চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নিরাপদে ঘরে থাকুন, দেশবাসীকে ভালো রাখুন

জুবায়ের আহমেদ

১২ এপ্রিল, ২০২০ | ১:০৪ পূর্বাহ্ণ

বাংলা দেশের অধি কাংশ নাগরিক দের মধ্যেই অসচেতনতার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক বিধি-নিষেধ মেনে চলার আবশ্যিক প্রয়োজনের মুহূর্তেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র নাগরিকরা অবস্থানগত কারণে এবং অসচেতনতার কারণে গাছাড়া ভাব নিয়ে চলে। কোন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার দেখা দিলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অন্যান্য সময়ের মতোই স্বাভাবিক চলাফেরা বিদ্যমান রাখে তারা। চলমান বৈশ্বিক সংকট নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ছোবলে অসহায় হয়ে পড়েছে পৃথিবী। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করার চেয়ে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি হলেও প্রাণঘাতি এ রোগ থেকে নিরাময়ের জন্য এখনো কোন প্রতিষেধক আবিস্কার না হওয়ায় মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে না। লাখ লাখ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে পঞ্চান্ন হাজারেরও বেশি মানুষের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে করোনা ভাইরাস রোগটি ছোঁয়াছে প্রকৃতির হওয়ায় এবং নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকায় প্রতিরোধই করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র উপায় হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ার পর ২৬মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এবং এর আগে থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করে। সচেতন নাগরিকরা সরকারের নির্দেশনা মেনে চলাসহ করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা উপলব্ধি করলেও দেশের অসচেতন নাগরিকরা “আমাদের কিছুই হবে না” মন্তব্য করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। অথচ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় ঘরে থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। যার কোন বিকল্প নেই। সরকার, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিত্তবান নাগরিকদের প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে চিকিৎসাসামগ্রির ঘাটতি পূরণ করে দেশের সকল জেলা শহরে করোনাভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষার (টেস্ট কিট) ব্যবস্থা এবং ডাক্তারদের জন্য পিপিই সরবরাহ করাসহ দুঃস্থ নাগরিকদের খাদ্যদ্রব্যের বিষয়ে সকল জেলা প্রশাসক, সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিলেও অসেচতন নাগরিকরা সরকারী নির্দেশনা না মেনে নিজেদের স্বভাবজাত চলাফেরায় মত্ত আছে। সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বহু দায়িত্ববান সংস্থা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর মধ্যে স্থিত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর লোকজনের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। দেশে এ পর্যন্ত একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ও ষাট জনের উপরে রোগী সনাক্ত হলেও বহু নাগরিক নিয়ম মানছে না এখনো। বাংলাদেশের জন্য চলতি এপ্রিল মাসকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যান্য দেশে সময়ের হিসেবে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির সূত্র ধরে গত প্রায় একমাস সময়ে বাংলাদেশে রোগী বৃদ্ধির সংখ্যা হিসেবে চলতি এপ্রিল মাসই বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। কেননা বিগত সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা বর্তমান সময় থেকেই আক্রান্ত হতে পারেন এবং বর্তমানে যারা হোম কোয়ারেন্টাইন বা গৃহে বসবাস না করে অবহেলা করছেন, সেসকল ব্যক্তিরাও আক্রান্ত হতে পারেন। করোনাভাইরাস ছোঁয়াছে প্রকৃতির হওয়ার কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে বহু দায়িত্ববান সংস্থা বাংলাদেশকে সতর্ক ও কঠোর অবস্থান গ্রহণের বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু দেশের ঘনবসতি এলাকাগুলোসহ গ্রামাঞ্চলে মানুষ অবাধ মেলামেশা-চলাফেরা করছে। সরকার এবং অনেক বিত্তবানসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন দরিদ্র লোকজনের খাবারের অধিকার নিশ্চিতের চেষ্টা করছেন। নাগরিকদের মধ্যে খাবারের সুষ্ঠু বন্টনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। জেলাপ্রশাসক ও পুলিশ প্রশাসন থেকেও খাদ্যকষ্টে থাকা ব্যক্তিদের ফোনের মাধ্যমে জানানোর জন্য আহ্বান জানিয়ে একাধিক ফোন নাম্বার প্রকাশ করেছে। সমাজভিত্তিক বিত্তবান নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও সাধ্যমত সহায়তা করছে। তার চেয়েও বড় কথা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার, এমনকি কলোনী কিংবা এলাকাজুড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সকলের আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনাসহ পুরো পরিবার ঝুঁকিতে পড়ে যায়। ফলে ভাইরাসটি যাতে সামাজিক ভাবে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য গৃহে অবস্থান করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নেই। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে নিজেকে ভালো রাখার, পরিবার, সমাজ ও দেশকে ভালো রাখার জন্য সকলে নির্দেশনা মেনে চললে খুব দ্রুতই চলমান সংকট কাটানো সম্ভব হবে। কাজেই ঘরে থাকুন, নিজে ভালো থাকুন, পরিবারকে ভালো রাখুন, সমাজ ও দেশকে ভালো রাখুন।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট