কক্সবাজারে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের চ্যানেলে চলাচলরত একটি বালুবাহী বার্জে হামলা চালিয়েছে জলদস্যুরা। এসময় তারা অস্ত্রের মুখে ৭ নাবিককে বেঁধে মারধর করে ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাতারবাড়ি বন্দর চ্যানেলের সরাইতলীর দক্ষিণ পাশে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি আজ জানাজানি হয়।
জানা গেছে, এম.ভি. মালেক-৩ নামের এই বার্জটি সিলেট থেকে মীর আক্তার কোম্পানির জন্য স্থানীয় সাব ঠিকাদার মোস্তফা কামালের বালু নিয়ে মাতারবাড়ি আসছিল। বার্জটি যখন ধলঘাট এলাকায় নোঙর করে, তখন ২০/২২ জনের একটি জলদস্যু দল দুটি ট্রলার নিয়ে এসে বার্জে হামলা চালায়। তারা বার্জে থাকা লোকজনকে মারধর করে বেঁধে রাখে এবং মোবাইল ফোন, তেলসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এই ঘটনার পর কোস্ট গার্ডের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বার্জে থাকা লোকজনকে উদ্ধার করে।
মহেশখালীর মাতারবাড়ি বন্দরে সংঘটিত বার্জ ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী সাব ঠিকাদার মোস্তফা কামাল ও বোরহান উদ্দিন জানান, মেসার্স আর.আর. এম ইন্টারপ্রাইজের এম.ভি মালেক-৩ ভলগেটের মাধ্যমে মীর আক্তার কোম্পানির জন্য সিলেট সেন্ট বালি আনলে তা মাতারবাড়ি বন্দর চ্যানেলে জলদস্যুর কবলে পড়ে। মাতারবাড়ি বন্দরে পৌঁছালে জলদস্যুরা তাদের বার্জে হামলা চালায়। এই হামলায় বার্জে থাকা ৭ জন কর্মচারীকে মারধর করা হয় এবং প্রায় ১০ লাখ টাকার মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।
তারা জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে মাতারবাড়ির সাইরার ডেইল এলাকার শহিদ বাদশা, মোস্তাক, বাড়ুর ছেলে হামিদসহ আরও অনেকেই এই ডাকাতির ঘটনায় জড়িত। এরকম ডাকাতির ঘটনায় এর আগে আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসীও জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র, চর, মাছের ঘের, বন্দরের আশেপাশে নানা ডাকাতিতে ইন্ধনে জড়িত আছে।
সাব ঠিকাদার মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এই সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রসহ বিভিন্ন ডাকাতিতে জড়িত। আমি এই ঘটনার বিষয়ে কোস্ট গার্ড এবং মাতারবাড়ি থানা পুলিশে অভিযোগ করেছি এবং মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
কোস্ট গার্ডের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বার্জে থাকা লোকদের উদ্ধার করেছে। কোস্ট গার্ডের প্রধান এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মাতারবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের আইসি রাজীব চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্দর এলাকায় এভাবে জলদস্যুদের দ্বারা ডাকাতির ঘটনায় মাতারবাড়ি বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর ঘাটতির প্রমাণ দেয়। এতে নাবিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাতারবাড়ি বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা না হলে এ ধরনের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। তাদের মতে, বন্দর এলাকায় আরও বেশি সংখ্যক কোস্ট গার্ডের নৌকা এবং পুলিশের টহল বাড়াতে হবে।
স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি, মাতারবাড়ি বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
পূর্বকোণ/পিআর/পারভেজ