চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সেমির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল ইংল্যান্ড

প্রথম পরাজয়ের স্বাদ ভারতের

স্পোর্টস ডেস্ক

১ জুলাই, ২০১৯ | ২:০৪ পূর্বাহ্ণ

অদম্য ভারতকে দুরন্ত জয়ে মাটিতে নামিয়ে আনল ইংল্যান্ড। বিরাট কোহলিকে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ দিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখল স্বাগতিকরা। শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে বিশ^কাপে যাত্রা শুরু করা ইংল্যান্ড লিগ পর্বে তিন ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়ার শঙ্কায় পড়েছিল। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়াল ইয়ান মরগান বাহিনী। টুর্নামেন্টে অপরাজেয় ভারতে ৩১ রানে হারিয়ে সেমির পথেই থাকল ইংল্যান্ড। এ জয়ে ৮ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পাকিস্তানকে টপকে আবারো তালিকার চতুর্থ স্থানে উঠে এল ইংল্যান্ড। অন্যদিকে পরাজয়ে ৭ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানেই রইল ভারত। ভারত-ইংল্যান্ড এ ম্যাচে নজর ছিল বাংলাদেশেরও। কিন্তু ইংল্যান্ডের জয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্নটা আরো কঠিন হয়ে গেল টাইগারদের। আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাংলাদেশকে শেষ দুই ম্যাচে জয় পেতে হবে এবং শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পরাজয় কামনা করতে হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ ম্যাচে পাখির চোখে তাকিয়ে ছিল পাকিস্তান শ্রীলংকাও। কিন্তু পুরো উপমহাদেশের সমর্থকদের হতাশ করে ভারতের বিপক্ষে জয় তুলে নিল ইংল্যান্ড।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো এ দুই ওপেনারের বিধ্বংসী পার্টনারশিপ সর্বোপরি বেয়ারস্টোর অনবদ্য শতরান ও রয়ের অর্ধশতকে ৭ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে পাহাড়প্রমাণ ৩৩৭ রান তুলে থ্রি লায়ন্সরা। জবাব দিতে নেমে রোহিত শর্মার শতক ও বিরাট কোহলির অর্ধশতকে ও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি ভারত। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের বেশি এগুতে পারেনি বিরাট কোহলির দল।
এজবাস্টনে ব্যাটিং সহায়ক পিচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেননি ইংরেজ অধিনায়ক ইয়ান মরগান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে শুরু থেকেই ভারতীয় বোলারদের উপড় চড়াও হতে থাকেন দুই ইংরেজ ওপেনার। জেমস ভিন্সের পরিবর্তে জেসন রয় দলে ফিরতে ধ্বংসাত্মক মেজাজে পাওয়া যায় জনি বেয়ারস্টোকে। পিচে যে কোনওরকম স্পিন জুজু নেই, কুলদ্বীপ-চাহাল জুটিকে সাধারন স্তরে নামিয়ে আনলেন বেয়ারস্টো-রয় জুটি। ওপেনিং পার্টনারশিপে ১৬০ রান তুলে এদিন শুরুতেই ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন ইংরেজ ওপেনারদ্বয়। ২৩তম ওভারে কুলদ্বীপের বলে পরিবর্তিত ফিল্ডার জাদেজা অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়ে ফেরান জেসন রয়কে। তবে ৫৭ বলে ৭টি চার ও ২টি ছয়ের সাহায্যে রয়কে ৬৬ রানে ফেরালেও আটকানো যায়নি বেয়ারস্টোকে। ৯০ বলে ক্যরিয়ারের অস্টম শতরানটি এদিন পূর্ণ করেন বেয়ারস্টো। একইসঙ্গে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চলতি বিশ্বকাপে ভারতের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে শতরান ছিনিয়ে নেন তিনি। ৩১.৪ ওভারে যখন তিনি আউট হন, দলের রান তখন ২০৫। রানের পাহাড়ে চড়ার ইঙ্গিত পেয়ে সুযোগ কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক মরগান ১ রানে ফিরলেও দলের রানকে শিখরে নিয়ে যান জো রুট এবং বেন স্টোকস। ৫৪ বলে ২টি চাওে রুট ব্যক্তিগত ৪৪ রানে আউট হলেও ৫৪ বলে বিস্ফোরক ৭৯ রান আসে স্টোকসের ব্যাট থেকে। চলতি বিশ্বকাপে ইংরেজ অল-রাউন্ডারের চতুর্থ অর্ধশতরানের ইনিংস সাজানো ছিল ৬টি চার ও ৩টি ছয়ে।
৪৯.৪ ওভারে স্টোকস আউট হলেও মূলত স্লগ ওভারে তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিংয়েই শেষমেষ ৩৩৭ রানের বিশাল ইনিংস খাড়া করে ইংল্যান্ড। ৫ উইকেট ঝুলিতে ভরলেও শামি এদিন খরচ করলেন ১০ ওভারে ৬৯ রান। ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেন বুমরাহ। তবে ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের তা-বের সামনে এদিন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কুলদ্বীপ-চাহাল জুটির। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ভারতের হয়ে এদিন সর্বোচ্চ ৮৮ রানের স্পেল উপহার দিলেন চাহাল। তথৈবচ কুলদীপ খরচ করলেন ১০ ওভারে ৭২ রান। ৬০ রান দেন হার্দিক পান্ডিয়াও।
পাহাড়সম রানের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই লোকেশ রাহুলকে হারায় ভারত। দলীয় ৮ রানে ক্রিস ওকসের বলে ফিরতি ক্যাচে ফেরা লোকেশ রানের খাতায় খুলতে পারেননি। এরপর রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি ১৩৮ রানে জুটি গড়ে দলকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। ২৯তম ওভারে দলীয় ১৪৬ রানে লিয়াম প্লানকেটের বলে ভিন্সের তালুবন্দী হলে এ জুটি ভাঙে। ফেরার আগে ৭৬ বলে ৭টি চারে ৬৬ রান করেন কোহলি। অর্ধশতকে রেকর্ড গড়ে কোহলি। বিশ্বকাপে টানা পাঁচটি অর্ধ শতরান করে স্টিভ স্মিথের সঙ্গে একাসনে বসেন বিরাট কোহলি। অপর প্রান্তে ইংল্যান্ড বোলারদের সাথে লড়াই করে বিশ^কাপে নিজের তৃতীয় শতক তুলে নেন রোহিত শর্মা। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শতক পেয়েছিলেন রোহিত। তবে শতকের পর বেশীদূর আর এগুতে পারেননি তিনি। দলীয় ১৯৮ রানে ওকসের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। উইকেটরক্ষক বাটলারের তালুবন্দী হওয়ার আগে ১০৯ বলে ১৫টি চারে ১০২ রান করেন তিনি। ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজনী রানরেট তখন ১০এর উপরে। এরপর হাতখুলে খেলার চেষ্টা করেন ঋষভ পান্থ। ২২৬ রানে তাকে ফিরিয়ে ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটানা প্লানকেট। উডের তালুবন্দী হওয়ার আগে ২৯ বলে ৪টি চারে ৩২ রান করেন পান্থ। এরপর মহেন্দ্র সিং ধোনি ও কেদার যাদব অপরাজিত থাকলেও ৩০৬ রানের বেশি এগুতে পারেনি ভারত। ইংল্যান্ডের হয়ে প্লানকেট ৩টি ও ওকস ২টি উইকেট নেন।
ইংল্যান্ড : ৩৩৭/৭ (৫০)
জেসন রয়-কট জাদেজা বল কুলদ্বীপ- ৬৬ (৫৭)
জনি বেয়ারস্টো- কট পান্থ বল সামি- ১১১ (১০৯)
জো রুট-কট পা-ে বল সামি- ৪৪ (৫৪)
ইয়ন মরগান-কট কেদার যাদব বল সামি- ১ (৯)
বেন স্টোকস-কট জাদেজা বল বুমরাহ- ৭৯ (৫৪)
জস বাটলার-কট এন্ড বল সামি- ২০ (৮)
ক্রিস ওকস-কট শর্মা বল সামি ৭ (৫)
লিয়াম প্লাঙ্কেট-অপরাজিত- ১
জোফরা আর্চার-অপরাজিত- ০
বোলিং
বোলার-ওভার-রান-উইকেট
মোহাম্মদ সামি ১০-৭৯-৫
জসপ্রিত বুমরাহ ১০-৪৪-১
যুবেন্দ্র চাহাল ১০-৮৮-০
হার্দিক পান্ডে ১০-৬০-০
কুলদ্বীপ যাদব ১০-০-৭২-১
ভারত : ৩০৬/৫ (৫০/৫০)
লোকেশ রাহুল-কট এন্ড বল ওকস-০
রোহিত শর্মা-কট বাটলার বল ওকস-১০২
বিরাট কোহলি-কট ভিন্স বল প্লানকেট-৬৬
ঋষভ পান্থ-কট ওকস বল প্লানকেট-৩২
হার্দিক পা-ে-কট ভিন্স বল প্লানকেট-৪৫
এমএস ধোনি-অপরাজিত-২৭
কেদার যাদব-অপরাজিত -৪
বোলিং
বোলার-ওভার-রান-উইকেট
ক্রিস ওকস ৯-৪৬-২
জোফরা আর্চার ৯-৩৮০
লিয়াম প্লানকেট ১০-৫৫-৩
মার্ক উড ৯.১-৬৮-০
আদিল রশিদ ৬-৪০-২
বেন স্টোকস ৪-৩৪-০

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট