চট্টগ্রাম বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাঠকনন্দিত দৈনিক পূর্বকোণের পঁয়ত্রিশে পদার্পণ

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

৩৫ বছরে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রামের পাঠক সমাদৃত পত্রিকা দৈনিক পূর্বকোণ। ৩৫ বছর আগে যাত্রা শুরু করা দৈনিক পূর্বকোণ চট্টগ্রামের সংবাদপত্র জগতে আধুনিকতার সূচনা করেছিল। ক্ষুরধার লেখনী আর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মধ্য দিয়ে গত সাড়ে তিন দশকে পূর্বকোণ ঈর্ষণীয় পাঠকপ্রিয়তা যেমন পেয়েছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে অনেক মেধাবী লেখক ও খ্যাতিমান সংবাদকর্মী।

১৯৮৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টলদরদী আলহাজ মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক পূর্বকোণ। পথচলা শুরুর মাত্র আট বছরের মাথায় ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মূল্যায়নে দৈনিক পূর্বকোণকে সেরা আঞ্চলিক দৈনিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রামের পৃথক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বরাবর গুরুত্ব দিয়ে আসছে পূর্বকোণ। ৩৫ বছরে প্রবেশের দিনেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। দেশ ও জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে পত্রিকাটি। অতীতের ধারাবাহিকতায় সাহসী, নির্মোহ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা চর্চায় দৈনিক পূর্বকোণের অব্যাহত ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার।
আমরা আশা করি, দৈনিক পূর্বকোণ পাঠকের চাহিদা ও পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- পাঠকের মাঝে যেমন পৌঁছে দিতে সচেষ্ট হবে তেমানি গঠনমূলক সমালোচনাও আশা করি। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বিজ্ঞানমনস্ক ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম তৈরিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। অতীতের ন্যায় আগামী দিনেও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন এবং পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দেশ ও দশের উন্নয়নে নিবেদিত থাকবে বলে আশা করি।

সত্য প্রকাশে দৈনিক পূর্বকোণ সবসময় আপোষহীন। সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে দল, মত ও মতাদর্শিক বিশ্বাস স্থান পায় না। পাঠকপ্রিয় দৈনিকের জন্মদিনে আমাদের প্রত্যাশা, গণতন্ত্রের ভিত মজবুতকরণে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পূর্বকোণ আগামিতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে, সে বিশ^াস আমাদের আছে। পাঠক ও লেখক হিসেবে দৈনিক পূর্বকোণের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। কেননা এই পত্রিকা গণমানুষের কথা বলে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার যেসব দুর্বলতা আছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব দুর্নীতি চলছে, তাও বস্তুনিষ্ঠভাবে পত্রিকাটি তুলে ধরে। কারও কারও কাছে এটি নেতিবাচক মনে হতে পারে। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করি, যারা অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, এসব খবর তাদের আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি দাঁড় করায়।
আমাদের দেশে অনেক সমস্যা। এখনো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সব মানুষকে আমরা সাক্ষরজ্ঞান করতে পারিনি। এসব খবর যেমন পত্রিকায় আসে, তেমনি আসে অর্থনৈতিক উন্নতি-অগ্রগতির কথাও। বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যম এখন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। পূর্বকোণের সামনেও অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথমত আইনি চ্যালেঞ্জ আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। সেই সঙ্গে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সমাজে অসহিষ্ণুতা বেড়েছে। সমাজের সর্বত্র অসহিষ্ণুতা প্রকট রূপ নিয়েছে। এর ফলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। যুক্তির বদলে জবরদস্তি চলছে। এই পরিবেশে যেকোনো সংবাদমাধ্যমের পক্ষে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোর কাজটি কঠিন। তবে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চটকদার খবরের প্রলোভন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ও দেখেছি ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। অথচ যেই শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন করছিল, তাদের কেউ এসব গুজব ছড়ায়নি। সস্তা জনপ্রিয়তার মোহে যেন আমাদের পেয়ে না বসে, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। নুসরাত হত্যার বিচার আমাদের আশ্বস্ত করে। আবার তনু, মাহমুদা, সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে যেসব লেখক-প্রকাশক বা অন্য পেশার মানুষ খুন হয়েছে, কম ক্ষেত্রেই আমরা তার বিচার পেয়েছি। পূর্বকোণে বাংলাদেশের পাঠকের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি পত্রিকা। এটা এজন্য যে, সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে পত্রিকাটি সবসময় বস্তনিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেষ্টা করে। ৩৫তম জন্মদিনে পূর্বকোণ পরিবারের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। পাশাপাশি পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদেরও বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

মো: দিদারুল আলম কলাম লেখক ও প্রাবন্ধিক

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট