চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

পেঁয়াজের বাজারে দুষ্টচক্রের হানা

আব্দুল্লাহ আল মাউন

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৫:২৬ অপরাহ্ণ

দারিদ্রের দুষ্টচক্রের মত গত বছরের ন্যায় এ বছরও পেঁয়াজের দাম দুষ্টচক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। গত বছরে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের মানুষকে যে পরিমাণ নাকানি-চুবানি খেতে হয়েছে তার রেশ যেতে না যেতেই এবছর আবারো পেঁয়াজের দাম খুচরা বাজারে সেঞ্চুরি অতিক্রম করেছে কেবল ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। শুধু পেঁয়াজ কেন? বাজারের কোনো কিছুই এখন ক্রেতার নাগালের মধ্যে নেই বললেই চলে। কাঁচাসব্জির বাজার এখন চড়া। করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে মানুষের পকেটের অবস্থা গত ছয়মাস ধরে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার পরিস্থিতি যদি মানুষের নাগালের বাইরে থাকে তাহলে দুশ্চিন্তায় আর হতাশায় জীবন অতিক্রম করাই যেন অলিখিতভাবে আমাদের ভাগ্যে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানী কেবল ভারতের উপর নির্ভরশীল নয়। ভারত ছাড়াও মিয়ানমার, পাকিস্তান, তুরস্ক, চীন, মিসরসহ অনেক দেশ থেকেই পেঁয়াজ আমদানী করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই কথা ভেবে আমরা অস্থির হয়ে উঠি যে, কেবল ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরই কেন দেশের বাজারের পেঁয়াজের দাম এক লাফে দ্বিগুণেরও বেশী বেড়ে যাবে? তাহলে কি বাংলাদেশ মূলত ভারতের পেঁয়াজের উপর এককভাবে নির্ভরশীল? নাকি অসাধু ব্যবসায়ীরা ভারতকে পুজি করে দেশের বাজারকে অস্থির করে তুলে তাও ভাবার বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে গতবছরও বলা হয়েছিল পেঁয়াজ যথেষ্ট মজুদ আছে, এবছরও একই কথা শুনা যাচ্ছে। এত আশ্বাসের বাণী শোনার পরও কিন্তু গতবছর পেঁয়াজের দাম নাগালের মধ্যে আসতে অনেক সময় লেগেছিল। বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের নতুন মৌসুম আসতে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ এখনো ছয়মাস বাকি। এই ছয়মাসে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ১১ লাখ টন। বর্তমানে মজুদ রয়েছে ৫ লাখ টন। তাহলে ঘাটতি রয়েছে আরো ৬ লাখ টন।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মজুদকৃত পেঁয়াজ দেশের মানুষের আড়াই মাসের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বাকি পেঁয়াজ আমদানী করার কাজ এগিয়ে চলছে। এমন কি এটাও বলা হচ্ছে সারাদেশে পেঁয়াজের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে, দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এসব গাণিতিক হিসেব থেকে চমৎকার একটি ধারণা আমরা সাধারণ মানুষ পেতে পারি যে, দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি না থাকলেও এর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে? কারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদেরকে কি এবছর খুজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে?নাকি অধরাই থেকে যাবেন তা এখন জনমনে প্রশ্ন জাগছে।
দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অসাধু সিন্ডিকেটের কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। যারা অসাধু ব্যবসায়ী, তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো সৎসাহস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই। আবার কর্তৃপক্ষ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সুবিধাভোগী। তিনি আরও বলেন, মূল বিষয় হল- সুশাসনের ঘাটতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই। এখানে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। সুশাসন নিশ্চিত না হলে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে না।
সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে, করোনা পরিস্থিতিত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষজন এমনিতেই নানা বিপদে আছেন, প্রাইভেট সেক্টরে চাকুরী করা মানুষজনও অনেকের পকেটের অবস্থা ভাল নই। তার উপর যদি দেশের নিত্যপ্রয়জোনীয় বাজারে এমন অস্থিরতা লেগে থাকে তাহলে মানুষের কষ্টের সীমার আর শেষ থাকবেনা। তাদের ভাগ্যের আকাশে কেবল কালো মেঘ আর হতাশাই জমা হবে। তাই পেঁয়াজসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির দাম দুষ্টচক্রের ছোবল থেকে এখনি মুক্ত করতে হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট