের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
চকবাজার থানার পরিদর্শক (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘নামজে জানাজায় এক থেকে দেড় হাজার লোক হয়েছিল। যেহেতু উনি জামায়াত নেতা, শিবিরের ছেলেরাও এসেছিল। ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে মাঠের দিকে আসতে চাইলে উভয়পক্ষ মারমুখী হয়ে ওঠে। তবে আমরা মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নামাজে জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য সাংসদ নদভী প্যারেড মাঠ এলাকায় এলেও পরে যোগ দেননি। তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ভেতরেও যাননি। চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ আবুল হাসান জানিয়েছেন, কলেজ মাঠে জানাজার বিষয়টি জানানোর সময় সাংসদ নদভী শুধূ মুমিনুল হক চৌধুরীকে তার শ্বশুর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মুমিনুল হক চৌধুরী যে জামায়াতের একজন শীর্ষ নেতা, সেই বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি।
অধ্যক্ষ বললেন, আমি শিক্ষকদের উনার জানাজায় অংশ নিতে বলেছি। এমপি সাহেবই আমাকে এটা বলতে বলেছেন। অথচ আমি এর কিছুই জানতাম না। আমি যদি রাজনৈতিক পরিচয় জানতাম, তাহলে জানাজা নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে সেটা তো আগেই আঁচ করতে পারতাম। এরপরও যা ঘটেছে সেটা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত’। চট্টগ্রাম মেট্টোপলিনট পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) মাহাবুবর রহমানও বলেছেন, মুমিনুল হক চৌধুরী যে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত সেই বিষয়ে সাংসদ নদভী তাকে কোনো ধারণা দেননি। সংসদ সদস্যের শ্বশুর হিসেবেই প্যারেড মাঠে তার জানাজার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘নদভী সাহেব আমাকে সরাসরি ফোন করেননি। পরোক্ষভাবে জানিয়েছেন। যখন ঘটনা ঘটেছে, তখন জানতে পারলাম উনার শ্বশুর নাকি জামায়াত নেতা। অথচ উনার বিষয়টি আগেই জানানো দরকার ছিল। ঘটনার সময় আমি থানা পুলিশকে দ্রুত নির্দেশ দিই যেন, সংসদ সদস্যের উপ কোনো আঘাত না আসে।’

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট