চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

ছবি: শরীফ চৌধুরী

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য

মোহাম্মদ ইলিয়াছ

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ | ১২:৪৪ অপরাহ্ণ

লোহাগাড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য দক্ষিণ-পূর্ব উপমহাদেশীয় জীববৈচিত্র্যের বিশাল সমৃদ্ধ বনাঞ্চল নিয়ে গঠিত এবং এশিয়ান হাতি প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এটি প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি। ২০১২ সালে এ অভয়ারণ্য জাতিসংঘের ইকুয়েটর পুরস্কার লাভ করে। অভয়ারণ্যের উল্লেখযোগ্য প্রাণী এশিয়ান হাতি ছাড়া বন্য শুকর, বানর, হনুমান, মায়া হরিণ, সাম্বারসহ ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, সাত প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৩ প্রজাতির পাখি। এছাড়া ১০৭ প্রজাতির সুসজ্জিত বৃক্ষরাজির সমন্বয়ে গঠিত চিত্রহরিৎ বিশাল বনভূমি। তবে একটি প্রবেশ পথের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে অভয়ারণ্যে ৪৬৮ প্রজাতির বন্যপ্রাাণী ও ৬৯১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। বৃক্ষের সৌন্দর্যে সমন্বয়,  উঁচু-নিচু পাহাড়ে সৃজিত বাগান আর বাগানে পাখিদের মিষ্টি সুরে মুখরিত অভয়ারণ্যটি। এটি হতে পারে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র ও প্রকৃতি গবেষণাগার। যা থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।

 

সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ বনাঞ্চল ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী শিকার, গাছ নিধন, কৃষি কাজ অভয়ারণ্যের প্রধান সমস্যা।

 

১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়াসহ ৭টি সংরক্ষতি বনভূমি নিয়ে অভয়ারণ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বনাঞ্চল সুরক্ষা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন, শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২০০৩ সালে এলাকায় চুনতি ও জলদী রেঞ্জের অধীনে ৭টি বিট অফিস স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করার জন্য অভয়ারণ্য এলাকায় বনপুকুর, প্রাকৃতিক গর্জন বনাঞ্চল, এশীয় বন্যহাতির অবাধে বিচরণ, গয়ালমারা প্রাকৃতিক হ্রদ, বনপুকুর ফুটট্রেইল, জাঙ্গালীয়া ফুটট্রেইল, পর্যটন টাওয়ার, গোলঘর, স্টুডেন্ট ডরমিটরি, নেচার কনজারভেশন সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্র, ইকোকর্টেজসহ বিভিন্ন প্রতিবেশ পর্যটন বা ইকোট্যুরিজম স্থাপন করা হয়।  পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের মাধ্যমে সহজে অভয়ারণ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যসহ এশিয়ান হাতি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর এবং পাখির অবাধ বিচরণ উপভোগ করা যায়। এত কিছু থাকার পরও অভয়ারণ্যটি এখনো পর্যটন কেন্দ্রের আওতায় আনা হয়নি। শুধু প্রয়োজন পর্যটন অবকাঠামো।

 

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতিস্থ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে অভয়ারণ্যের অবস্থান। অভয়ারণ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য ২০০৫ সালে গঠন করা হয় সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি। বিশ^নন্দিত টেলিভিশন সিএনএন চুনতিতে পরিদর্শনে এসে উক্ত কমিটির কার্যক্রম দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ফলে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ২০১২ সালে জাতিসংঘের ইকুয়েটর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ২০১২ সালের ২০ জুন ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে জাতিসংঘ,  ইউএনডিপির প্রধান ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে পুরস্কার প্রদান করা হয়। চুনতি কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটির সহ-সভাপতি আলহাজ আনোয়ার কামাল ইউএনডিপির প্রধান ও মহাসচিবের কাছ থেকে ইকুয়েটর পুরস্কার গ্রহণ করেন।

 

অভয়ারণ্যের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান, চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য জীবববৈচিত্র্যের অপূর্ব নির্দশন ও এশিয়ান হাতির প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র। প্রজননের সময় হলে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও নেপালসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হাতিরা এখানে চলে আসে। এটিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রসহ ইকোপার্কে পরিণত করার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। ইকোট্যুরিজমের কিছু বিশেষ আকর্ষণ, বিশেষ করে পর্যটন অবকাঠামো তৈরি করলে এটি দেশের অন্যতম ইকোপার্কে পরিণত হবে। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

 

চুনতি অভয়ারণ্যটি দক্ষিণ-পূর্ব উপমহাদেশের জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধ একটি চিরহরিৎ বনাঞ্চল। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এটিকে সহজেই দেশের সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা যাবে। আধুনিক পর্যটনের সুবিধায় নিয়ে আসতে পারলে প্রকৃতি গবেষণাগারের সুবিধাসহ সরকারের প্রচুর রাজস্ব আয় হবে।

 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, আলহাজ মোস্তফিজুর রহমান কলেজ, লোহাগাড়া

পূর্বকোণ/পিআর 

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট