চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

‘অনুগতদের’ নিয়ে কৌশলী মন্ত্রী-এমপিরা

মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

২১ এপ্রিল, ২০২৪ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটিয়া ও সাতকানিয়া আসনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উপজেলা চেয়ারম্যানেরা। সীতাকুসন্ড আসনেও এমপি হন উপজেলা চেয়ারম্যান। ফটিকছড়ি ও চন্দনাইশ আসনেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা চেয়ারম্যানেরা।

আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিন উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তারা। সেই অভিজ্ঞতায় পথের কাঁটা সৃষ্টি করতে চান না মন্ত্রী-এমপিরা। নিজেদের অনুগত ও ঘনিষ্ঠজনদের বসাতে চান মিনি সংসদখ্যাত উপজেলা নির্বাচনে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শুরু হয়েছে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের উপজেলা নির্বাচন। এই নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি। তাই জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে এবার দলীয় প্রার্থী না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে দলটি। কিন্তু বাধ সেধেছে মন্ত্রী-এমপিরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে নানা বিপত্তি সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করায় দলের মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের আত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

প্রথম ধাপে ভোটগ্রহণ করা হবে ৮ মে। এই ধাপে জেলার মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ প্রার্থীর সবাই আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারী নেতা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন উপজেলার সংসদ সদস্যদের ঘনিষ্ঠজনেরা এমপিদের নাম ভাঙিয়ে মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কর্মী-সমর্থকদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন।

গত কয়েকদিন ধরে কথা হয় বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, দলীয় প্রধান অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিভিন্ন আসনের মন্ত্রী-এমপিরা নিজেদের অনুগত ও পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে কাজ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরসরাই, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা ঘনিষ্ঠজনদের নিয়ে কৌশলে এগুচ্ছেন। মন্ত্রী-এমপি ছাড়াও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাও ঘনিষ্ঠদের নিয়ে এগুচ্ছেন।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের ‘ঘনিষ্ঠ-অনুগতদের’ নিয়ে তৃণমূলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। দল ও দলীয় প্রধান নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তার না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় প্রধানের কঠোর হুঁশিয়ারির পরও ‘অনুগতদের’ নিয়ে কৌশলে এগুচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরা।

মিরসরাই, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, আনোয়ারা আসনের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, নেতাকর্মীদের ডেকে নিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার ইঙ্গিত দিচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরা। ভোটের আগেই প্রভাব বিস্তার শুরু করেছেন। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে কোন্দল চরম রূপ নিয়েছিল। তৃণমূল পর্যায়ে এখনও সেই দ্ব›দ্ব জিইয়ে রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে উপজেলা নির্বাচনে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠজনেরা ‘মৌন সম্মতি’ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা প্রচার করছেন। শুধু তাই নয়, জেলা-উপজেলাভিত্তিক প্রভাবশালী নেতাদের নামও প্রচার করছেন অনেকেই।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন পাঁচ উপজেলা চেয়ারম্যান। এর মধ্যে পটিয়ায় মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সীতাকুন্ড আসনে এসএম আল মামুন নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। সাতকানিয়া আসনে এম এ মোতালেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন। এছাড়াও দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চন্দনাইশ আসনে আবদুল জব্বার, ফটিকছড়ি আসনে হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব। বাঁশখালীতে চৌধুরী মো. গালিব নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেও শেষে সরে দাঁড়ান। এ কারণেই মন্ত্রী ও এমপির মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ঘিরে এক ধরনের ভীতি ও আতঙ্ক কাজ করছে।

কেউ কেউ গত সংসদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে পারছেন না। তাই তাদের ধারণা, নিজের নির্বাচনী এলাকার উপজেলায় অপছন্দের লোক নির্বাচিত হলে আগামী দিনে অনেকটা নির্ভার থাকবেন এমপিরা। সরকারি বরাদ্দ বা দলীয় প্রভাব বিস্তারে এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে বড় ধরনের বিরোধ সৃষ্টি হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রধান প্রতিপক্ষ হবে না।

পূর্বকোণ/এসএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট