চট্টগ্রাম শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪

সর্বশেষ:

পাহাড়ে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৩১ অপরাহ্ণ

যুগের পর যুগ ধরে পটিয়ার পাহাড়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ‘গ্যাস’ জ্বললেও তা উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ নেই। গত ৭২ বছর ধরে বাতাসে উধাও হয়ে যাচ্ছে হাজার কোটি টাকার এ প্রাকৃতিক সম্পদ। ফলে ফুরিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের বিশাল মজুদ। পটিয়ার বুদবুদি ছড়ার এ গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের গ্যাসের সংকট অনেকটাই নিরসন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

 

১৯৫০ সালে পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও গ্রামের পাহাড়ি এলাকা বুদবুদি ছড়ায় এই গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বুদবুদি ছড়া থেকে গ্যাস উত্তোলনে উদ্যোগ নেয়। সে সময় বার্মা (মিয়ানমার) অয়েল কোম্পানি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করে গ্যাস উত্তোলনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। কিন্তু পরবর্তীতে বহির্বিশ্বের কয়েকটি দেশের ষড়যন্ত্রমূলক চক্রান্তের কারণে উল্লেখিত কোম্পানি সাফল্যের শেষ প্রান্তে এসে ১৯৫৩ সালে এ গ্যাস খনির নাভিপথে সীসা ঢালাই করে দেয়। এরপর তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বার্মা অয়েল কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার নিজস্ব উদ্যোগে বুদবুদি ছড়া এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশত একর জমিতে প্রাকৃতিক সম্পদ তেল ও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনে পারদর্শী একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়। দীর্ঘ আট মাস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই সংস্থা তাদের রিপোর্টে জানায়, প্রচুর পরিমাণ তেল ও গ্যাসের মজুদ রয়েছে সেখানে। রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার বুদবুদি ছড়ার মাটির গভীরের তরল পদার্থের নমুনা পুনঃপরীক্ষার জন্য ভারতের আসাম রাজ্যে পাঠায়। তারা দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষাশেষে বুদবুদি ছড়ায় প্রচুর পরিমাণ গ্যাস পাওয়ার নিশ্চয়তা দেন।

১৯৯৯ সালের মার্চে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিদেশি তেল গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস ও তেল পাওয়ার চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়।

 

তাছাড়া স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ মিনারেল ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ গ্যাস এন্ড অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের পৃথক বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের আমলে ওই এলাকার খনিজ সম্পদের ওপর অনুসন্ধান চালায়। তারাও সেখানে গ্যাস ও তেল পাওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায়।

এদিকে ২০০৯ সালে বুদবুদি ছড়ার তেল-গ্যাস উত্তোলনের প্রাথমিক জরিপের কাজ পুনরায় শুরু করে বাপেক্স। তাদের বিশেষজ্ঞ দল বুদবুদিছড়ার তেল-গ্যাস প্রাপ্তির আশায় জরিপ কাজ চালালেও পাকিস্তান আমলে ঢালাইকৃত সীসা কুপকে পাশ কাটিয়ে গ্যাস উত্তোলনের কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সরকার। গ্যাসের সংকট নিরসনে বুদবুদি ছড়ার গ্যাস উত্তোলনে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়দের ধারণা, বুদবুদি ছড়ার এ গ্যাস উত্তোলন করা গেলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের গ্যাসের সংকট অনেকটা নিরসন করা সম্ভব হবে।

 

লেখক : নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া

 

 

পূর্বকোণ/জেইউ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট