চট্টগ্রাম শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪

ট্যুরিজমে দক্ষ পেশাজীবীর চাহিদা বিশ্বজুড়ে

অনলাইন ডেস্ক

২৪ অক্টোবর, ২০২২ | ৮:৩৫ অপরাহ্ণ

প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ, দর্শনীয় বা ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, চিকিৎসা কিংবা কাজের প্রয়োজন—ভ্রমণের কারণ এগুলোর মধ্যে যেটাই হোক না কেন, সবই ট্যুরিজম বা পর্যটন শিল্পের অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বের একক বৃহৎ শিল্প হলো পর্যটন। আর এ রকম ব্যাপ্তি নিয়ে যে খাত, সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগও যে বেশি হবে তা অবধারিতই। ভ্রমণ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে গন্তব্যের পরিবহন, আবাসন, কেনাকাটার মতো পর্যটকদের জন্য কাঙ্ক্ষিত সব সেবাই পর্যটন খাতের সঙ্গে যুক্ত।

বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে পর্যটন খাত। এর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্স, মিসর, গ্রিস, লেবানন, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। এছাড়া ফিলিপাইন, মরিশাস, মালদ্বীপ, বাহামা, সেশেলস ও ফিজির মতো দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও পর্যটন খাত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এসব দেশে পর্যটন খাত ব্যাপকভাবে বিকশিত। খাতের ব্যাপ্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষ জনশক্তির চাহিদাও নিয়মিত হারেই বাড়ছে দেশগুলোয়।

 

ট্যুরিজমকে বলা হয়ে থাকে বিশ্ব অর্থনীতির চাবিকাঠি। এটি অনেকগুলো শিল্প খাতের সমন্বিত একটি শিল্প হিসেবেও পরিচিত। কারণ ১০৯টি খাত প্রত্যক্ষভাবে পর্যটন শিল্পে যুক্ত। সুলভ আবাসন সুবিধা থেকে শুরু করে পাঁচ তারকা হোটেল, ট্যাক্সিক্যাব থেকে উড়োজাহাজ, চিত্তবিনোদন পার্ক থেকে থিয়েটার—এর সবই পর্যটন সেবা খাতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরো ১ হাজার ১০০টি খাত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি আড়াই সেকেন্ডে পর্যটন খাতে একটি করে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। একজন পর্যটকের বিপরীতে ১০টি প্রত্যক্ষ ও ৩৫টি পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়। সারা বিশ্বে ৩৩ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ সরাসরি এ শিল্পে নিযুক্ত রয়েছে। কর্মসংস্থান রয়েছে এমন প্রতি ১১ জনের মধ্যে একজন এ খাতে কর্মরত।

ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের তথ্যমতে, নতুন কর্মসংস্থানের চারটির মধ্যে একটি আসছে পর্যটন খাত থেকে। বৈশ্বিক জিডিপির ১০ দশমিক ৩ শতাংশ পর্যটন খাতের। দক্ষিণ এশিয়ার জিডিপিতে পর্যটন শিল্পের অবদান ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটিতে।

 

পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশের গন্তব্য হবে এশিয়ার দেশগুলো। এর একটি অংশ আসবে বাংলাদেশে। তাই দেশের পর্যটন খাতে তৈরি হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। ট্যুর গাইড, লোকাল ট্রান্সপোর্টেশন, টিকিটিং এক্সিকিউটিভ, হোটেল বুকিং, ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা করা, রেস্টুরেন্ট বা হোটেলে খাবার ব্যবস্থা করা, হোটেলে অবস্থানকালীন বিজনেস মিটিং ব্যবস্থাপনাসহ আরো অনেক কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

পর্যটন বাংলাদেশেও বিকাশমান একটি খাত। উল্লেখযোগ্য বেশকিছু পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে দেশে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এসব স্থান। এর বাইরে ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অবকাশযাপন কেন্দ্র। স্থানীয় পর্যটকরাই মূলত অবসর সময় কাটাতে যাচ্ছেন এসব পার্ক ও রিসোর্টে।

 

খাতসংশ্লিষ্টদের তথ্য বলছে, দেশে নিবন্ধিত ৭৩২টি ট্যুর অপারেটর আর ৪৪টি তারকা হোটেলসহ সারা দেশে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন পাঁচ তারকা হোটেল। এগুলোয় পর্যটকদের খাবার ও থাকার সুবিধা যেমন থাকছে, তেমনি রয়েছে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বিভিন্ন কনফারেন্স আয়োজনের ব্যবস্থা।

পাঁচ তারকা হোটেলগুলোয় রয়েছে কনফারেন্স রুম, বলরুম, কফিশপ, কনফেকশনারি, সুইমিং পুল, গলফ কোর্স, টেনিস কোর্ট, ডিসকো, স্পা। কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে এসব হোটেলে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্ট, পাবলিক রিলেশন, হাউজ কিপিং, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট। আর এসব ক্ষেত্রে চাহিদা রয়েছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট গ্র্যাজুয়েটদের।

 

মূলত শিল্প বিপ্লব-পরবর্তী সময় জোরালো হয়ে ওঠে পর্যটন ও আতিথেয়তা ব্যবস্থাপনার আধুনিক ধারণা। একাডেমিকভাবে ব্যাচেলর অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট একটি স্বতন্ত্র ডিসিপ্লিন হিসেবে চালু হয় ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝিতে। বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর অন্যতম হলো পর্যটন। দেশে-বিদেশে পর্যটকদের ক্রমবর্ধমান চাপ সামলাতে যোগ্য মানবসম্পদের অভাব রয়েছে। সরকারি-বেসরকারিভাবে লাভজনক এ খাতে দক্ষ পেশাজীবীর চাহিদা বিশ্বব্যাপীই বাড়ছে।

একবিংশ শতাব্দীজুড়ে পর্যটন শিল্পের পরিসর আরো বিস্তৃত হবে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক বলয়েও রয়েছে পর্যটনের প্রভাব। স্থানীয় ও পরিযায়ী পর্যটক—উভয়ের জীবনধারা এবং সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে পর্যটন। এটি স্থানীয় পণ্য ও তার বাণিজ্যিকীকরণেও ভূমিকা রাখে। স্থানীয় ঐতিহ্য, রীতিনীতি, সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক জীবন, হস্তশিল্প, শিল্পী, স্থানীয় স্থাপত্যের পুনরুজ্জীবন ও সংরক্ষণে সরাসরি অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে এ খাতের পেশাজীবীদের। অর্থনীতির চাকা গতিশীল করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার পাশাপাশি ভূমিকা রাখা যায় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষক হিসেবেও।

 

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের গ্র্যাজুয়েট সারা বিশ্বে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটন খাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে দক্ষ ও চৌকস জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যেই সাজানো হয় এ বিষয়ের পাঠ্যক্রম। দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণসহ একাডেমিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা নিতে পারেন তারা। হোটেল ব্যবসা, ট্রাভেল এজেন্সি, পাঁচ তারকা হোটেল, এয়ারলাইনস, ভ্রমণ উদ্যোক্তা, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল কনসালট্যান্ট, কনফারেন্স ও ইভেন্ট ম্যানেজার, হোটেল রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বব্যাপী ক্যারিয়ারের সুযোগ রয়েছে।

দেশে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি নেয়ার অবারিত সুযোগ আছে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকেও এ বিষয়ে পেশাগত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ভ্রমণ ও পেশাকে একসঙ্গে বেছে নিতে চাইলে ট্যুরিজম হতে পারে পছন্দের তালিকার অন্যতম। তথ্যসূত্র: বণিক বার্তা

 

পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট