চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

আনোয়ারায় হাতির আক্রমণে প্রাণ গেল দু’জনের

আনোয়ারা সংবাদদাতা

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ১:৫১ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় হাতির আক্রমণে প্রাণ গেল এক মহিলাসহ দু’জনের। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলা বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক আশ্রয়ণ প্রকল্প ও পূর্ব বৈরাগ খোশাল তালুকদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

 

মৃত দু’জন হলেন- বৈরাগ ইউনিয়নে উত্তর গুয়াপঞ্চক ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মুজিবুর হকের ছেলে মো. কাশেম (প্রকাশ দুলাল) (৬০) ও পূর্ব বৈরাগ ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. আক্তারের স্ত্রী রেহেনা আক্তার (৩৮)।

 

নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, দিনমজুর দুলালের নিজের কোনো জায়গা না থাকায় সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করে আসছেন। গত কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় হাতির আনাগোনা বেড়ে গেছে। খাবারের সন্ধানে আসা একপাল হাতি আশ্রয়ণ প্রকল্পে আক্রমণ করে। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে অভাবের সংসারে তিনি ছিলেন একমাত্র রোজগেরে। স্বজনরা তাকে হারিয়ে হাহাকার করছেন। তাদের সংসারটা ভেসে গেল।

 

অন্যদিকে, হাতিগুলো সেখান থেকে বের হয়ে বৈরাগ খোশাল তালুকদার বাড়ি এলাকায় গেলে সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশেষ কাজে ওই নারীকে ঘর থেকে বের হলে শুঁড়ে পেঁচিয়ে ছুড়ে মারলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

 

স্থানীয় বৈরাগ ইউপি চেয়ারম্যান মো. নোয়াব আলী বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে কেইপিজেডে অবস্থান নেওয়া হাতির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ পুরো আনোয়ারা-কর্ণফুলীবাসী। বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চল বৈরাগ ইউনিয়ন এবং বড়উঠানের দৌলতপুরে। প্রতিনিয়ত লোকালয়ে ঢুকে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, ফসলি জমি নষ্টসহ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। বছরের পর বছর তাণ্ডব চললেও বনবিভাগ দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শুধু ক্ষতিপূরণ দিয়ে দায় সারছেন। আজকেও অসহায় এক দিনমজুর নিহত হলো। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

 

জানা যায়, দেয়াং পাহাড় ঘেরা ওই এলাকায় ২০১২-১৩ সাল থেকেই হাতির আনাগোনা বেশি। আগেও হাতির আসা-যাওয়া ছিল, তবে তখন তুলনামূলক কম ছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগের ভাষ্য।

 

হাতির পালটি আনোয়ারার বটতলী হাজীগাঁও ও কর্ণফুলীর কেইপিজেডের দেয়াঙ পাহাড়, হ্রদ ও বন ঘেরা জায়গায় বিচরণ। তাদের হামলায় ফসলের ক্ষতি হচ্ছে, যাচ্ছে মানুষের প্রাণ। সম্প্রতি নবনির্মিত টানেল রোড পারাপারের ঘটনায় আবারও আলোচনায় এসেছে সেই হাতির পাল।

 

কয়েকদিন আগে রাতে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত অ্যাপ্রোচ রোডের পশ্চিম বৈরাগ অংশ পার হয় ওই পালের তিনটি হাতি। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগেও কয়েকবার একটি হাতি পারাপারের ভিডিও আলোচনায় আসে।

 

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ২০১৮ সালের শেষ দিকে ওই হাতির দলটি স্থায়ীভাবে কেইপিজেড এলাকায় বসবাস শুরু করে। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে হাতির আক্রমণে ওই এলাকায় মানুষের প্রথম মৃত্যু হয়। শুরুতে এই দলে দুটি বড় এবং একটি ছোট হাতি ছিল। মাঝে মাঝে আরো একটি বড় আকারের হাতিকে এ দলের সাথে দেখা যায়। স্থানীয়দের কাছে সেটি ‘লেজ কাটা’হাতি নামে পরিচিত। এই হাতির দলের তাণ্ডবে সবসময় আতঙ্কে থাকেন কর্ণফুলীর বড়উঠান ও আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের মানুষরা। ধান ও কলা গাছসহ খাবারের খোঁজে প্রায় রাতেই হানা দেয় হাতি।

 

এছাড়া হাতির আক্রমণে আহত হয়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধাসহ শতাধিক মানুষ। নিহত হয়েছে দুই উপজেলার প্রায় শিশুসহ ২১ জন নারী ও পুরুষ। এর আগে গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের এক বৃদ্ধও প্রাণ হারান হাতির আক্রমণে। কয়েকদিন ধরে দিনের বেলায় কেইপিজেডের লেক ও সড়কে হাতির বিচরণ দেখা গেলেও টনক নড়ছে বন বিভাগের।

 

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেন, হাতির আক্রমণে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক উপকারভোগী ও বৈরাগ এক মহিলা নিহত হয়েছেন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে।

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট