অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ছেন পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা। এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ মোট ১০১টি পদের বিপরীতে লোকবল আছে মাত্র ৪৯ জন। ফলে উপজেলার বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়াও উপজেলার ২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রেও নেই কোনো চিকিৎসক। জানা গেছে, ৭টি ইউনিয়নের ১ লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার স্থান লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতাল উন্নতি হয়েছে ৫০ শয্যায়। নতুন ভবনের কার্যক্রম শেষ হলেও উদ্বোধন হয়নি এখনো। ফলে চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন সংকটে পড়ছে রোগীরা। জরুরি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে খাগড়াছড়ি সদর কিংবা চট্টগ্রাম। গুনতে হচ্ছে প্রচুর অর্থ ও সময়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি, অ্যানেসথেসিয়া এবং মেডিক্যাল অফিসারের ৯টি পদসহ সবই শূন্য। এছাড়া আটটি সিনিয়র স্টাফ নার্স, দুটি মিডওয়াইফ, দুটি মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, সাতটি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার ও দুটি স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ শূন্য রয়েছে। অন্যদিকে চারটি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, একটি ক্যাশিয়ার, একটি সহকারী নার্স, সাতটি স্বাস্থ্য সহকারী, একটি সহকারী বাগানমালি, তিনটি অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারটের ও ১৪টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ শূন্য আছে।
এতো সব শূন্যতার মাঝেও বর্হিবিভাগ ও অন্তঃবিভাগে নিয়মিত রোগীদের চাপ সামাল দিতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এছাড়াও চিকিৎসকের অভাবে ইসিজি ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে পারছেন না গরিব রোগীরা। নেই এক্সরে সুবিধা। হাসপাতালের একটিমাত্র এম্বুলেন্স যা প্রায় সময় নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে গ্যারেজে। মাঝেমধ্যে ঠিক হলেও রোগীর আত্মীয়দের সাথে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। কোটি টাকার নৌ এম্বুলেন্সটিও নষ্ট হয়ে নদীতে পড়ে আছে দীর্ঘসময় ধরে। হাসপাতালটিতে বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাদহীন খাবারের সাথে জরাজীর্ণ অবকাঠামো বেশ ভোগান্তিতে ফেলছে রোগীদের।
এছাড়া সংস্কার কাজ দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকায় চলাচলের রাস্তা, বারান্দা ও বেলকনিতে রাখা হয়েছে রোগীদের। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বরাদ্দকৃত আসন না দেওয়া, প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং সময়মতো চিকিৎসক না থাকার অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয়রা। রোগী ও স্বজনরা জানান, হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতির অভিযোগ। ২-১ জনের বেশি ডাক্তারের দেখা মিলে না হাসপাতালে। অপরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম, খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্সরে নেই অনেক বছর ধরে। তবে এক্সরে টেকনেশিয়ান আছে। বাংলাদেশের কোন হাসপাতালেই শতভাগ কিছুই থাকে না। তবে বেশিরভাগ ওষুধই আছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখানে আছে ৩ জন। ১৩ জন নার্স থাকার কথা বর্তমানে নার্স ৮ জন। তবে আমার অফিসে পিয়ন, নাইটগার্ড, ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্টাফের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, সব বিষয় আমার জানা নাই। তবে কিছু বিষয়ে অবগত আছি। অন্যান্য বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবো।
পূর্বকোণ/ইব