চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

সর্বশেষ:

রামগড় ডাকঘরের ছাদে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়াই

নিজাম উদ্দিন লাভলু, রামগড়

৮ ডিসেম্বর, ২০২২ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত ও পরাজিত হয়ে পাকবাহিনী পালিয়ে যাওয়ার পর ৮ ডিসেম্বর ভারত সীমান্ত লাগোয়া রামগড় প্রধান ডাকঘরের ছাদের উপর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়ানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান আহমেদের নেতৃত্বে সেদিন আমরা উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনায় লাল সবুজের এ পতাকা উত্তোলন করি। ওইদিন শত্রুমুক্ত হওয়ার পর সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরার সাব্রুমের কাঁঠালছড়ি ক্যাম্প থেকে নিজের রক্ষিত পতাকাটি নিয়ে এসেছিলেন সুলতান আহমেদ।

 

৭ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর তিনটি জেট বিমান রামগড়ে দখলদার বাহিনীর অবস্থানের উপর প্রবল বোমা বর্ষণ করে। প্রায় সাত মিনিট বোমা হামলা শেষে বিমান তিনটি ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে আক্রমণ চালায় পাক হানাদারদের উপর। ভীতসন্ত্রস্ত পাকবাহিনীর সৈন্যরা ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে পিছু হটতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত শত্রুরা নিজের প্রাণ বাঁচাতে সদলবলে রামগড় থেকে পালাতে শুরু করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ ইতিহাস বর্ণনা করেন রামগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কালাম।

 

তিনি বলেন, ‘২ মে রামগড় পতনের পর দীর্ঘ ৭ মাস ৬দিন পাকবাহিনীর দখলে থাকার পর ৮ ডিসেম্বর শত্রুরা অন্যত্র পালিয়ে যায়। এরপর ইলিয়াছ মিয়াসহ কয়েকজন স্থানীয় মানুষ ভারত সীমান্তবর্তী ফেনী নদী ঘেঁষা রামগড় থানা ঘাটে এসে জয় বাংলা স্লোগান দিতে থাকেন। সাব্রুম থানার ওসি মি. চক্রবর্তী ওই লোকদের সাথে কথা বলে পাকসেনারা পালিয়ে যাওয়ার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর মিত্রবাহিনীর কয়েকজন সদস্যসহ আমরা ২০-২৫জন মুক্তিযোদ্ধা ফেনী নদী পার হয়ে রামগড়ে এসে দেখি সত্যি সত্যিই শত্রুরা পালিয়ে গেছে। এসময় সবাই বিজয়োল্লাসে ফেটে পড়ি।’

 

তিনি বলেন, রামগড় পতনের পর ত্রিপুরায় আশ্রয় নিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলাম। আসামের লোহারবন নামক ট্রেনিং সেন্টারে টানা এক মাস যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষ করে সাব্রুমের হরিণায় ফেরার পর গ্রুপ কমান্ডার হেমদারঞ্জন ত্রিপুরার নেতৃত্বে (বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার) বিভিন্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে অসংখ্যবার সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি।

 

অনেক যুদ্ধের মধ্যে এখনও যে যুদ্ধের কথা মনে পড়ে তার বর্ণনা করতে গিয়ে এ বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘নভেম্বরের শেষ দিকে গ্রুপ কমান্ডার হেমদারঞ্জন ত্রিপুরার নেতৃত্বে আমরা ২০-২৫জন মুক্তিযোদ্ধা বৈষ্ণবপুর সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে ফেনী নদী পার হয়ে রামগড়ে প্রবেশ করি। সারারাত পায়ে হেঁটে ছড়া-খাল বনজঙ্গল পাড়ি দিয়ে মানিকছড়ির যোগ্যছলা ও সেম্প্রুপাড়া নামক স্থানে পৌঁছে কোন রকমে রাত কাটাই। পরদিন ভোরে পাকসেনারা তাদের অবস্থানের দিকে আসছে। এমন খবর পাওয়া মাত্রই সবাই পজিশন নিই। সকাল ৯টার দিকে ২০০-৩০০ জনের শত্রুদল আমাদের নিশানার মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই তাদের লক্ষ্য করে শুরু করি গুলি ও হ্যান্ড গ্রেনেড দিয়ে আক্রমণ।

 

পূর্বকোণ/আর

 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট