চট্টগ্রাম শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

গুইমারায় চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই

শাহ আলম রানা হ গুইমারা

৬ মার্চ, ২০২০ | ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগরে বিজিবির গুলিতে ১ বিজিবি সদস্য ও ৫ গ্রামবাসীসহ ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পার্বত্যাঞ্চলে উত্তেজনার রেশ না কাটতেই আবারও ঘটল প্রাণহানীর ঘটনা। খাগড়াছড়ির গুইমারাতে মোটরসাইকেল চালক আকিব উদ্দিন রাকিব (১৮) কে অপহরণ করে হত্যা ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গুইমারা উপজেলা। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল ৮ টায় ঘটনার প্রতিবাদে জালিয়াপাড়া চৌরাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ। এসময় পুলিশ বহনকারী

একটি মাহিন্দ্র পিকআপসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে উত্তেজিত জনতা। এ ঘটনায় ২ জন আহত হয়েছে। গুইমারা থানার ওসি বিদ্যুৎ বড়ুয়ার অবহেলাকে দায়ী করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছে নিহত রাকিবের পরিবারসহ স্থানীয়রা। অবরোধের কারণে দুর্ভোগে পড়ে দূর পাল্লার যাত্রীরা। এদিকে দুপুর ২ টার দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুবিচারের আশ্বাসে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জেলার মাটিরাঙ্গার পার্শ¦বর্তী উপজেলা গুইমারা কালাপানি এলাকার ইকবাল হোসেনের ছেলে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক আকিব উদ্দিন (১৮) কে যাত্রী বেশে দুই উপজাতীয় যুবক অপহরণ করে হত্যা ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দুই ঘটনায় পার্বত্যাঞ্চল এখন ক্রমশ উত্তপ্ত উঠে উঠছে। পাহাড়ি যুবক কর্তৃক বাঙালি মোটর সাইকেল চালক হত্যার ঘটনায় সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আংশকায় এখন পার্বত্যজেলা খাগড়াছড়ি।
জানা যায়, ৩ মার্চ (মঙ্গলবার) রাতে পাহাড়ি জুয়ার মেলায় আগত ওয়াংচিং মারমা ও সাচিং মারমা নামের দুই ঘাতক যাত্রী হিসেবে মোটরসাইকেল চালক আকিব উদ্দিন (১৮) কে ভাড়া করে। তারা সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ আমতলপাড়া এলাকায় আকিবকে গলাটিপে হত্যা করে তার মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে মহালছড়ি এলাকায় পালিয়ে যায়।
নিহত আকিব উদ্দিনের পিতা ইকবাল হোসেন জানান, ঘটনার রাতে একই এলাকার মন্টিং মারমার ছেলে সাচিং মারমা মোটরসাইকেল ভাড়ার কথা বলে আকিবকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে উভয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় থাকায় ৪ মার্চ সকালে তিনি পার্শ্ববর্তী লোকজনকে বিষয়টি জানান। পরে তিনি গুইমারায় বেশ কয়েকবার অভিযোগ করতে গেলে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়–য়া অভিযোগ না নিয়ে পাল্টা অশ্লীল কথাবার্তা বলে তাকে পাগল বলে বের করে দেন। নিরুপায় হয়ে তিনি বিষয়টি সেনাবাহিনীকে অবগত করেন এবং ‘৯৯৯’ এ কল দিলে রাত ১২ টায় ওসি অভিযোগটি অপহরণ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হন।
আকিব উদ্দিনের পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে গুইমারা থানা পুলিশ বুধবার রাত ৩টায় মহালছড়ি উপজেলা থেকে দুই ঘাতককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার করা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে সিন্দুকছড়ির ৯ নং ওয়ার্ডের আমতলপাড়া এলাকা থেকে নিহত আকিবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আকিবের লাশ ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়–য়া নিশ্চিত করেন।
এদিকে বাঙালি মোটরসাইকেল চালককে হত্যা ও মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকেই খাগড়াছড়ি- ফেনী-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের জালিয়াপাড়া চৌরাস্তায় স্থানীয় বাঙালিরা সমবেত হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে করে। এতে বেশ কয়েক ঘণ্টা খাগড়াছড়ি’র সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। এ সময় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। দুই পাশে আটকা পড়া যাত্রীবাহী বাসে থাকা কয়েকজন উপজাতীয় যাত্রীকে মারধর করে উত্তেজিত জনতা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোটরসাইকেল চালককে অপহরণ ও হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় গুইমারা থানার ওসির অবহেলা ও অশ্লীল ব্যবহার করায় জালিয়াপাড়ায় চৌরাস্তায় স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়–য়ার অপসারণ দাবি করে পুলিশবক্সের ভিতরে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এই হত্যাকা-ের ঘটনায় গুইমারা উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়, এছাড়া সেনাবাহিনী টহল দিতে দেখা যায়।
আকিব হত্যার ঘটনায় তার বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গণ্য করে তদন্ত করা হবে বলে জানান ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়–য়া। খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাউদ্দিনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ গুইমারায় অবস্থান করছিলেন বলেও জানান তিনি।
এদিকে, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার আহমেদ জানান, এখন পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। বেলা পৌনে ২টার দিকে রাস্তার অবরোধও তুলে নিয়েছে গ্রামবাসী।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট