চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

সর্বশেষ:

সোনালি ধানে মাতোয়ারা কৃষক

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ

দিগন্তজুড়ে মাঠে দোল খাচ্ছে পাকা ধান। সোনালি ধানে মাতোয়ারা কৃষক। কোথাও চলছে ধান কাটা। আর কোথাও চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। কৃষকের ঘরে ঘরে এখন উৎসবের আমেজ। চলতি মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। এতে আমন চাষাবাদ ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। দুশ্চিন্তা কাটিয়ে আমন চাষাবাদ বাড়াতে কৃষকদের সার ও বীজ সহায়তা দেয় সরকার।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, রোপা আমনে বন্যার বড় ধাক্কা কাটিয়ে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। দুর্যোগের কারণে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা বিঘ্নিত হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ হেক্টর জমিতে আমন রোপণ করা হয়। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ ১০ হাজার ২৭২ টনের বেশি।

 

আমন কাটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে ভালো ফলনের আশা করছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ। তারা জানান, আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছেন। বোয়ালখালী উপজেলার আমুচিয়া এলাকার কৃষক মো. কামরুল বলেন, তিন কানি জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন। এখন পর্যন্ত এক কানির বেশি ধান কেটেছেন। ভালো ফলনে খুশি তিনি। দেখা যায়, দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ দক্ষিণা বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানে। পাকা ধানের গন্ধে কৃষকের চোখে এখন তৃপ্তির আনন্দ।

 

গত সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন স্থানে ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধান কাটা, মাড়াইয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। বোয়ালখালী সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় পুরোদমে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিলে বিলে ধান কাটা ও মাড়াই চলছে। চলতি বছর উপজেলায় ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অতিবৃষ্টি ও বন্যায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আতিক উল্লাহ। তিনি বলেন, এবার ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-১০৩ জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালো ধান হয়েছে।

 

উপজেলার রায়খালী এলাকার কৃষক মো. হোসেন বলেন, ব্রি-১০৩ জাতের ধানে ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলার আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়নের সাদারপাড়া বিল, ভূরি বিল ও আমুচিয়ার পূর্ব ধোরলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিলে এখন পাকা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামের বিলগুলোতে আমন কাটা প্রায় শেষ। চলছে মাড়াইয়ের কাজ। কৃষক আবদুল জলিল জানান, চাষের খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঋণ করতে হয়েছে। এরমধ্যে অতিবৃষ্টি আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকটে মজুরি বেশি দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

 

আনোয়ারা সংবাদদাতা জানান, উপজেলার ১১ ইউনিয়নের মাঠে মাঠে সোনালি ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকদের মনে আনন্দ বিরাজ করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশানুরূপ ফলন হয়েছে। কৃষক আজিবুল হক বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় কম সময়ের মধ্যেই ধান পাকতে শুরু করেছে। তাই অগ্রহায়ণ মাসের শুরুতে অনেকে আমন ধান কাটা শুরু করেছে। সব খরচ বাদ দিয়ে এই বছর লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, আমন মৌসুমে কম সময়ে অধিক ফলন হয় এমন জাতের ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।

 

হাটহাজারী সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও বাম্পার ফলনে খুশি চাষিরা। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এবার ৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৭০০ হেক্টর। এই উপজেলায় বন্যায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আল মামুন শিকদার বলেন, এবার ভালো ধান হয়েছে। পুষ্টিও আছে ধানে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে।

 

পূর্বকোণ/ইব

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট