চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

বিবিরহাট গরু বাজার

উৎকন্ঠার বেড়াজালে পশুর হাট

ইমরান বিন ছবুর

১৫ জুলাই, ২০২০ | ২:১৪ অপরাহ্ণ

প্রতি বছর কোরবানি ঈদের চাঁদ দেখা যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কোরবানির জন্য পশু আসতে শুরু করে চট্টগ্রামে। এবছর এখনো পশুর জন্য যাননি বলে জানান বিবিরহাটের বেশ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী। আদৌ যাবেন কিনা বা কখন যাবেন সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন তারা। করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় গরু (পশু) কম বিক্রি হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। গত বছর কোরবানিতে প্রায় দুই লাখের মত পশু বিক্রি হলেও এবছর কম বিক্রি হওয়ার আশঙ্কা করছেন ইজারাদাররা।

সরেজমিনে বিবিরহাট গরু বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এখনো বাজার পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়নি। তবে প্রস্তুত করার জন্য বাঁশসহ যাবতীয় মালামাল এনে রাখা হয়েছে। পশু বাঁধার জন্য কিছু কিছু বাঁশ লাগানো হয়েছে। বাজারের ম্যানেজার মঈনুল হাসান জানান, প্রতিবছর ইতোমধ্যে বাজার প্রস্তুত করা হলেও করোনার কারণে এবছর এখনো প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। অনেক গরু ব্যবসায়ী লোকসানের ভয়ে গরু ব্যবসা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান তিনি। বিবিরহাটের গরু ব্যবসায়ী মো. আলী হায়দার ইমন জানান, ‘প্রতি বছর কোরবানির আগে যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, পাবনা, কুমিল্লা, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গরু এনে বিক্রি করি। গত বছরও সাত থেকে আটটি গাড়িতে প্রায় ১৫০-১৬০টি গরু এনে বিক্রি করেছিলাম। এবছর গরু আনতে যাবো কিনা সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। দাম কম হলে কিছু সংখ্যক গরু আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, অনেকে অনলাইনে গরু বিক্রির কথা বলছে। হাটে এসে যেভাবে অনেকগুলো গরু দেখে পছন্দের গরুটি কিনতে পারে, অনলাইনে কি সেই সুযোগ আছে? অনলাইনে গরু কিনে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরকার অনুমতি দিলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু বিক্রি করবো। আগের কিছু গরুও অবিক্রিত রয়েছে। সরকার হাট বসার অনুমতি না দিলে আমরা গরু ব্যবসায়ীরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখিন হবো।
প্রায় ১৫ বছর ধরে বিবিরহাটে গরুর ব্যবসা করছেন মো. ইসমাইল। কথা হলে তিনি পূর্বকোণকে জানান, ‘আমরা মূলত উত্তর বঙ্গ থেকে গরু এনে বিক্রি করি। আসলে এবছর গরু আনবো কিনা সেটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনিতে কয়েকদিনের মধ্যে উত্তর বঙ্গে যাবো। দাম ঠিক থাকলে, মার্কেট বুঝে কিছু গরু আনবো। অন্যতায় এবার গরু আনবো না।
তিনি আরও জানান, ঈদুল আজহার চাঁদ দেখা যাওয়ার দুই থেকে চার দিন আগে থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে গরু আসতে শুরু করে। আবার অনেকে চাঁদ দেখা যাওয়ার পর গরু আনে। প্রতি বছর কোরবানির ঈদে বিবিরহাটে প্রায় দুই লাখের মত গরু বিক্রি হয়। এবার সেই পরিমাণ হবে কিনা সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান।
বিবিরহাটের ইজারাদার মো. আরিফুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছর এই সময়ের মধ্যে হাটে গরু রাখার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও, এবছর এখনো প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি। গরু ব্যবসায়ীরা এবছর গরু আনবে কিনা সেটা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তাই এবছর কী পরিমাণ গরু হাটে উঠবে সেটা বুঝতে পারছি না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসানোর জন্য ইতোমধ্যে আমাদের যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে এক বছরের জন্য দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিবিরহাট ইজারা নিয়েছি। লিজ নেয়ার পর থেকে একটি টাকাও ইনকাম হয়নি। নিজের পকেট থেকে কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। এভাবে চললে তো আমি ফকির হয়ে যাবো। ব্যাংক ঋণ নেয়াসহ বিভিন্নভাবে বাজার লিজ নিয়েছি। এখন আয় নেই, এরপরও ব্যাংক ঋণ শোধ করতে হচ্ছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা জানান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ইতোমধ্যে নগরীতে চারটি পশুর হাট বসানোর জন্য অনুমোদন চেয়েছে। সেগুলো হলো, কমল মহাজন হাট, সল্টগোলা গরু বাজার, বাটারফ্লাই পার্কের পাশে টিকে গ্রুপের মাঠ ও কর্ণফুলী নুর নগর হাউজিং মাঠ। এরমধ্যে তিনটি বাজার ইজারা দেওয়া হলেও নুর নগর হাউজিং মাঠের কোন দরপত্র জমা না পড়াতে এখনো ইজারা হয়নি।
বিবিরহাটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি গত এপ্রিলে এক বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। তাই সেখানে কোরবানির জন্য পশুর বাজার বসাতে নতুন করে অনুমতির প্রয়োজন নেই।
পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট