চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

চাই আইনের কঠোর প্রয়োগ ও সচেতনতা কর্মসূচি সবজিতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ

সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের গাফিলতির সুযোগে খাদ্যসন্ত্রাসীরা শুধু খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণে ক্ষান্ত হচ্ছে না, অতি মুনাফালোভী মানসিকতার কারণে শাক-সবজি থেকে শুরু করে সবকিছুতেই ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করছে। পচন রোধ এবং সতেজ ও টাটকা দেখিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটতেই তারা এমন পৈশাচিক অপরাধটি করছে। তাদের পাষ- লোভাতুর দৃষ্টি থেকে রেহাই পাচ্ছে না মৌসুমের শাক-সবজিও। বিভিন্ন শাক-সবজিতে পাওয়া গেছে অত্যন্ত ক্ষতিকারক রাসায়নিকের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি। সরকারের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট পরিচালিত গবেষণায় প্রায় সব শাক-সবজিতে স্বাস্থ্যহানিকর রাসায়নিকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ ধরনের সংবাদ জনকাম্য না হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, ঘাতকচক্রগুলোকে নির্মূল-নিশ্চিহ্ন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বলিষ্ট তৎপরতা নেই। ফলে মুনাফাশিকারী ঘাতকচক্রগুলোর অপতৎপরতা অব্যাহত আছে। তারা প্রশাসনিক শৈথিল্যের সুযোগে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ভোক্তাসাধারণ পকেটের টাকা খরচ করে বিষযুক্ত খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিণামে জনস্বাস্থ্য পড়ছে চরম হুমকিতে।

উল্লেখ্য, খাদ্যে ফরমালিনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিকের ব্যবহার বাংলাদেশে নতুন নয়, প্রশাসনিক শৈথিল্যসহ নানা কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে এই অপকর্মটি। নাগরিকসাধারণ ক্রমশ এই অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে এবং সরকার শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই অপকর্মটি কয়েক দিন পায়। অভিযান বন্ধ হলে মুনাফাশিকারী চক্রগুলো ফের বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রসঙ্গত, পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে শাক-সবজি রক্ষা করতে কৃষকরা অবাধে কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন। কিন্তু কীটনাশক স্প্রে করার বিষয়ে তাদের বেশির ভাগই নিয়ম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। আবার যারা জানেন তাদের অনেকেই রকমারি কীটনাশক প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির ধার ধারেন না। কীটনাশক জনস্বাস্থ্যের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর জেনেও তারা অবাধে তা ব্যবহার করছেন ফসলে। কৃষকরা জমি থেকে তুলে বাজারে সরবরাহ করার দিনও শাকসবজিতে কীটনাশক স্প্রে করে থাকেন বলে নানা অনুসন্ধানে জানা গেছে। আবার পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারাও নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগ করে থাকে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারী না থাকায় এ অপকর্মটি অবাধে চলছে। আর ভোক্তারা জেনে না জেনে এসব শাক-সবজি খেয়ে নানা জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এমনটি কোনো সচেতন দেশপ্রেমিক মানুষের কাম্য হতে পারে না। কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এমন জঘণ্য অপরাধমূলক কর্মকা- চলতে পারে না।

এ কথা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক মানবদেহের জন্য সবসময়ই ক্ষতিকর। তারপরও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে কঠোর হচ্ছে না কেনো তা বোধগম্য নয়। সরকারের দায়িত্বশীলদের নির্লিপ্ততার কারণে কৃষকরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মানছেন না। তারা ইচ্ছামতো কীটনাশক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছেন এবং এসব ক্ষতিকর সবজি বাজারজাত করছেন। আবার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাও বেশি মুনাফার লোভে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাসায়নিক ব্যবহৃত এসব শাক-সবজি শিশুদের পেটে গেলে ক্ষেত্রবিশেষে মৃত্যুও ঘটতে পারে। প্রসঙ্গত, কীটনাশকযুক্ত লিচু খেয়ে বিভিন্ন সময়ে শিশুমৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, ফসলে বা সবজিতে কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এক ধরনের রাসায়নিক অর্গানিক কমপাউন্ড। আর নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে এর অতিরিক্ত মাত্রা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ফলে শাক-সবজি চাষে রাসায়নিক ব্যবহারের মাত্রা যতো বাড়বে মানবদেহের জন্য বিপদও বাড়বে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। উল্লেখ্য, ক্ষতিকর রাসায়নিক যুক্ত শাক-সবজি ধোয়ার পরও বিষাক্ত থাকে এবং স্লো পয়জন হিসেবে শরীরের অভ্যন্তরে কাজ করে। ক্ষতিকর কীটনাশক মিশ্রিত এসব সবজি খেলে কিডনি, লিভার অকার্যকর হওয়াসহ স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। একপর্যায়ে এসব অঙ্গ স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
তাই শাক-সবজিতে কীটনাশকসহ ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিকল্প নেই। তবে, কার্যকর ফল পেতে চাইলে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ এ বিষয়ে একটি কার্যকর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট