চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

নৌপথ সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা বিধানে চাই সুচিন্তিত পদক্ষেপ

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ১:০৫ পূর্বাহ্ণ

নৌপথই এখনো যাতায়াত এবং মালামাল পরিবহণের জন্যে সহজসাধ্য। কিন্তু নৌপথের আধুনিকায়ন এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তায় কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় পদে পদে হুমকিতে পড়ছে জননিরাপত্তা। আধুনিক অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় নৌপথের যাত্রীদের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। নৌদুর্ঘটনার পাশাপাশি জলদস্যুতাও নৌপথকে চরম ঝুঁকিতে ফেলছে। ফলে আরামদায়ক এবং স্বল্প খরচের ভ্রমণ ও স্বল্প খরচে পণ্য পরিবহনের সবচেয়ে অনুকূল হওয়া সত্ত্বেও নৌপথের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ পূর্বাপেক্ষা কমেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকার নৌপথের উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছে। নৌপথের গুরুত্ব বিবেচনায় নদীপথের সম্প্রসারণ ও নিরাপত্তার বিষয়ে সুচিন্তিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বলছে, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজারে লাইটহাউস থাকলেও তা বহু পুরাতন। সিংহভাগ যন্ত্র জরাজীর্ণ ও বিকল। আবার দক্ষিণ উপকূলভাগের কুয়াকাটা, নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর ও দুবলার চরসহ বঙ্গোপসাগরের উপকূল সন্নিকটবর্তী দ্বীপ বা উপদ্বীপে কোথাও কোন লাইটহাউস বা বাতিঘর নাই। নৌপথ সংক্রান্ত রেডিও স্টেশনগুলোর অবস্থাও বেহাল। নাই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধাও। বিশাল সমুদ্র উপকূল নজরদারীর জন্যে নিয়োজিত বাহিনী কোস্ট গার্ডেরও নেই পর্যাপ্ত জনবল, নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, নেই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ। দুর্গম এলাকায় নিরাপত্তাবাহিনীর অবস্থান সংহত না হওয়ায় প্রায়শই জলদস্যুদের আক্রমণের মুখে পড়ছেন মাছশিকারিরা। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমায় নৌ চলাচল উপযোগী নদ-নদীগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫৮ কিলোমিটার প্রধান নদী পথ। জলযান চলাচলে নিরাপত্তা দেয়া, চোরাচালান প্রতিরোধ, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন কাজে কোস্টগার্ড সেসব নদীপথে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে থাকে। এ ছাড়া সমুদ্র এলাকার প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা একান্ত অর্থনৈতিক জোন। কিন্তু এই বিশাল এলাকায় নজরদারির ক্ষমতা নেই কোস্টগার্ডের। উপকূলীয় অঞ্চলের ১৯টি জেলা নিয়ে প্রায় ৪৭ হাজার ২০১ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত। যা দেশের মোট স্থলভাগের প্রায় ৩২ ভাগ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ১৪ জন মানুষ বসবাস করে। আর এর মধ্যে ১২টি জেলার ৪৮টি উপজেলা সরাসরি সমুদ্রের এলাকায় যুক্ত। যেখানে বাস করে প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ৪৮২ জন। এসব এলাকার প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের অর্ধেকই মৎস্য আহরণের সঙ্গে জড়িত।

সুন্দরবনের নদ-নদীসহ জলভাগের আয়তন প্রায় ১৭০০ বর্গকিলোমিটার। কয়েক বছর ধরে এই বিশাল মৎস্য ভূমিতে চলছে জলদস্যুদের তান্ডব। তাদের লুটপাটে প্রায় প্রতিদিনই সর্বস্বান্ত হচ্ছে দেশের মৎস্যজীবীরা। হারাচ্ছে জলদস্যুদের নৃশংসতায় প্রাণও। জলপথে নিরাপত্তা বাড়াতে পারলে তাদের নিরাপত্তাও জোরদার হবে। প্রসঙ্গত, জেলেরা কেবল তাদের জীবিকার জন্যেই সমুদ্রে মাছ ধরে তা নয়। তাদের মৎস্য আহরণ আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতেও বিশাল ভূমিকা পালন করে। দেশের মানুষের জন্য নিয়মিত বাজারে মৎস্য-প্রোটিনের সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়াও দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা আনয়নের পেছনেও তাদের অসীম ভূমিকা রয়েছে। অথচ, দেশ ও জাতির জন্য এই কর্মকা- সম্পন্ন করতে গিয়ে এই মৎস্যজীবী শ্রমশক্তি অসহায়ভাবে মৃত্যুবরণ করছে জলদস্যুদের নির্মমতার কাছে। জলদস্যুদের নৃশংসতা এমনই অকল্পনীয় যে, তা বাস্তবতাকেও কখনও কখনও হার মানায়। উল্লেখ্য, সমুদ্রের তীর থেকে প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল অভ্যন্তরীণ সমুদ্র অঞ্চল বিস্তৃৃত। এ এলাকায় বাংলাদেশের সব অভ্যন্তরীণ আইন প্রযোজ্য। জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ, অবৈধ মৎস্য আহরণ, অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান প্রতিরোধ, ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য পরিচালনা, বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, মাদকদ্রব্য পাচার রোধ, সমদ্র ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা, নাশকতামূলক কার্যকলাপ দমন ও সমদ্রবন্দরের নিরাপত্তা বিধান কোস্টগার্ডের দায়িত্বের অন্তর্গত। কিন্তু কোস্টগার্ড গভীর সমুদ্রে যাওয়ার কাক্সিক্ষত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি এখনও।

সংগতকারণে আমরা মনে করি, নৌপথের বিস্তার উদ্যোগের পাশাপাশি সাগরচারী জেলেদের নিরাপত্তা বিধান এবং নৌপথের আধুনিকায়নে কার্যকর ব্যবস্থা দেখতে চাই, যাতে জেলে ও মৎস্যশ্রমিকরা নিশ্চিন্তে সমুদ্রভূমিতে যাতায়াত করে নিয়মিত জীবিকা ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের ধারাবাহিকতা সচল রাখতে পারেন এবং প্রাণহানীসহ কোনো রকমের ঝুঁকিতে না পড়েন নৌপথ ব্যবহারকারীরা।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট