চট্টগ্রাম বুধবার, ০১ মে, ২০২৪

ক্রান্তিকালে অর্থলিপ্সা

‘ধরলে বলবেন, হাসপাতালে যাচ্ছি’

আল-আমিন সিকদার

৩০ মার্চ, ২০২০ | ৩:০৩ পূর্বাহ্ণ

  • অর্থের লোভে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে রাইড শেয়ার
  • রিকশায় ৩ কিলো পথ ১৫০ টাকা, সিএনজি অটো রিকশার দৌরাত্ম্যও আছে

একটি রোগ। যার ধকল সমলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুরো বিশ্ব। চিনের উহান শহর থেকে সৃষ্ট এ করোনাভাইরাস রোগটিতে এরই মধ্যে সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৬ লাখ মানুষ। বিশ্বের ১৯৯টি দেশে রোগটি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের। ছোঁয়াচে এ ভয়ংকর রোগটি এরই মধ্যে কেড়ে নিয়েছে ৫ বাংলাদেশির প্রাণ। ভয়ংকর এ রোগটির হাত থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মত লকডাউন থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। ঘোষণা করা হয়েছে ১০ দিনের সরকারি ছুটি। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ গণপরিবহন, নৌ চলাচল ও ট্রেন চলাচল। কারণ এসব মাধ্যমে একসাথে অনেক মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। এতে করে দ্রুত করোনাভাইরাস মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এসব যাতায়াত মাধ্যম বন্ধ করার পাশাপাশি জনগণকে অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হতেও নিষেধ করছে প্রশাসন। পরিস্থিতি যতই ভয়ানক হোক জরুরি প্রয়োজনে মানুষকে ঘর থেকে বের হতেই হয়। যার জন্য শহরের গণপরিবহন শূন্য সড়কে বের হলেই দেখা মিলে গুটি কয়েক রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশার। তবে এসব চালকরা যে মানুষের আপদকালিন সময়ে সাহায্য করতে সড়কে নেমেছে তা কিন্তু নয়। যাত্রীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে পকেট ভারী করার মৌসুম চলছে তাদের। হরতাল, দুর্যোগ ও সংকটময় পরিস্থিতির মত মানুষকে ঠেকিয়ে অধিক ভাড়া আদায় করছে তারা। রিকশায় এক কিলোমিটার পথ গেলেই ভাড়া গুণতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। সিএনজি চালিত অটোরিকশাতে এখন সর্বনি¤œ ভাড়া দেড়শ’ টাকা। একটু দূরের পথ হলেতো আর কথাই নেই, ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চাইছেন তারা।
থেমে নেই রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেলগুলোও। করোনাভাইরাস ছড়াতে কয়েকটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাইড শেয়ারগুলো। বিশ্লেষকদের মতে, রাইড শেয়ার যারা করছেন তারা একই হেলমেট বহুজন ব্যবহার করছেন। এদের কারও করোনাভাইরাস থাকলে তা চালকের পাশাপাশি যাত্রীদের শরীরেও ছড়াবে। এতে করে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়বে ভয়ংকর এ ছোঁয়াছে ভাইরাসটি। বিশ্লেষকদের এমন মতামতের পর রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেলগুলোর ওপর কড়া নজরদারি চালাচ্ছে নগর ট্রাফিক বিভাগ। বন্ধ করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে তাদেরও।
কিন্তু বাংলায় প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, ‘চোর না শুনে, ধর্মের কাহিনী’। যেখানে এই রোগের একমাত্র প্রতিষেধক সামজিক দূরত্ব বজায় রাখতে সতর্ক থাকা। সেখানে এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে অধিক ভাড়া আদায়ে রাস্তায় নেমে পড়েছে রাইড শেয়ার করা মোটর সাইকেলগুলো। এপস্ ব্যবহার না করে মুখেই ভাড়া ঠিক করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন তারা। এমনকি পুলিশ ধরলে কি বলতে হবে তাও শিখিয়ে দিচ্ছেন যাত্রীকে।
শাকিল নামে এক যুবক প্রতিবেদককে বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজের পর আমার বড় মামা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে দেখতে যেতে রাস্তায় বের হয়ে দেখি কোন গাড়ি নেই। তবে কিছু সিএনজি এবং মোটর সাইকেল ছিল। তাও খুব কম। এই ধরেন, সিএনজি ৩টা আর মোটর সাইকেল ২টা। সিএনজি চালককে বললাম অক্সিজেন মোড় যাবো, ভাড়া কত?। সিএনজি চালক বললেন, ভাড়া একদাম ৫০০ টাকা। এতটাকা আমার কাছে ছিলো না। থাকলে পরিস্থিতি এমন ছিল যে আমি ওই টাকাতেই চলে যেতাম। ভাড়া বেশি দেখে যখন অন্য সিএনজির দিকে যাচ্ছিলাম, তখন একজন মোটর সাইকেল চালক আমাকে ডেকে বললেন কই যাবেন? আমি বললাম, অক্সিজেন। ওনি বললেন, সিএনজি চালক কত টাকা চাইছে? আমি বললাম ৫০০। ওনি বলল, আমাকে ৩শ টাকা দিয়েন যেখানে নামবেন সেখানে নামিয়ে দিবো। দ্রুত সময়ে যেত পারবো এবং ভাড়াও একটু কম দেখে কোনকিছু চিন্তা না করে তার পিছনে উঠে বসলাম। একটু এগোতেই ফ্রি- পোর্ট মোড়ে পুলিশ দেখে রাইডার বললো, পুলিশ ধরলে বলবেন হাসপাতালে যাবেন। তাহলে কোন সমস্যা নাই। আর আমি আপনার ‘কাজিন’। আমি বললাম, ঠিক আছে, আপনি চালান।’
অপু নামে আরও এক যুবক বলেন, ‘ইপিজেড থানার পাশ থেকে রিকশায় উঠেছি আধা কিলোমিটার দূরে ব্যারিস্টার কলেজের সামনে যাবো। নিয়মত এই দুরত্বের ভাড়া ১০ টাকা। দুইজন উঠলে ১৫ টাকা দিতাম। যেহেতু রাস্তায় গাড়ি- ঘোড়া কম, তাই রিকশা থেকে নেমে চালককে ২০ টাকা দিলাম। টাকা হাতে নিয়েই রিকশা চালক ক্ষেপে গেলেন। বললেন, ৪০ টাকা দিতে হবে। শুধু কি তাই, গরীবের সাথেই আপনারা পারবেন এই কথাসহ আরও একাধিক কথা শুনিয়ে দিলেন। পরে পকেট থেকে আরও ১০টাকা বের করে তার হাতে দিয়ে বললাম, ‘মামা, একটু আল্লাহকে ভয় করেন, এই সময়ে মানুষের সহযোগিতা করেন। জবাই কইরেন না’।
ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) এস এম শওকত হোসেন পূর্বকোণকে বলেন, ‘রাইড শেয়ার বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হলেও তা মানছেন চালকরা। অধিক অর্থ আদায়ের লোভে তারা সড়কে নেমে যাত্রী বহন করছেন। যেহেতু এটি করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য ঝুঁকি তাই এগুলো দেখলেই আমরা আটক করছি। আজ শুধুমাত্র অলংকার মোড় থেকেই ৫টি রাইড শেয়ারের কাজে ব্যবহার হওয়া মোটরসাইকেল আটক করেছি। এই অভিযান চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি’।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট