চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঘন ঘন ভয়ঙ্কর ভূমিধসের আশঙ্কা নেপাল-তিব্বত হিমালয়ে, জানাল নাসা

নাসরিন আকতার

১২ মার্চ, ২০২০ | ২:০৩ পূর্বাহ্ণ

ঘন ঘন ভূমিধস হতে পারে নেপাল, তিব্বত, চিনের হিমালয়ে। আর প্রত্যেকটি ভূমিধসই হবে ভয়ঙ্কর। বিশাল এলাকা জুড়ে। সেটা সবচেয়ে বেশি হবে চিন-নেপাল সীমান্তে। যার ফলে, ওই এলাকায় ভূমিধসের ঘটনা অন্তত ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়ে যাবে।

সেই একের পর এক ভয়ঙ্কর ভূমিধসের জেরে অনেক নীচে নেমে আসবে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলির বিশাল বিশাল হিমবাহ। বেশি তাপমাত্রায় তারা দ্রুত গলে যেতে শুরু করবে। তাতে ভেসে যাবে এলাকার হিমবাহের হ্রদগুলি। ভয়াবহ প্লাবনে হারিয়ে যেতে পারে হিমালয়ের এই এলাকাগুলির যাবতীয় জনপদ।
‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’কে এই খবর দিয়েছেন গোয়ার ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশ্ন রিসার্চ’ (এনসিপিওআর)-এর অধিকর্তা, আন্তর্জাতিক হিমবাহ বিশেষজ্ঞ এম রবিচন্দ্রন।
তিনি জানিয়েছেন, উষ্ণায়নের জন্য নেপাল, তিব্বত ও চিন হিমালয়ের জলবায়ু কী ভাবে দ্রুত বদলাচ্ছে, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়েছে। মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টে নাসার গর্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের সঙ্গে সেই গবেষণায় সহযোগী হয়েছে ওয়াশিংটনে ‘ন্যাশনাল ওশ্নিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)’ ও ক্যালিফোর্নিয়ায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। সেই গবেষণা থেকে নেপাল, তিব্বত হিমালয়ের ভয়াবহ ভবিষ্যতের অশনি সংকেত মিলেছে।
উষ্ণায়ন থেকেই তুমুল বৃষ্টি, ঘন ঘন ভূমিধসের শঙ্কা
উষ্ণায়নের দরুন যেখানে ভূমিধসের আশঙ্কা বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে, হিমালয়ের সেই অংশটিকে ভূবিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয়, ‘হাই মাউন্টেন এশিয়া’। যা পূর্ব দিকে নেপাল, তিব্বত থেকে পশ্চিমে হিন্দুকুশ ও তিয়ান শান পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত।
রবিচন্দ্রন জানাচ্ছেন, দ্রুত উষ্ণায়নের দরুন নেপাল, তিব্বত ও চিনের হিমালয়ে বর্ষার মরসুমটাই বদলে গিয়েছে। তা আগের চেয়ে অনেকটাই দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইদানীং ওই সব এলাকায় যখন তখন বৃষ্টি হচ্ছে। আর যখনই হোক, তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় রোজকার তুমুল বৃষ্টির জন্যই নেপাল, তিব্বত ও চিন হিমালয়ে ভয়ঙ্কর ভূমিধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টানা ৭ দিনের তুমুল বৃষ্টিতে গড়ে যতটা জল জমে ওই সব এলাকায়, দেখা গিয়েছে, তাতেই ভূমিধসের আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে।
‘এনসিপিওআর’-এর অধিকর্তার কথায়, ‘‘হামেশাই হবে বিশাল বিশাল ভূমিধস। তার ফলে, ওই এলাকার হিমালয়ের বড় বড় হিমবাহগুলি (গ্লেসিয়ার) নেমে আসবে কয়কেশো কিলোমিটার নীচে। যেখানে তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাতে হিমবাহগুলি দ্রুত গলে যাবে। তাতে প্লাবিত হবে হিমবাহগুলির হ্রদও (গ্লেসিয়াল লেক)। ভেসে যাবে এলাকার যাবতীয় জনপদ।’’
সেই আশঙ্কাটা সবচেয়ে বেশি জুন থেকে সেপ্টেম্বরে, বর্ষার মরসুমে। তার ফলে, সংলগ্ন শহর, জনপদগুলি তো ভেসে যাবেই, ধ্বংস হয়ে যাবে পানীয় জল সরবরাহ, নিকাশি ও যোগাযোগব্যবস্থা। গত বছরের গ্রীষ্মে বন্যা ও ভূমিধসে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশে ভূমি-হারা হয়েছিলেন ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, গবেষণায় সিদ্ধান্তে পৌঁছতে তাঁরা ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নাসার ‘প্রেসিপিটেশন ডেটা’ এবং ১৯৮২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ‘নোয়া’র ‘ক্লাইমেট মডেল ডেটা’র সাহায্য নিয়েছেন।
দ্রুত বরফ গলছে হিন্দুকুশ হিমালয়ে
গত বছর আন্তর্জাতিক পর্বত গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট’ (আইসিআইএমওডি)-এর একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, খুব দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ হিমালয়ের পাহাড়, পর্বতে। দ্রুত গলে যাচ্ছে সেখানকার বড় বড় হিমবাহগুলি (গ্লেসিয়ার)। গলছে এভারেস্ট, কারাকোরামের মতো পৃথিবীর দু’টি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গও। আন্টার্কটিকা ও আর্কটিকের (সুমেরু ও কুমেরু) পর হিন্দুকুশ হিমালয়কেই বলা হয় পৃথিবীর ‘তৃতীয় মেরু’।
বলা হয়েছিল, হিমালয়ে সেটাই এত দ্রুত হারে হচ্ছে যে আর ৮০ বছরের মধ্যেই তার এক-তৃতীয়াংশ বরফ পুরোপুরি গলে যাবে। আর বিশ্ব উষ্ণায়নের তাপমাত্রার বাড়-বৃদ্ধি যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা যায়, তা হলেও অর্ধেক বরফই গলে যাবে হিন্দুকুশ পর্বতমালার। উষ্ণায়নের তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেই গলে যাবে দুই-তৃতীয়াংশ বরফ।
(চলবে)

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট