চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সর্বশেষ:

কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনে প্রথমবার এল ট্রেন

কক্সবাজার সংবাদদাতা

৫ নভেম্বর, ২০২৩ | ১১:২০ অপরাহ্ণ

কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের রেল অবশেষে কক্সবাজার এসে পৌঁছল। চট্টগ্রাম স্টেশন হয়ে কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনে পৌঁছায় রবিবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে।

 

এর আগে একইদিন সকাল ৯টা ২ মিনিটে সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৪৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথের যাত্রা শুরু হয়।

 

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ষোলশহর স্টেশন, জ্বালানিহাট রেলস্টেশন, সংস্কার করা শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু পার হয় ট্রেনটি। এরপর বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ এলাকা পার হয়ে দোহাজারী স্টেশনে। সেখান (দোহাজারী) থেকেই মূলত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। দোহাজারী স্টেশন থেকে স্বপ্নের এই ট্রেন যায় সাতকানিয়া, লোহাগাড়ার চুনতি অভয়ারণ্য হয়ে চকরিয়া; চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজারে নবনির্মিত আইকনিক স্টেশনে পৌঁছে সন্ধ্যায়।

 

নবনির্মিত রেল লাইনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন ও কোনো ক্রটি আছে কি না যাচাই করতে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কক্সবাজার রুটে এই বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ৮টি বগি নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন হয়ে কক্সবাজারের আইকনিক রেল স্টেশনে পৌঁছায়।

 

এর আগে, একই দিন সকাল ৯টায় বিশেষ ট্রেনটি চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ছেড়ে আসে। ট্রেনটিতে রেলওয়ে পরিদর্শন বিভাগের একটি বিশেষ টিম ছিল। তারা দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন এবং বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করেন।

 

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটিতে ছিলেন রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা কক্সবাজারে অবস্থান করবেন। ৬ নভেম্বর ( সোমবার) ওই টিম কক্সবাজার রেল স্টেশন ইয়ার্ড পরিদর্শন করবেন। ৭ নভেম্বর সকাল ৭টায় টিমটি চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে।

 

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি), বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি, চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড পৃথক দুই ভাগে কাজটি করছে। এতে অনেক শ্রমিক রাতদিন কাজ করে আইকনিক স্টেশনসহ রেল লাইনের কাজ শেষ করেন।

 

তিনি আরও বলেন, আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজার এসেছে একটি ট্রেন। ট্রেনটিতে পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। এ যাত্রায় নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করেন তারা। উদ্বোধনের আগে খুঁটিনাটি সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ইন্সপেকশন টিম। সন্ধ্যা ৬টা ২০মিনিটে ট্রেন কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে এসে পৌঁছায়।

 

প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন বলেন, আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার আসার কথা রয়েছে। এদিন সমাবেশের পর কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন পরিদর্শনের পাশাপাশি রেললাইন উদ্বোধন করবেন।

 

বাণিজ্যিকভাবে কখন এই রেললাইনে ট্রেন চালু হবে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি রেলমন্ত্রী জানাবেন। নতুন ট্রেনের প্রস্তাবিত নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। নাম তিনি নির্ধারণ করবেন বলেও জানিয়েছেন সুবক্তগীন।

 

প্রকল্পের নথির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ৬ জুলাই দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। পরে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মেগা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মেগা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পরে অর্থায়ন সংক্রান্ত জটিলতায় বেশকিছু দিন প্রকল্পটি থমকে থাকার পর ২০১৫ সালে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্ন্তজাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। দোহাজারী-চকরিয়া এবং চকরিয়া-কক্সবাজার (লট-১ ও লট-২) এই দুই লটে চীনা প্রতিষ্ঠান সিআরসি (চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) ও দেশীয় তমা কনসট্র্যাকসন্স কোম্পানি ২৬৮৮ কোটি টাকা এবং চীনা প্রতিষ্ঠান সিসিইসসিসি ও দেশীয় ম্যাক্স কনসট্র্যাকসন্স ৩৫০২ কোটি টাকায় যথাক্রমে : এক ও দুই নম্বর লটের কাজ পায়। পরবর্তী সময়ে ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৭ সালে এই মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

 

পূর্বকোণ/আরাফাত/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট