চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বাজারে সাঁড়াশি অভিযান
বাজারে সাঁড়াশি অভিযান

ভোগপণ্য

বাজারে সাঁড়াশি অভিযান

১৪ প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা

মরিয়ম জাহান মুন্নী

২২ মার্চ, ২০২০ | ৩:৫৭ অপরাহ্ণ

অবশেষে ঘুম ভাঙলো প্রশাসনের। এক সপ্তাহ ধরে অস্থিরতা চলছে চালের বাজারে। একই সঙ্গে বেসামাল হয়ে পড়েছে ভোগ্যপণ্যের বাজারও। করোনোভাইরাস আতঙ্কে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে বাজারে। সেই সুযোগে বিক্রেতারাও ভোগ্যপণ্যের দাম নিতে থাকে ইচ্ছেমত।

বাজার বেসামাল হওয়ার ৫ দিন পর শুরু হয়েছে বাজার মনিটরিং। মাঠে নেমেছেন ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ প্রশাসন। অথচ রাজধানী ঢাকায় বাজার অস্থির হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। কিন্তু চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিং বা অভিযান শুরু হয়েছে অনেকটা দেরিতে।

করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর মাস-দুই মাসের খাবার সংগ্রহ করতে বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ক্রেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শপিংমল কিংবা দোকানপাট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় ক্রেতারা নিত্যপ্রয়োজনী ও খাদ্যপণ্য কিনতে ভিড় করে। ক্রেতাদের হুড়োহুড়ির কারণে যাচ্ছেতাই দাম হাতিয়ে নিয়েছে বিক্রেতারা। এমনকি কয়েকটি খাদ্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়েছে। ক্ষুদ্র দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি শপিং কমপ্লেক্স ও কাঁচা বাজারে পণ্যের দাম ছিল লাগামহীন।

বাজারে নৈরাজ্যের চারদিন পর মাঠে নেমেছে প্রশাসন। গতকাল জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা ভোগ্যপ্েযণর বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, বিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। এছাড়াও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। কোতোয়ালী ও বাকলিয়া থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে ব্যবসায়ীদের জেল-জরিমানার চেয়ে সতর্ক করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর বিভিন্ন হাট-বাজারে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশনায় বাজার মনিটরিং কার্যক্রম শুরু হয়। বাজার তদারকিতে মাঠে নেমেছেন চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অভিযানে ১৪ প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনা করেন চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী (ভূমি) কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ওমর ফারুক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব চৌধুরী। চার ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, কাজীর দেউড়ি, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ চৌমুহনী, পাহাড়তলী বাজার এবং ২ নং গেট কর্ণফুলী কমপ্লেক্সে বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে।

চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামনুন আহমেদ অনিক নগরীর রেয়াজউদ্দিন বাজারে ভোগ্যপণ্য ও কাঁচা সবজিসহ বিভিন্ন দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা না টাঙানো, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিক্রি ও পাইকারি বা আড়ত থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় রশিদ প্রদর্শন না করার অপরাধে ৫টি দোকানদারকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনিক বলেন, শিমুল এন্ড ব্রাদার্সকে ১০ হাজার টাকা, ভাই ভাই স্টোরকে ১০ হাজার টাকা, আবছার এন্ড ব্রাদার্সকে ১০ হাজার টাকা, গরু মাংসের দোকানি মো. লিটন ও আলী হোসেনকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া একই অভিযানে ৪৬টি নকল লিকুইড সোপ জব্দ করা হয়।

এছাড়া নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজার ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম। কাজীর দেউড়ি বাজারে একটি দোকানকে ৫ হাজার টাকা, আগ্রাবাদ চৌমুহনী ও পাহাড়তলী বাজারের ৪টি দোকানকে ৩০ হাজার টাকা ও ২ নং গেট কর্ণফুলি কমপ্লেক্স মার্কেটের ৪টি দোকানকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেটরা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম জানান, পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ, খুচরা বাজার কাজীর দেউড়ি ও সিডিএ মার্কেটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, আদা, পেঁয়াজ, রসুনের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব আড়তে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে ও দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু কাজীর দেউড়ি বাজার ও সিডিএ মার্কেটে অভিযানে দেখা যায়, করোনা আতঙ্কে অতিরিক্ত পণ্য কিনছে ক্রেতারা। দেখা যায়, একজন ক্রেতা ৪০ কেজি চিনি তার নিজের পরিবারের জন্য একাই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইকারি বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ থাকার পরও সাধারণ ক্রেতা যেভাবে অতিরিক্ত পণ্য কিনছে তা রীতিমতো বেসামাল অবস্থা।

কোতোয়ালী ও বাকলিয়া পুলিশ ভোগ্যপণ্যের বড় বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বড় অভিযান পরিচালনা করেন। নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের ডিসি মেহেদী হাসান, এডিসি শাহ মো. আবদুর রউফ, এসি নোবেল চাকমা, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন, বাকলিয়া থানার ওসি নেজামউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। চাল থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য দোকানে অভিযান চালানো হয়। চাক্তাই ও খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে এই অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ প্রশাসন। অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি ও ভেজালপণ্য তদারকি করে তারা।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মহিউদ্দিন বলেন, করোনো আতঙ্কে খুচরা বাজারে ক্রেতাদের অস্বাভাবিক চাপের কারণে দাম বাড়ানো হয়েছে। পাইকারি বাজারে মূল্য অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তাই এখানে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট