করোনাকালে নগরের বাসায় বন্দী না থেকে গ্রামে এসে কোরবানির জন্য একটি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন আনসারুল হক সুমন। উপজেলার ঝিওরি এলাকায় ৫০ বিঘা জমিতে ‘এলএন এগ্রো ফার্ম’ নামে একটি খামার গড়ে তোলেন পর্যায়ক্রমে।
খামারের পুকুরে তিনি চাষ করেন পাঙ্গাশ, শিং, কই, বাটা ও কার্পজাতীয় মাছ। একই সঙ্গে খামারে পালন করেন মুরগি, হাঁস ও গরু। এ বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করেন তিনি। প্রায় ৩০টি নেপালি, ভারতীয় ও দেশীয় জাতের গরু পালন করছেন। সব মিলিয়ে এখন একজন সফল খামারি। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকার গরু।
এলএন এগ্রো ফার্ম মালিক আনসারুল হক সুমন বলেন, ‘গরুকে প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাসকলাই, ভুষিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। আবার প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা গরুর চাহিদা থাকে বেশি এবং দামও পাওয়া যায় ভালো।’ তিনি আরো বলেন, এ বছর গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু লালন-পালনে খরচ বেড়ে গেছে আমাদের। ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ৩০টি গরু খামারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব ভালো থাকলে আশা করছি লাভবান হবো। প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, উপজেলায় ৩০০টি খামার রয়েছে।
কোরবানি উপলক্ষে উপজেলায় এ বছর ৬০ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। এদিকে কোরবানির পশু নিরাপদ করতে গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে খামারিদের কাউন্সিলিং ও পরামর্শ, খামারে খামারে তদারকি করছে প্রাণিসম্পদ অফিস।
গরু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, বর্তমানে বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। সেই হিসাবে তিন মণ ওজনের একটি গরুর দাম পড়েছে লাখ টাকার মত।
তবে ঈদুল আযহার আগে গরুর মাংসের বাজার ওঠানামা করার কারণে গরুর দামও উঠানামা করে। উপজেলা ডেইরি এসোসিয়েশেনের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান বলেন, আনোয়ারায় কোরবানিকে সামনে রেখে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার গরু প্রস্তুত করেছে খামারিরা। কিন্তু ভারত ও মায়ানমার থেকে গরু নিয়ে আসার কারণে খামারিরা ক্ষতিতে পড়ে। গো-খাদ্যের দামও বেশি। অনেক খামারি সর্বস্ব হারিয়ে এখন পথে বসেছে। এসব কিছুর জন্য সিন্ডিকেটচক্রই দায়ী। আমরা সরকারের কাছে অনেকবার স্মারকলিপি দিয়ে কোন প্রতিকার পাইনি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সমর রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘খামারিরা যাতে কোন প্রকার পাম ট্যাবলেট, স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। খামারিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত।’
তিনি আরো জানান, আনোয়ারায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পশু কোরবানি করে থাকেন। গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলে ৩০০টি খামার রয়েছে। এছাড়াও অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও পশু পালন করেন। এবার কোরবানের জন্য ৬০ হাজার পশু প্রস্তুত করা হচ্ছে। চাহিদা বাড়লেও পশু সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর দামও বাড়তি থাকতে পারে।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ