
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি ফটিকছড়িতে অবাধেই গড়ে তোলা যাবে ইকোট্যুরিজম ব্যবসাসহ ভারী ও মাঝারি শিল্প কারখানা। বর্তমানে ফটিকছড়ির সাথে সারা দেশের এমনকি ভারতের সাথে সড়ক যোগাযোগের যে নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে এতে এ সম্ভাবনাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে বলে অভিজ্ঞজনদের ধারণা। প্রথমে সড়ক যোগাযোগের কথা বলতে গিয়ে ফটিকছড়ি থেকে চারবার নির্বাচিত সাংসদ আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ফটিকছড়ির প্রধান সড়ক চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কটি হাটহাজারী বাস স্ট্যান্ড থেকে ফটিকছড়ির শেষ সীমানা ডলু নয়াবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি ৪শ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৪ফুট প্রশস্ত রাস্তায় উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ি সদর থেকে উত্তরে হেয়াকো পর্যন্ত ৩২কি.মি. সড়কটি ২শ ২৪কোটি টাকা ব্যয়ে টেক বাঁক কেটে ১৪ফুট থেকে ২৪ফুট কার্পেটিং রাস্তায় উন্নীত করা হয়েছে। ফটিকছড়ি সদর থেকে দক্ষিণে রাউজানের গহিরা পর্যন্ত ২৪কি.মি দৈর্ঘ্য সড়কটি ১৮ফুট প্রস্থ সড়কে উন্নীত করা হয়েছে। সেই সাথে এসব রাস্তার ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ কালভার্টগুলো ভেঙে ফেলে নতুন ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তর ফটিকছড়ির নারায়নহাট-থেকে মিরসরাই উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তাটি আরো প্রশস্ত করার কাজ খুব সহসাই শুরু হবে বলে তিনি জানান। এছাড়া উপজেলা সদরের পেলাগাজী দিঘি মোড় থেকে সীতাকুণ্ডের বারৈয়ার ঢালা পর্যন্ত রাস্তাটি বন বিভাগের বাধার কারণে আপতত কাজ বন্ধ হয়ে আছে। দক্ষিণে নাজিরহাট রেল স্টেশন থেকে শুরু হয়ে উত্তরে কাজিরহাট বাজার হয়ে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার সাথে অপর একটি সড়কও সংযুক্ত হয়েছে। উত্তর ফটিকছড়ির করেরহাট-খাগড়াছড়ি সড়কটিও (যেটা ফটিকছড়ির দুটি ইউনিয়ন সংযুক্ত করে গেছে) বর্তমানে প্রশস্তকরণ এবং নতুন করে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলছে।
তিনি বলেন এক কথায় দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলা থেকে যে কোন যানবাহন আর হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম শহর না ঘুরে গহিরার দিয়ে ঢুকে ফটিকছড়ির হেয়াকো দিয়ে মিরসরাই উপজেলার বারৈয়ারহাট দিয়ে বেড়িয়ে ঢাকা চলে যেতে পারবে। এতে পথের দৈর্ঘ্য এবং সময় দুটোই বাঁচবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া ফটিকছড়ির উত্তর সীমান্ত বাগান বাজার থেকে মাত্র ১(এক) কি.মি দূরত্বে নির্মিত হয়েছে রামগড় স্থল বন্দর। এবং এটি ফটিকছড়ির সাথে সরাসরি সড়ক পথে সংযুক্ত আছে। এছাড়া চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত যে রেল লাইন রয়েছে সেটিকে মাত্র ৪০কি.মি. বাড়িয়ে ফটিকছড়ির উপর দিয়ে রামগড় পর্যন্ত নিয়ে গেলে ওপারে ভারতের নির্মিত রেল পথ সাব্রুম সীমান্ত পর্যন্ত রয়েছে। কাজেই এটি খুব কম করছে যুক্ত করা যায়। এতে উভয় দেশের ব্যবসা বাণিজ্য যেমন বাড়বে তেমনি উভয় দেশের পর্যটকের সংখ্যাও বহুগুণে বেড়ে যাবে বলে সচেতন মহলের ধারণা। উক্ত স্থল বন্দর চালু হয়ে গেলে ভারতের লোকজনের এদেশে আসা যাওয়া বহুগুণে বেড়ে যাবে। ফলে অন্যান্য ব্যবসার পাশাপাশি ফটিকছড়িতে ইকো ট্যুরিজমের ব্যাবসা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। উত্তর ফটিকছড়ির হাজারীখীলে অবস্থিত বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য, বড়বিলের ত্রিপুরা পল্লী, হাজারী খীলের পাথরের ছড়া, এশিয়ার বৃহত্তম দাঁতমারা রাবার বাগান, ভুজপুরের হালদা রাবার ড্যাম, হারুয়ালছড়ি রাবার ড্যাম, দাঁতমারা সেল্পী রোড, বাগানবাজার ইউপির দিগন্ত জোড়া রামগড় চা বাগানসহ ফটিকছড়ির বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত চা বাগান গুলোর পাশ ঘেষে ইকোট্যুরিজম ব্যবসা গড়ে তোলা যায়। এর মধ্যে হালদা রাবার ড্যাম, দাঁতমারা সেল্পী রোড, এবং হাজারীখীল অভয়ারণ্যে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম হতে দেখা যায়। এছাড়া ফটিকছড়ি-রামগড় সীমান্তে হালদার উৎসমুখ সহ বিশেষ করে উত্তর ফটিকছড়িতে নিবিড় বনাঞ্চলসহ আরো বহু প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ রয়েছে যেখানে অবাধেইে ইকো ট্যুরিজম ব্যবসা করা যায় বলে সচেতন জনদের ধারণা।
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সহসভাপতি শিল্পপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ির বর্তমান যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ফটিকছড়ির উত্তর পাশে ভারতের সাথে স্থল বন্দর নির্মাণের ফলে ফটিকছড়িতে ইকো ট্যুরিজম ব্যাবসার উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ফটিকছড়ির ছোট খাট খাল, টিলা পাহাড় সব কিছু মিলে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। কাজেই এখানে উন্নত সড়ক যোগাযোগের কারণে ইকোট্যুরিজম ব্যাবসার উজ্জল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, নারায়নহাট থেকে মিরসরাই সদর পর্যন্ত যে রাস্তা রয়েছে এটি আরো প্রশস্ত করলে মিররাইয়ে অবস্থিত শিল্পজোনে বিনিয়োগ করতে আসা দেশি-বিদেশি শিল্প সংশ্লিষ্টরা তাদের আবাসন এবং ইকোট্যুরিজমের জন্য ফটিকছড়িকে উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেচে নিবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এছাড়া তিনি রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা যা ভারতে রপ্তানিযোগ্য সে সব পণ্যের কারখানা উত্তর ফটিকছড়িতে স্থাপন করলে তা অতি সহজেই ভারতে রপ্তানিতে সুবিধা হবে বলে তিনি জানান। তিনি সীতাকুণ্ডের পাহাড়ের এপাড়ে (ফটিকছড়ি প্রান্তে) সীতাকুণ্ড শিল্পাঞ্চলের মত ফটিকছড়িতেও ভারী শিল্পের কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানান। তবে এব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের এদিকে আকৃষ্ট করতে হবে বলে তিনি জানান। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিলে ফটিকছড়ির আপামর জনতার জীবন যাত্রার মান পাল্টে যাবে বলে সচেতন মহলের মন্তব্য।
পূর্বকোণ/এসি